পলাশডাঙার জমিদারবাড়ির রহস্য - সম্পূর্ণ সচিত্র সংস্করণ

 


পলাশডাঙার জমিদারবাড়ির রহস্য

সম্পূর্ণ নভেলা সংস্করণ

কপিরাইট - সমীরণ সামন্ত 

( গল্পটি কপি সম্পূর্ণ নিষেধ। কোন ভাবে ধরা পড়লে আইনসম্মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে )




মেয়েটির বয়স বছর বারো, ঠিক যেমনটা ভেবেছিলাম আমি
ওর বাবার মুখের বর্ণনা আর এখন সামনাসামনি দেখা প্রায় মিলে গিয়েছে আমি বসেছিলাম রুমের মাঝে সোফায়, টেবিলের সামনে মেয়েটি আমার পাশের সোফায় এসে বসল চিকন শরীর, গায়ের রঙ দুধে আলতার ওপরে, পটল চেরা চোখ, তার নিচে কালিমা, অর্থাৎ রাতের ঘুম স্বাভাবিক নয় ভদ্রসেন বাবু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আমাদের দুজন কে একা রেখে

তোমার নাম কি গো ? “
আমার নাম, অহল্যা
আপনার নাম কি ? “, মিষ্টি গলায় মেয়েটি উত্তরের সাথে প্রশ্ন যোগ করল, যেটা আমি ভেবেছিলাম হতে পারে কারন ওর চোখের চাহনি দুর্বল হলেও এক প্রকার তেজ রয়েছে, যেটা ভেতরের সুপ্ত আগুনের অস্তিত্ব জানান দেয়
আমার নাম,
দাক্ষায়ণী
বাহ, বেশ সুন্দর নাম আপনার
আপনি এখানে কেন এসেছেন ? “
মুচকি হেসে বললাম, “ আসলে আমি একজন লেখিকা
বহু পুরনো বাড়ি নিয়ে এখন আমার লেখা চলছে খোঁজ পেলাম তোমাদের এই বাড়িটা প্রায় একশো বছরের বেশি পুরানো, তাই চলে এলাম
বাড়ির তথ্য জানতে হলে বাবাই তো আপনাকে বলে দিতে পারবে, আমি তো কিছুই জানি না
তাহলে আমাকে ডাকলেন যে “, শান্ত ভাবেই তীর ছুরতে লাগল ছোট্ট মেয়েটি, যেটা আর যাইহোক আমার কাছে সেটা কোন ব্যাপার নয়
একটা বাড়ি কি শুধু বাড়ি ? সেখানের মানুষজন, গাছপালা, সব কিছুই তার মধ্যে পড়ে
এই বাড়ির সব মানুষগুলর সাথে কথা না বললে যে আমি আমার তথ্য সম্পূর্ণ করতে পারব না সেই জন্যই স্থির করেছি কিছু দিন থেকে থেকে আমার কাজটা শেষ করে বিদায় নেব
কথা বাড়াল না আর অহল্যা


এত বড় বিশাল বাড়ি তোমাদের
চারিদিকটা পুরো ঘুরে দেখেছ তুমি ? “
হ্যা দেখেছি
তবে আমি নিজের ঘরে থাকতেই বেশি পছন্দ করি
নিজের ঘরেই তাহলে সারাদিন সময় কাটাও, তাই তো ?”
হ্যাঁ, বেশিরভাগ সময় তাই
মাঝে মধ্যে ওর সাথে গল্প করি
তুমি গল্প করতে ভালবাসো, বাহ ! আমিও গল্প করতে ভালবাসি
আমাদের দুজনের কিন্তু ভালই জমবে তাহলে

আমি চেষ্টা করছিলাম মেয়েটাকে ক্লোজে যতটা সম্ভব আনার
একটু যদি ওর বিপক্ষে কথা বলি, তাহলে অহল্যা হয়ত গুটিয়ে যাবে অথবা আক্রমণাত্মক হয়ে যেতে পারে ওর হাসি মুখটা আপাতত মুখোশ তাই যে প্রশ্নটা করা উচিৎ সেই মুহূর্তে সেটা এড়িয়ে গেলাম
সত্যি একটা কথা বলি, তোমার নামটা যেমন সুন্দর। তুমিও তেমন সুন্দর। অহল্যা মানে ‘পবিত্র’।
“ আমি কিন্তু আপনার নামের মানেটাও জানি। “
“ বাহ, কি বলো তো ? “
“ নাহ বলব না। “, কথা কেটে চুপ করে রইল। তখন আমার মনে হোল, আমাকেই শুরু করতে হবে, তবে একটু অন্য ভাবে।
তুমি নাচতে জানো ? আমি না খুব নাচতে পছন্দ করি পায়ে মল পড়ে

কোন উত্তর পেলাম না দেখে মনে হোল মেয়েটি খুব মুডি।

তুমি গল্পের বই পড়তে ভালবাস ? “
হ্যাঁ

আচ্ছা, শেষ কোন বই পড়েছ তুমি ? “
“ যেটা পড়েছি, সেটা আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই। “

কোন ভুল প্রশ্ন করে ফেললাম মনে হল আমার
তাহলে অহল্যার গলা আক্রোশের স্বর কীজন্যে। বুঝতে পারলাম ও কিছু একটা বলতে চাইছে না তাই আমি আবারও কথা ঘুরিয়ে দিলাম, বিনা সময় ব্যায়ে
তোমাকে কে বেশি ভালবাসে, বাবা না মা ?
আমার বাবা

আর মা ? “
আমার মা মারা গেছে

কথাটা ঠিক যতটা স্পষ্ট করে বলল, ততটাই খারাপ লাগলো আমার। এর আসল অর্থ বুঝতে একটু সময় লেগেছিল।
“ বাবা ছাড়া আর কাউকে তুমি ভালোবাসো ? “

রক্তচক্ষু বলে একটা শব্দ আমার ডিকশনারি তে আছে। কিন্তু সেটা চাক্ষুষ পেলাম চোখের সামনে। অহল্যা মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে গেছে। গলার স্বর নরম থেকে উচ্চ, তির্যক পর্যায়ে। বসে থাকতে থাকতে উঠে পড়ে গম্ভীর কণ্ঠে আমাকে বলল, “ আপনার কি আর কিছু জানার আছে ? ভবিষ্যতে আমার সাথে আর কথা বলার চেষ্টা করবেন না। যা দরকার বাবার সাথে কথা বলে নেবেন।“ , এই বলে সেদিকে হাতে হাতে চলে গেল, ঠিক যেদিক থেকে এসেছিল। বুঝতে পারলাম, মোক্ষম জায়গায় আঘাত করে ফেলেছি।

অহল্যা চলে যাওয়ার সাথে সাথে ঘরে ঢুকল, দুজন। প্রথমজন অহল্যার বাবা, ভদ্রসেন আর দ্বিতীয় জন অহল্যার বোন, শিঞ্জিনী।






আমি, দাক্ষায়ণী। কলকাতার মানিকতলায় বাড়ি, নিজস্ব, দুইতলা। মা কে নিয়ে থাকি ওপর তলায়, বাবা অনেক আগেই পরলোকে গিয়েছেন। গ্রাজুয়েসন কমপ্লিট করলাম সাইকোলজিতে। মাস্টার্স করতে করতে ঘরে প্রাকটিস করতে থাকলাম, এই বিষয়টা নিয়ে। ব্যাপারটার মধ্যে আমার প্রচণ্ড ভাললাগা কাজ করে, তাই সেটাই নিজের প্যাশন করে রাখতে ইচ্ছে হল। আমার মা ও তাতে সম্মতি দেয়। গোয়েন্দা হওয়ার ইচ্ছে আর মনস্তত্ত, এই দুটোকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে সাইকোলজিক্যাল ইনভেস্তিগেটর নাম দিলাম। সাধারন পুলিশ যেটা চোখে দেখতে পেলেও তার ভেতরের খবরটা দেখতে পায় না, সেই জায়গা দেখার দৃষ্টি আছে আমার।
নিচ তলাটা চেম্বার করে ফেললাম। বছর খানেক ছোটখাটো কয়েকটি কেস সল্ভ করার পর নিজের প্রতি বিশ্বাস এসে গিয়েছে।
আজ থেকে দিন চারেক আগের কথা। ভদ্রসেন নামক এক ব্যাক্তির ফোন এলো। বেশিরভাগ ফোন আসে পত্রিকায় থাকা আমার বিজ্ঞাপন দেখে। কিন্তু এই ব্যাক্তি ফোন করেন আমার এক পুরনো ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে। ভদ্রসেন বাবুর সম্পূর্ণ বক্তব্য শুনলাম, এবং মনে হল, এতদিনে এমন একটা কেসই খুজছিলাম আমি।

“ আপনার অনেকনাম শুনেছি, আমার বন্ধুসম সদানন্দ এর কাছ থেকে। ম্যাদাম, যদি কিছু না মনে করেন, আমাদের এই গণ্ডগ্রামে আসবেন, দিন খানেক এর জন্যে। কথা দিচ্ছি, আপনার কোন অসুবিধে হবে না, উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাবেন। আপনি শুধু আমার মেয়েটা কে বাঁচান। ”

ফোনের শুরুতেই এমন কথা আমি শুনিনি আজ পর্যন্ত। ডাইরেক্ট পেপার থেকে ফোন করে এমন আবদার করলে আমি সেটা মেনে নিতাম না। কিন্তু এক্ষেত্রে রেফারেন্স একটা বিরাট ম্যাটার করে। মনে হচ্ছে ব্যাপারটা অতিমাত্রায় সিরিয়াস কিছু। ভদ্রলোকের কাছ থেকে শুনলাম ওনার বাকি কথাগুলো।

“ আমাদের পুরাতন বাড়ি, প্রায় একশো বছর আগেকার
সারা গ্রামে এমনকি পাশেও, এই বাড়ির একটা নাম ছড়িয়ে রয়েছে, পলাশডাঙ্গার জমিদারবাড়ি। কারন আমার ঠাকুরদার সময় পর্যন্ত গ্রামে জমিদার প্রথা চলতো। বলতে গেলে উনি ছিলেন আমাদের গ্রামের স্বাধীন শেষ জমিদার, অধিরাজ সোম। যেমন তেমন জমিদার নন, বিলাসবহুল, অর্থপিশাচ, অহংকারী, অত্যাচারী সব সর্বনাম ওনার সাথে চলে। জমির খাজনার হিসেব করতেন নিজের হাতে। খাজনা মকুব শব্দটি ওনার আওতার বাইরে। যেন তেন প্রকারে সেটা দিতেই হবে সকল গ্রামবাসিদের। ঝর বৃষ্টি বন্যা, এসব অজুহাত। সেই সময় গ্রামবাসীরা খুব সমস্যায় পড়েযে মাসে ক্ষেত খামার থেকে পর্যাপ্ত খাজনা জোগার করা যেত না, পাশের গ্রাম থেকে ধার করে গ্রামবাসীরা এই গ্রামের জমিদার কে ভুক্তান করত। আর যারা খাজনা দিতে পারত না, তাদের হত চরম শাস্তি। সেই শাস্তির প্রথাও খুব নৃশংস। পরিবারের সেই পুরুষ কে নিয়ে আসা হত বাইজী ঘরের পাশের দালানে। চাবুক চলত তার ওপর, যতক্ষণ প্রান আছে। আর তার স্ত্রীলোক কে নিয়ে আসা হত বাইজী ঘরেড় মধ্যেরতিক্রিয়াতে মত্ত থাকতো জমিদার অধিরাজ সোম নিজে। একদিকে নিজের স্বামীর চিৎকার, অপর দিকে নিজের গোপনাঙ্গে পুরুষদণ্ডের অযাচিত আঘাত। আস্তে আস্তে সহ্যসীমা পেরিয়ে গেলেই, সেই স্ত্রীলোকটি প্রানত্যাগ করত। “


কথাগুলো শুনছিলাম, আতঙ্কের গল্পের মত। শুনতে যতটা বেগ পেতে হয়েছিল, মানসচক্ষে সেটা ভেবে আরই গা শিরশিরে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এটাতো একটা পরিবারের কালো ইতিহাস
আমায় শুনিয়ে ওনার কি লাভ।
“ এই ব্যাপারে আমি আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি ? আর তাছারা ফোনে এত কথা বলা তো সম্ভব নয়। আপনি এক কাজ করুন, কাল একবার আমার বাড়ি আসুন। “
কথাটা উনি শেষ করতে না দিয়ে বললেন,” ম্যাডাম, আমি জানি আপনি একটু বিরক্ত হচ্ছেন। আমার কথাটা একটু শুনুন প্লিজ

গত পরশুর ঘটনা রাত্রি বেলা তখন, বারোটা বাজে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ শব্দ পেলাম বাইরে থেকে, নুপুরের ঝংকার এদিক থেকে ওদিকে বারান্দা দিয়ে ভেসে গেল আওায়াজটা মনে হোল কেউই দৌড়ে গেছে এখুনি মাত্র কৌতূহল বশত বাইরে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে কিছু দেখা যায় না তাই কি মনে হোল, ছাদে চলে গেলাম জমিদার বাড়ির একপাশে রয়েছে বাইজি মহল, ছাদ থেকে স্পষ্ট দেখা যায় পূর্ণিমা গিয়েছে তার আগের দিন, তাই আলো আছে আকাশে তখনই চোখে পড়ল এক অদ্ভুত দৃশ্য একটি মেয়ে, ওই বাইজি ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে সেই নুপুরের আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে
মেয়েটি দরজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় একবার এদিকে তাকিয়েছিল, কেউই দেখছে কিনা আমি আড়াল হয়ে গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু যেটা দেখলাম সেটা ভাবতে পারিনি কখনই আমার মেয়ে অহল্যাওর চোখে কিসের একটা নেশা, জানিনা আমি জানিনা। মুহূর্তেই ভেতরে ঢুকে গেল

এক মিনিট মত কেটে গিয়েছে আমি ছটফট করছি ছাদে দাড়িয়ে কারন অকারন কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কি ওখানে যাওয়া ঠিক হবে, সেটা নিয়েই চিন্তা করছি ঠিক পর মুহূর্তেই একটা আওয়াজ পেলাম, একটা চিৎকার, কানফাটানো চিৎকার একজন পুরুষমানুষের, ঠিক যেন শেষ আর্তনাদ আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি আর দৌড়ে ওদিকে গেলাম, চিৎকার টা যেদিক থেকে এসেছে লক্ষ্য করে, নিচে নেমে বাইজি ঘরের দিকে। ঘরের ভেতর খুলে দেখলাম কিছুই নেইনা, অহল্যা কেও পাচ্ছি না
পেছনের দিকের দরজার কাছে এমনি গেলাম কৌতূহলবশত।
সর্বনাশ ! একটি দেহ পড়ে রয়েছে ওখানে, সম্ভবত প্রাণহীন।

শিটিয়ে গেলাম এই দৃশ্য দেখে
আমাদের বাড়ির কাজের ছেলেটা না ? মরে পড়ে রয়েছে ওখানে, পিঠে ছাল ছাড়ানো চাবুকের দাগ
গলার নলি কাটা রক্ত রক্ত রক্ত, চারিদিকে। পিছল খাওয়া রক্ত। “

শব্দটা আবার কানে গেল। আবার নুপুরের আওয়াজ। খুব কাছ থেকেই সেটা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে এই আওয়াজ টা ? সামনের দরজা খুলে দেখার সময় দেয়নি, ভ্যানিশ। কেউই কোথাও নেই, আওয়াজ টাও মিলিয়ে গিয়েছে।

ভদ্রসেনের বক্তব্য খুব স্পষ্ট, জমিদার অধিরাজ সোম ফিরেছে অশরীরী হয়ে তার মেয়ের মধ্যে দিয়ে। তাই তার মেয়েকে বাচাতে হবে
সে চায় না এমন কোন কিছু হোক, যার কারনে তাদের জমিদার বাড়ির সুনাম নষ্ট হয়। আর যদি জমিদার অধিরাজ সত্যি ফিরে আসে, আবার কি সেই নারকীয় হত্যালীলা শুরু হতে চলেছে ?

বেশি দেরি করা ঠিক হবে না। মা কে বলে দিন কয়েকের প্যাকিং করে বেরিয়ে পড়লাম পলাশডাঙার জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
শিয়ালদা থেকে ভোর চারটে উনপঞ্চাশ এর ট্রেন। ভদ্রসেন শেষ কথাগুলো চলন্ত ট্রেনে বসে বসে ভাবছিলাম।

মেয়ে অহল্যা, ঘর থেকে বেরোতে চায় না। ভেতর থেকে খিল দিয়ে রাখে। জানলায় আড়ি পাতলে শোনা যায় কারোর সাথে কথা বলছে। কিন্তু ঘরে কোন দ্বিতীয় ব্যাক্তি থাকে না এটুকু ভদ্রসেন মহাশয় হলফ করে বলতে পারেন

এদিকে জমিদার অধিরাজ সোম নামটাই একটা সময়ে যথেষ্ট ছিল পুরো গ্রাম কে চমকে রাখার জন্যে। তার কুকীর্তির কথা সব্বাই জানত। এই সব কাহিনি, সেই সময়ে লিখে রাখা হয় একটি ডাইরি তে। সেই কাজটি সম্পন্ন করেন, ভদ্রসেন এর বাবা। মারা যাওয়ার সময় সেই ডাইরি নিজের ছেলেকে অর্থাৎ ভদ্রসেন কে সপে যান
পরিবারের কলঙ্ক যেন কোন ভাবেই বাইরে না যায়, আগাম সতর্ক করেন উনি ভবিস্যতের কথা মাথায় রেখে। কিন্তু গত এক মাস ধরে সেই ডাইরিটি মিসিং।






পলাশডাঙ্গা তে আসার পর জমিদার বাড়ীতে আসতে সমস্যা হয়নি, গাড়ি আগে থেকে পাঠানই ছিল। সকাল নয়টায় ট্রেন থেকে নেমে গন্তব্যে আসতে পাক্কা পয়তাল্লিশ মিনিট
আসা মাত্রই ভদ্রসেন বাবুর আপ্যায়ন। বাইরে দাড়িয়ে ছিলেন ভদ্রলোকটি। সঙ্গে ছিলেন সধবা আরও একজন। পরিচয়ে জানা গেল, ইনি ভদ্রবাবুর স্ত্রী, নিক্কন
নামটা বেশ অদ্ভুত, এই প্রথম শুনলাম। বাংলা অভিধানে খুজে দেখতে হবে এর মানেটা। এদিকে আর একটা ব্যাপার চোখে পড়ছে। ভদ্রবাবুর বয়েস অনুযায়ী এই মহিলার বয়েস যথেষ্টই কম। আন্দাজ পঁচিশ থেকে ছাব্বিশ। গায়ের রঙ ফর্সা, কপালে চকচকে ভুরু, বেশ সুন্দর লাগছে দেখতে সেই জন্যে। পরনে মেরুন ব্লাউজ, ফুল ফুল করা হাতা, গাঁঢ় কলাপাতা রঙের শাড়ি, ঘোমটা দেওয়া। নিক্কন দেবী অতিথি আপ্যায়নে স্বামীর সাথে প্রচণ্ড ভাবে একমত। ভদ্রসেন বাবুকেও দেখলাম উনি নিজের স্ত্রী কে চোখের আয়ত্তেই রাখেন। হতেই হবে কারন এটা যে দ্বিতীয় পক্ষ, খুব যদি ভুল না করি।

জলখাবারের ব্যাবস্থা করাই ছিল আগে থেকে। মিনিট কুড়ি সেদিকে সময় কেটে যাওয়ার পর, আমি ভদ্রসেন কে বললাম ঠিক যেই কারনে আসা, যার জন্যে এতটা দূরে এই প্রথম এসেছি, তাকে আমার কাছে পাঠানো হোক।
অহল্যার সাথে কথা হল বড় জোর মিনিট সাতেক। এর মধ্যেই ওকে যতটা পর্যবেক্ষণ করার, চেষ্টা করলাম মাত্র। মেয়েটি খুব কথা বলতে ভালবাসে, তবে নিজের সিক্রেট কে লুকিয়ে রাখতে বেশি পছন্দ করে। ভুল করেই হোক, কোন ভাবে যদি লুকিয়ে রাখা কথা গুলো প্রকাশ হয়ে যায়, অহল্যা নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। সেই মুহূর্তে কেউই যদি সেটা নিয়ে ঘাটতে চেষ্টা করে, সেই পড়ে যাবে অহল্যার রোষে। আমার মনে হয়, অহল্যা যেটা লুকিয়ে রাখতে চায়, সেটা ওপেন সিক্রেট এর মত। সবাই জানে, কেউই অহল্যার সাথে ফেস করতে চায় না মুখোমুখি।

বড় মেয়ে চলে গেল। রুমে এলেন ভদ্রসেন বাবু। ছোট মেয়ে শিঞ্জিনীর সাথে এটাই প্রথম আলাপ। ভদ্রলোক ফোনে নিজের মেয়ের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখানে এসে জানলাম আর একটি মেয়ে রয়েছে। নিজের ছোট মেয়ের কথা বলেননি কেন ?
ওনার যুবতী স্ত্রী, নিক্কন কে দেখেও বেশ খটকা লাগলো আমার। প্রথম পক্ষের দুজন সন্তান থাকা সত্তেও উনি কেন দ্বিতীয় বিয়ে করলেন ? ওনার নিজের বয়স তো হয়েছে, তাছাড়া ওনার মেয়েরা যথেষ্টই বড়। এবার প্রশ্ন হোল কত বছর আগে বিয়েটা হয়েছে ? থাক, সেটা আপাতত দরকার ছাড়া ভাববো না



“ আমার দিদি কে কেমন দেখলেন ? “
“ আপনার দিদি অহল্যা তো ভালই আছে। ওর কিছুইও হয়নি। আমাকে শুধু আর একটু কথা বলতে হবে ওর সাথে। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। “
ভদ্রসেন বাবু শিঞ্জিনীর সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর ওই প্রথম কথা বলতে শুরু করল। দেখে বোঝা গেল, নিজের দিদি কে নিয়ে খুব ভাল ভাবেই চিন্তিত। 
“ তুমি কি ডাইরির ব্যাপারে কিছু জানো ?”, প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম শিঞ্জিনীর দিকে, হয়তো সেটা আমার উচিৎ হয়নি।
“ ডাইরি ? কোন ডাইরি ? “

ভদ্রসেন বাবু বললেন,  “ না, শিঞ্জিনী এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। আসলে ওকে এসব নিয়ে জানাতেও চাই না। ওর সামনে পরীক্ষা। এইসব কিছু ওর মাথায় ঢুকলে পরীক্ষা উছন্নে যাবে। “
“ বাবা, তুমিও কি আমায় কিছু লুকচ্ছ ? “
“ মা তোর ভালর জন্যই। আমিও চাই তোর দিদি ঠিক হয়ে যাক। “
“ কিন্তু ইনি যে কি ডাইরির কথা বললেন ? “
“ মা তোর পরীক্ষা টা শেষ হোক, সব বলব। এখন তুই ওই ঘরে যা। আমি একটু এনার সাথে কথা বলি। “

শিঞ্জিনী এই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, মুখ শুকিয়ে। নিজের বাবার উত্তরে সন্তুষ্ট নয় সে। তারমানে ঘরের ছোট মেয়ের কাছ থেকে অনেক কিছুই লুকিয়ে রাখা হয়।

“ আমার ছোট মেয়ে খুব বেশী সেনসিটিভ। ওকে এই সব কথা বলা ঠিক হবেনা ভেবেই আমি বলিনি। এই বারো বছর বয়সে আর কত কি দেখবে। “
মাথা নিচু করে পেছন দিকে দেখলেন, তার মেয়ে চলে গিয়েছে ঘর থেকে।
“ কেমন দেখলেন আমার মেয়ে কে ? “
“ আপনার ছোট মেয়ের সামনে সব কথা বলা যায়না তাই বলিনি। আপনার বড় মেয়ের মধ্যে সম্ভবত মুড ডিসঅর্ডার রয়েছে। কোন ভাবে ওকে হয়ত ডিপ্রেশন ভুগিয়ে চলেছে। কারনটা জানতে হবে আমাকে। “
“ এটা সাঙ্ঘাতিক কিছু ? মানে আমার মেয়ের কোন ক্ষতি হবে না তো ?“
“ এটা বলা মুশকিল। ব্যাপারটা ওকে নিয়ে নয়। ওর চারপাশের মানুষের জন্য ও ক্ষতিকর। মুড ডিসঅর্ডার ব্যাপারটা বেশ শক্ত জিনিস। মনে করুন, ওর হাতে পেন রয়েছে, সেটা দিয়ে লিখছে ও। হঠাৎ ওর রাগ হোল কোন কারনে, সাথে সাথেই পেনটা খুঁচিয়ে দিল সেই পাশে বসা কারোর পেটে। নিজের অজান্তেই সাঙ্ঘাতিক বিপদ দেখে আনল। এরকমই জাস্ট। কিছুটা সিজোআফেক্তিভ এর মত। “

মানে ? “
সিজোআফেক্তিভ মানে সিজোফ্রেনিয়া আর মুড ডিসঅর্ডার এর বৈশিষ্টের সমষ্টি মাত্র
মনে করুন একসাথে রোগী হ্যালুসিনেট করতে পারে সঙ্গে মুড চেঞ্জ করে ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারে আবার এমনও হতে পারে, ডিলিউসন আর ম্যানিয়া ওকে একসাথে আক্রমন করল “    

“ ম্যাডাম আমি কিছুই বুঝছি না
এটুকু বুজছি, আমার মেয়ে ভাল নেই কোন কি কিছু উপায় নেই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার ? “
“ আছে। তবে আমাকে আর একটু সময় দেন। দেখছি কি করা যায়। “
“ ঠিক আছে
আজ আপাতত এতুকুই থাক আপনি অনেক দূর থেকে এসেছেন, একটু রেস্ট নিন। ওপরের একটা ঘর বিন্নি কে খুলে পরিস্কার করে রাখতে বলেছি। জিনিস পত্র পৌঁছে গেছে। আপনি ওপরে যান। দুপুরের খাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম করুন। তারপর বিকেল সন্ধে করে আপনার সাথে দেখা হচ্ছে। “

হাত জোর করে প্রনামের ভঙ্গীতে ভদ্রসেন বাবু চলে গেলেন। নামেও যেমন ভদ্র, লোকটি কে দেখে কেমন যেন মায়া লাগছিল।

সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম। সোজাসুজি আমার রুমটা, ঠিক যেমন টা ভেবেছিলাম। ঘরের মধ্যে একজন ভদ্রমহিলা পরিস্কার পরিছন্ন করা শেষ করে বেরিয়ে আসছেন। ইনিই তাহলে বিন্নি দিদি।
“ একটু শুনবেন ? “, নিচে নামতে যাবেন। ঠিক তখনই আমার কথায় আঁটকে গিয়ে দরজার কাছে দাড়িয়ে রইলেন। বয়স সাইত্রিশের কাছাকাছি, তবে লুকনো যৌবনচিহ্ন উকি মারছে, ডুবন্ত সূর্যের শেষ আলোর মত।
আমি একজন মেয়ে হয়েও ওর শরীরী চুম্বকে আকৃষ্ট হয়েছিলাম।
“ আপনি কতদিন আছেন এখানে ? “
“ আজ্ঞ্যে অনেক দিন হয়ে গেল। “
“ তার আগে কোথাও কাজ করতেন ?”
“ তার আগে আমি পড়াশোনা করতাম। আমার মা কাজ করত এখানে। মা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি এখানে। “
“ আপনার বিয়ে হয়নি ? “
উত্তরে শুধু ঘাড় নাড়ল হ্যা বাচকভঙ্গিতে।
“ এই বাড়ির বড় মেয়ে, অহল্যার ব্যাপারে কিছু বলতে পারবে ?”
এতক্ষণ ধরে বিন্নি হয়ত খুব চিন্তায় ছিল মনে হল। আমি কি জিজ্ঞেস করব সেটা নিয়ে। এখন মনে হচ্ছে ও কিছু একটা বলতে চায়, আর ঠিক তারই সুযোগ আমি করে দিয়েছি।

“ দিদিমনি খুব ভাল ছিল। খুব হাসিখুসি ছিল। কিন্তু সেদিনের পর থেকে... “

“ ঘরে আয় বিন্নি “, একটা হালকা অথচ জোরালো গলা শুনতে পেলাম, পেছন থেকে। একটু চমকে অবশ্য আমিও গিয়েছিলাম। পেছন ঘুরতেই নজরে পড়ল একজন লোক, এক পা নেই, পঙ্গু। স্ট্রেচার ভর করে হাঁটেন। তাকিয়ে আছেন বিন্নির দিকে। চোখে বিরক্তি। সেটার কারন যে আমি, সেটা ওনার নজর দেখলেই বোঝা যায়। বিন্নি দি আস্তে আস্তে চলে গেল সেই জায়গা থেকে।
ভেতরে একটা কণ্ঠ আমাকে বলছিল, পলাশডাঙার জমিদার বাড়ি মনে হচ্ছে প্রহেলিকাপূর্ণ।



৪  

বিকেল গড়িয়ে গেছে পশ্চিম আকাশে। লাল সূর্যের শেষ রঙ মেখে পাখিগুলো ঘরে ফিরছে। দুরের সবুজ গাছপালা আর গাড় করছে নিজের রঙ। কলকাতায় থাকাকালিন এই সময়টা ঘরে থাকলে একটি লাল চা করে খাই, চিনি ছাড়া। নতুন জায়গায় এসে সেটা যে হবেনা আমি জানতাম। দুপুরের খাওয়ার পর একটু শুয়েছিলাম রুমে, ভেতর থেকে ছিটকিনি দিয়ে। চোখটা একটু লেগে গিয়েছিল।
ঘুমটা ভাঙতেই দেখলাম অন্ধকার হয়ে এসেছে। ঘরের লাগোয়া সিঁড়ি দিয়ে চলে এলাম এই ছাদে। বেশ লাগছে ছাদে ঘুরতে। ভদ্রসেন বাবু এই ছাদের কথাই বলছিলেন। ওই তো বাইজী ঘরটা। ঢোকার সময় চোখে পড়ে না, কারন ওটা ঘরের উলটো দিকে। ছাদ থেকে পুরো ভিউ টাই দেখা যায়। কে ঢুকছে, কে বেরিয়ে যাচ্ছে সবটাই।

চিন্তাগুলো কে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। বিন্নি দি বলে মহিলাটি সম্ভবত কিছু একটা জানে, যেটা আমায় বলতে চাইল। আচ্ছা ওই লোকটা কে যে বারন করলো ? ওর বাবা নাকি স্বামী ? এর মধ্যে যে কোন একটা হলেও আশ্চর্য হব না। ছোট মেয়ে শিঞ্জিনী কে ওর বাবা সবকিছু বলতে চায় না কেন ? পড়াশোনা ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু দিদির মানসিক অবস্থা খারাপ হলে সেটা না জানানোর বাহানা শুধুমাত্র সেনসিটিভ ব্যাপার বলে ? অহল্যা কে প্রথম ঝটকায় কোনভাবেই মানসিক রোগী মনে হয়নি আমার, তবে নিক্কন দেবী একটু কেমন যেন, বুঝতে পারছি না।

নিচ থেকে বেশ সুন্দর একটা কোলাহল হচ্ছে, কথা বলার, আনন্দের। ছাদ থেকে উকি মারলাম। দেখতে পেলাম তিনজন কে। অহল্যা, সঙ্গে শিঞ্জিনী এবং ওদের সাথে দাড়িয়ে আছে একটি ছেলে। বয়সে সম্ভবত ওদের দুজনের থেকেই একটু বড়।
 
পেছন থেকে একটা শব্দ এলো, কেউ আসার। মুহূর্তে ঘুরে দাড়াতেই সামনে দেখলাম বিন্নি দি কে, হাতে একটা বড় ট্রে, রয়েছে চা ও বিস্কুট।
“ কর্তা মশাই আপনার জন্যে পাঠালেন। “
“ উনি কি করে জানলেন যে আমি ছাদে আছি ? “
“ কর্তা মশাই আমাকে পাঠিয়েছিলেন আপনাকে ডাকার জন্যে। আমি ঘরে গিয়ে দেখি আপনি নেই। তারপর ছাদে এসে দেখলাম আপনি এখানে, তাই ...”
“ তুমি একটু আগেও ছাদে এসেছিলে ? আমিতো লক্ষ্য করিনি।“
“ হ্যাঁ, এসে দেখলাম আপনি কিছু ভাবছেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে, তাই আস্তে আস্তে নিচে নেমে চলে গেলাম, চা আনার জন্যে।“
“ বাহ, তুমি তো বেশ গুছিয়ে কথা বলো তো। আছা আজ দুপুরে তখন কি বলবে বলে বললে না। তোমার স্বামী সম্ভবত ছিলেন, তাই না ? “
মেয়েটি মাথা নাড়ল শুধু।

“আচ্ছা, তুমি তখন কি বলতে চাইছিলে একটু বলতে পারবে এখন ? ”
আমার কথাটা শোনার পর বিন্নি দি একবার পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে নিল। কেউই কোথাও নেই।

“ ওরা দিদি কে একদিন খুব মেরেছিল, খুব বকেছিল। দিদি কাঁদতে কাঁদতে সেদিন সেই যে চুপ করে গেল, তারপর থেকে আর কোন কথা বলত না

“ তোমার দিদি কে কেন মেরেছিল ? “
“ দিদি নাকি খুব অন্যায় কাজ করেছিল, তাই। “
“ কি অন্যায় করেছিল, তুমি জানো ? “
“ না আমি জানিনা, কিন্তু এটুকু জানি, কর্তামশাই নিজের স্ত্রীর কথা কখনই ফেলেন না। সেদিন যখন মারছিল, মা ঠাকুরন পেছনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আর উস্কে দিচ্ছিলেন কর্তা মশাই কে। “
“ এটা কবেকার ঘটনা আমায় বলতে পারো ? “
“ প্রায় এক মাস হবে। সেই চাবুকটা কর্তা মশাই... “
মুখের কথা কেড়ে নিলাম আমি, “ ভদ্রসেন বাবু চাবুক দিয়ে নিজের মেয়েকে মেরেছিলেন ? “

দরজায় পায়ের শব্দ পেতেই বিন্নি দি নিজেকে গুটিয়ে নিল। ঠিক যেন ভীত হয়ে গিয়েছে। চুপচাপ চলে গেল যে রাস্তা দিয়ে এসেছে। আমিও ভেতর থেকে বেশ উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ভদ্রসেন বাবু কে দরজার ওপাশ থেকে বের হতে দেখে নিজেকে সামলে নিলাম।
বিন্নি বেরিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই দৃশ্যটা দেখার মত। যেভাবে তাকিয়ে ছিলেন ভদ্রবাবু ওনার দিকে, মনে হল ঠিক একটা কারনে উনি রেগে গিয়েছেন। আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে ছাদের নীচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।মনে মনে ভাবলাম, এমনটা আমি ভদ্রসেন বাবুর কাছ থেকে আশা করিনি।

“ শরীর চাঙ্গা তো আপনার, দাক্ষায়নী দেবী ? “
“ হ্যা, বিলক্ষণ। আর হবে নাই বা কেন। দুপুরে এতোটা আয়োজন, আর এই গ্রামবাংলার ফুরফুরে একটা সবুজ আবহাওয়া, যেকোনো ভাবেই শরীরে স্ফূর্তি জুগিয়ে দেয়। “

কথাটা বলা মাত্রই আমি ভদ্রসেন কে নীচের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,” ওই ছেলে টি কে ? “

উনি নীচের তিকে তাকিয়ে দেখেনিলেন, তারপর বললেন, “ ওই ছেলেটি ? যে দুজনের সাথে কথা বলছে, ও পাশের গ্রামে থাকে। শিঞ্জিনীর বন্ধু। “
“ শিঞ্জিনীর ? কিন্তু ওকে দেখে তো অনেক বয়স মনে হয়। অহল্যার থেকেও তো বড় মনে হচ্ছে, তাই না ? “
“ হ্যা, আপনি ঠিকই ধরেছেন। আসলে ছেলেটি এই গ্রামেই একটা সময়ে থাকতো। এখন গ্রামের বাইরে একটা ছোট্ট দোকান দিয়েছে, নিজের মায়ের সাথে। গ্রামে থাকাকালীন আমাদের ঘরে ওদের যাতায়াত ছিল। এখন দরকার পড়লে আসে, আর ওদের সাথে গল্প করে। “
“ কি দরকারে এখন আসে ? “
“ আমি যখন বাইরে কাজে যাই, ঘরের টুকটাক দেখাশোনা করে। আমার লেখা কিছু চিঠি কখনও পোস্ট অফিসে দিয়ে নিয়ে আসতে হলে, ইত্যাদি আর কি। প্রয়োজনে আমার হয়েও ওকে পাঠাতে হয়
আজও তাই ওকে ডেকেছিকলকাতায় একটা চিঠি পাঠাতে হবে তাই। “
“ কি নাম ছেলেটির ? “
“ ওর নাম, পারিজাত।“
“ আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি ? “
“ হ্যা বলুন। “
“ আপনার স্ত্রী, নিক্কন দেবীর বয়স কত ? “
“ হুম, তা মনে পড়ছে, আসছে মাসে ছাব্বিশ হবে। কেন বলুন তো ? “
“ আচ্ছা, আপনার বয়স কত ? “
“ আপনি ঠিক কি মিন করতে চান, বলবেন একটু ? “
“ আপনার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরই আপনি নিক্কন দেবীর সাথে বিয়ে করেন
ফোনে আপনি আপনার দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলেননি ঠিকই, কিন্তু কোথাও একটা হিসেব মেলাতে পারছি না। “
“ আপনি কোন হিসেবের কথা বলছেন ? “
“ না ঠিক আছে। ওটা এমন কিছু না। আপনাদের বাইজী ঘরটি কিন্তু বেশ লাগছে দূর থেকে। আজ রাতটা আমি ওখানেই কাটাতে চাই, যদি আপনার না আপত্তি থাকে।“

ওনার সাথে কথা বাড়াতে তেমন ইচ্ছে হোল না, অন্তত একটু আগের ওইসব কথা শোনার পর
উপরন্তু নিজের কাজে ফোকাস করাটাই শ্রেয় মনে হোল। তাই ইচ্ছে করেই কথা ঘুরিয়ে দিলাম।
ভদ্রসেন বাবু একটু নিজেকে সামলে নিলেন।
“ অসুবিধের কি আছে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন। কিন্তু এখন আমার একটু চিন্তা হচ্ছে। এই সেদিন ওখানেই একটা লাশ পাওয়া গেল। তারপর আপনি থাকতে চাইছেন ? যদি ভয় পান ? “
“  ভয় থাকলে কি আর এই কাজে নামি ভদ্রসেন বাবু। আপনি ব্যাবস্থা করে দিন। আর হ্যা, এখানে পুলিশ ব্যবস্থার কি ব্যাপার ? আপনি কি পুলিশে খবর দেননি ? “
“ রুটিন ইনকোয়ারি করেছে মাত্র
গ্রামে যাতে এই ঘটনা না রটে তার জন্য পাশের গ্রামের অন্যদের বলেছি আমাদের চাকর ভেগে গেছে টাকা নিয়ে। পুলিসের মুখ বন্ধ করা আমার কাছে এমন কিছু ব্যাপার নয়। আমার কাছে পরিবারের সম্মান আগে। এটা যে খুন সেটা স্পষ্ট। কিন্তু আমি চাই না, এই খুনের কিনারা হোক। আমার মেয়েকে জেলে আমি পাঠাতে পারব না। তাই আপনাকে ডাকা। আমার মেয়েকে রক্ষা করুন। ওকে ভাল করে দিন। অধিরাজ সোমের হাত থেকে ওকে বাঁচান। “





গ্রাম্য এলাকায় রাত এই প্রথম কাটাচ্ছি। আকাশে রাতের আলো, চাঁদ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। চারিদিকে ঝি ঝি ডাক। নিস্তব্ধতায় অন্য মাত্রায় শান্তি ফিরিয়ে আনে। রাতের খাওয়া হয়ে গিয়েছিল ঠিক সাড়ে নটার মধ্যে। আর একটু পরেই গ্রামে মাঝরাত্রি নেমে আসবে।
বিন্নি দি আমার এখানে শোবার ব্যাবস্থা করে দিল। আতিথেয়তার ত্রুটি যাতে না হয়, সেই সময়টা উপস্থিত ছিলেন নিক্কন দেবী। কিন্তু আমার মনে হোল, উনি আসলেই দাড়িয়ে আছেন আমার সাথে বিন্নিদির কথোপকথন যেন না হয়। নিক্কন দেবীর দিকে লক্ষ্য করছিলাম, মহিলাটি যেন ঠিক খুশী নয়। এত বড়লোক বাড়ির বউ , তা সত্তেও ওনার মধ্যে খামতি
কিন্তু কি জন্য ? স্বামীকে কে উস্কে সতীনের মেয়েকে মারার ইচ্ছে ঠিক কি কারনে হয়েছিল। আর তাছাড়া সতীনের আর এক মেয়ের সাথেও কি সমান আচরণ চলে ?

বিন্নিদির কাজ হয়ে গেলে বেরিয়ে যায়।
একটা মিষ্টি হাসি হেসে নিক্কন তাকে অনুসরন করে, দরজা ভেজিয়ে।

রাত প্রায় বারোটা বেজে গিয়েছে। ঘুম আসছে না, কারন দুপুর একটু রেস্ট নিয়েছি। ব্যাগটা খুলে নোটবইটা বার করলাম। যা মনে হচ্ছে, একটু টুকে রাখা দরকার। কেস সল্ভ করতে সুবিধে হবে। বাইজি ঘরটা ভাল করে দেখছিলাম
এটা এখন নামেই বাইজি ঘর। একটা খোলা স্থান রয়েছে, যেটা ঘিরে সব্বাই বসতো, তার মাঝে চলত নাচন কোদনসেই জায়গায় একটি বড় টেবিল রয়েছে, ফলমূল রাখা সাজিয়ে আমার জন্য। কোন দরজার পাল্লা নেইরয়েছে কাচের রং বেরঙের বল দ্বারা ঝোলানো সব ঘরের মাঝখান থেকে একটু পাশে বিছানা পাতা, রাজাখাটে। যার একদিকটা সিংহাসন এর মত কাজ করা কাঠের ওপর।
মেইন দরজার একদিকে, আর ওইদিকে পেছনে, আর একটি দরজা। যতটা বুঝতে পেরেছিলাম, মৃতদেহ ওদিকেই পাওয়া গিয়েছিল।


ভদ্রসেন সোম - দুই মেয়ের বাবা। একনিষ্ঠ পিতার সাথে সাথে স্বামীর কর্তব্য পালনে অটল। ছোট মেয়ে কে বেশি ভালবাসে। কিন্তু বড় মেয়েকে সুস্থ করতে চায়। এদিকে তার ওপর কি কারনে হাত তুলল। কিসের এত রাগ যে চাবুক দিয়ে শেষমেশ ? বৈপরীত্য কেন ?

নিক্কন দেবী – সুন্দরী, এককথায় চোখ ফেরানো যায় না। কিন্তু মুখে এমন উদাসিন্য কেন ? এত বয়সের ফারাকে বিয়ে করার কি খুব বিশেষ কারন আছে ?

বিন্নি দি - বিশ্বাস করা যায়, মেয়েটা অনেক কিছু জানে। কিন্তু বলতে ভয় পাচ্ছে। নিজের স্বামীকে ভয় এর থেকে বেশি ভালবাসে।

বিন্নি দি র স্বামী – পঙ্গু, শারীরিকভাবে অনেক কিছুতেই অক্ষম বলে মনে হয়। কিন্তু মনের জোর চোখে পরিস্কার বোঝা যায়।

অহল্যা – মানসিক ভাবে অসুস্থ হলেও কোন মাত্রায় সঠিক ভাবে সাইকিক পেসেন্ট নয়। পোস্টট্রমাটিক সিনড্রোম নয়ত ? ওর ইতিহাস জোগাড় করলে আশা করা যায়, অত্যাচারের নমুনা পাওয়া যাবে। আবার হতেও পারে সেই দিক থেকে অসুস্থ। না, মানসিক ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত কনক্লুড করতে পারা যাচ্ছে না।
মুড অন অফ সব্বার হয়, ওর একটু বেশী। হ্যা, খুন করার প্রবনতা একটা রয়েই যাচ্ছে।
  
শিঞ্জিনী – ছোট মেয়ে হয়েও বাড়ির প্রতি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হতে চায়। সেনসিটিভ ঠিক কোন ব্যাপারে জানতে হবে।

পারিজাত – তেমন কিছু জানা নেই এখনও। তবে ওর চোখ প্রনয় পাশা খেলছে। দূর থেকে ওর চোখ পড়ে তেমনি মনে হোল।


ছম ছম ছম ছমমমমমমমম !
দমবন্ধ করা চমক। বেশ ভাল মতই চমকে গিয়েছিলাম আমি। হঠাৎ করে দরজার পাশ দিয়ে এই শব্দটা হতে হতে এইপাশ থেকে ওইপাশ করে চলে গেল। পরমুহূর্তে শব্দটা আবার এগিয়ে এলো, দেওয়াল বরাবর।
নিজের হৃদস্পন্দন শুনতে পেলাম আমি, আর একটু হলেই ভিরমি খেতাম। এমন ব্যাপার তো আশা করিনি। করলে না হয়, মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতাম।
পাশের দেওয়াল দিয়ে শব্দটা এগিয়ে গেল
কেউই আছে দেওয়ালের ওপারে। পায়ের ঘুঙুর পড়ে এসেছে। সেকেন্ড খানেক সময় নেওয়ার পর বিছানায় সোজা হয়ে বসলাম। পা টিপে টিপে ওইদিকে গেলাম। হ্যা, মেইন দরজার দিকে। নিচে লক্ষ্য করলাম। একটু আগেও যেখানে চাদের আলো ঢুকছিল, এখন সেখানেই একটা কালো ছায়া নড়ছে। বুঝতে বাকি রইল না, বাইরে কেউই দাড়িয়ে আছে। এত রাতে কে ঘুরছে ?
খুলবো দরজা ?
মনে মনে ভয় ততক্ষণে কেটে গেছে।
দরজার ছিটকিনি তে হাত দিলাম, দরজা খুলবো বলে স্থির করছি, ছায়ামূর্তি তখনও দাড়িয়ে আছে।

ঠিক তখন একটা চিৎকার এলো, শেষ চিৎকার, পেছন থেকে
ঠিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগের মুহূর্ত। আর একটু হলেই আমারই নিঃশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড় হয়েছিল।
শব্দটা আসছে আমার পেছনের দরজা দিয়ে। শরীরে ভয়াবহ কম্প দিল মাত্র, এমনটা ঘটার ফলস্বরূপ। চোখে পড়ল, আমার সামনের দরজার নিচে, ছায়ামূর্তি ভ্যানিস। চটজলদি দরজা খুলে দিলাম। না কেউই নেই। কিন্তু চাঁদের আলোয় দেখতে পেলাম, কেউ একজন শাড়ি পড়ে দৌড়ে যাচ্ছে। পিছু নেব ঠিক করলাম, কিন্তু পেছনের দরজার আওয়াজের কৌতূহল আমাকে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দিল।
দৌড়ে গিয়ে পেছনের দরজা খুলতেই চোখ মুখ ছানাবড়া হয়ে গেল।

একটা দেহ, মেয়ের, মৃত। গলার নলিটা আলাদা করা। পড়নে কোন আভরন নেই। তাই পিঠে চাবুকের একটা দাগ জ্বলজ্বল করছে লাল হয়ে।
নিজের নার্ভ কে শক্ত করে দরজার বাইরে গেলাম। বাইরে কেউই নেই। দেহটির মুখে আলো ফেলতেই দমবন্ধ হয়ে গেল, বিন্নি দি।

খুন এই মাত্র যদি হয়, তাহলে দুজনের ধস্তাধস্তি কানে আসত। সেটা হোল না। বরং ওদিকে ছমছমছম। একমিনিট!
খুনের সময় ওদিকে আওয়াজ, তার মানে এখানে কি কোন তৃতীয় ব্যাক্তি উপস্থিত ছিল ?





ভোর ৬টা

বলতে গেলে ঘুম হয়নি সারারাত, বডি জেগে পড়েছিলাম বলা চলে। মন্তা একটু ভার হয়ে ছিল একটু।

আজ সব্বাই এর সাথে একটু কথা বলা দরকার, গতকাল যা ঘটে গিয়েছে।  আমি এইখানে থাকা সত্ত্বেও যে ডেডবডি পাবো, এটা আমার ভাবনার বাইরে
তারপর এমন একজনের, গতকাল পর্যন্ত যে আমার সাথে কথা বলেছে।
আড়াল হয়ে দেখে নিলাম, বডি ওখানেই রয়েছে।
এটা কি কোন অশরীরীর কাজ আদেও ?
একটা অশরীরী নৃশংস ভাবে গলার নলি কাটবে ? কি কারনে ?
অশরীরীর তো অনেক ক্ষমতা। তাহলে এই পথ অবলম্বন করবে মানুষ খুন করার জন্য ?
উহু বুঝতে পারছি না।
 
গত রাতে যেদিকে ঘুঙুর পড়ে দৌড় দিয়েছিল, সেইদিকটা গেলাম। সকালের আলোয় পরিস্কার দেখতে চেষ্টা করলাম জায়গায়টা
যেই দৌড়ে যাক না কেন, কিন্তু শেষমেশ গেল কোথায় ? কে ছিল ওটা ? তখন যদি আওয়াজের পেছনে না ছুট দিতাম, তাহলে এটা অন্তত বুঝতে পারতাম, সেই দৌড় কি জমিদার বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে নাকি বাড়ির ভেতরে ঢুকেছে।

হাটতে হাটতে বেশ অনেকটা জায়গা দখল করে নিলাম, কিন্তু কিছুই পেলাম না
ঠিক তখনই সবুজ ঘাসে চকমক করে উঠলো একটা জিনিস। পকেটে নিয়ে নিলাম।
মাথায় একটা ভাবনা খেলে গেল।
পারিজাতের সাথে দেখা করা একবার অত্যন্ত দরকার। ছেলেটা এখানে ঠিক কিভাবে যুক্ত। ভদ্রসেন বাবুর অসংলগ্ন কথা সন্দেহ উস্কে দিচ্ছে।
জমিদার বাড়িতে সব্বার ঘুম ভাঙতে এখনও অনেক দেরি, তাই মেইন গেট ছেড়ে গেলাম পাশের গ্রামের উদ্দেশ্যে।

ছোট্ট একটা বাড়ি, এক চালার। বেশ অন্ধিকার ও অগোছালো। দেখেই বোঝা যায়, অভাবের সংসার। কোন রকমে ওদের দিন চলে।
পারিজাতের সাথে দেখা হোল না। পরিবর্তে ওর মায়ের সাথে পরিচয় হোল। জমিদার বাড়ি থেকে একটু অর্থ সাহায্য পায়, সামান্য কিছু কাজের বিনিময়ে, সেটাই আসল ভরসা। এর আগে এই জমিদার বাড়িতে ওই মহিলার যাতায়াত ভালই ছিল। অহল্যার মা চলে যাওয়ার পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
আমার সন্দেহের তীর যে পারিজাতের দিকেই ঘুরতে শুরু করবে, এটা আমার মনে হচ্ছিল। এখন শুধু অপেক্ষা সঠিক সময়ের।
রাস্তায় একটু সময় কেটে গেল, প্রকৃতি দেখতে দেখতে। কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হোল, কথা হোল।
দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কেটেই গেল ওখানে। তাই জমিদার বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ঘণ্টা খানেক পার।

একটি পুলিসের ভ্যান বেরিয়ে গেল, যখন আমি ঢুকলাম মেইন গেট দিয়ে
বুঝলাম ভদ্রসেন বাবু এবারও রফা করে ফেলেছেন ব্যাপারটা। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে। এর একটা বিহিত করতেই তো আমার আসা। কিন্তু এমন ভাবে একটা কাণ্ড ঘটে যাবে বুঝতে পারিনি। হয়ত আমার বোঝা উচিৎ ছিল, কাল কিছু ইনফরমেশন বিন্নি দি ভুল করেই বলে ফেলেছ হয়ত। ওকে চোখে চোখে রাখলে হয়ত এমন ভুল হত না।
 বিন্নি দি এর এই কথাবার্তার ওপর ভিত্তি করলে, ক্ষতি অবশ্যই ভদ্রসেন বাবুর। তারমানে সেই কি খুন করেছে ?
কিন্তু তাই যদি হয়, আগের চাকরকে কে খুন করল ? সেখানেই বা কার স্বার্থ ? কোনভাবেই আমার এখন পর্যন্ত অশরীরী ব্যাপারটা মেনে নিতে ইচ্ছে হয়নি।
কিন্তু সবটা কোথাও গুলিয়ে যাছে।
উহু, আমাকে স্টেপ বাই স্টেপ ভাবতে হবে।

“ গুড মর্নিং “, সামনে থেকে এগিয়ে আসতে আসতে ভদ্রসেন বাবু আমাকে বললেন। আমি তখনই গেট ক্রস করছি ভাবতে ভাবতে।
“ মর্নিং, পুলিশ কেন এসেছিল এখানে ? “, কিছুটা না জানার ভান করেই বললাম।
“ আর বলবেন না, সকাল থেকে অহল্যা কে ঘরে পাওয়া যাচ্ছে না। “
“ ওমা সেকি ? কোথায় গিয়েছে ? “
“ সেটাই তো জানি না। কাল রাতেও তো ছিল। আপনি কোথাও দেখেছেন ? “
“ না আমি কোথাও দেখিনি। পুলিশ কি এই কারনে এসেছিল ? “
“ এই কারণটাই আসল ছিল। ওদিকে আবার আর এক ঘটনা
বাইজি ঘর থেকে আবার একটা লাশ পাওয়া গেল। কার জানেন, বিন্নির। কি কাণ্ড বলুন তো ? “
“ হ্যা, আমি জানি। গতকাল রাতে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।“
“ তারমানে ? আপনি জানেন ব্যাপারটা ? “
“ ওসব ছাড়ুন। আমাকে বলুন তো, আপনি পায়ে কখনও ঘুঙুর পড়েছেন ? “
“ হোয়াট ? কি আবোলতাবোল বলছেন ? “
“ সরি জাস্ট মজা করছি। আচ্ছা, আপনার ওই কলঙ্কিত ডাইরি, যেটা হারিয়ে গেছে, ওটার কোন আলাদা কপি আছে ? আমি পড়তাম তাহলে। “
“ আমার বাবার হাতে লেখা ওই একটাই। বিকল্প নেই। আর হাতে পেলেও আপনাকে পড়তে দিতাম না। “
“ কেন ? পরিবারের সমস্যা সমাধান করতে হলে ইতিহাস জানা তো আমার দরকার, তাই নয়কি ?”
“ আপনি আমাকেই জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমি সব বলে দেব না হয়।“
“ ডাইরির সব মনে আছে আপনার ? “
“ তা আছে বইকি, অনেক বার পড়েছি আমি। “
“ তাই ?  ঠিক আছে, যেটা এখন পাচ্ছি না খুজে, সেটা নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। তবে যদি একবার সুযোগ পাই, তাহলে নিশ্চয়ই পড়ব। “
উত্তরে ভদ্রবাবু বিরক্ত হননি, তবে আমার কথায় খুশিও হননি।
     
আমি ঘরে চলে যাচ্ছিলাম। বাইরে দেখলাম বিন্নিদির স্বামীকে। চোখে মুখে কষ্ট। খুব কাদছে বসে বসে। বেচারা কে দেখে কষ্ট হোল। স্ত্রী কে ভাল যে বাসতেন সেটা কাল ওর চোখেই দেখেছি। বেচারা একা হয়ে গেল।
একটা সিক্সথ সেন্স কাজ করল, কোন তৃতীয় জন আমাদের দেখছে মনে হোল।
মাথা তুলে ওপর দিকে তাকালাম, জানালায় ওটা কে ? কে ? একটু আগেই দাড়িয়েছিল
আমাকে দেখে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে। বুঝতে পারলাম না তাই। তবে এটুকু বুঝলাম, এতখন ধরে সে আমার আর ভদ্রসেন বাবুর কথা শোনার চেষ্টা করছিল বা বলা যায় শুনছিল।






বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে
আমি বসে আছি সেই বাইজি ঘরেই, একা। অহল্যা নিজের ঘরে ফিরে এসেছে বেলা বাড়তেই। না, কোন উত্তর দেয়নি সে। কথা বাড়াতে আমারও ইছহে করেনি।

নিজের জ্ঞানের ওপর আমার সন্দেহ হতে শুরু করল। এখন মনে হচ্ছে আমার এখানে আসাই উচিৎ হয়নি। কাল যে তিমিরে ছিলাম, আজও সেই তিমিরেই আটকে। অথচ আর একটা খুন হয়ে গেল। আজ আর একটু পরেই আর একটি রাত এর শুরু।

কাল যে সময়ে আমার এখানে ঘটনাগুলো ঘটছিল, তখন কে কোথায় ছিল, জানতে পারিনি এখনও। ম্যান টু ম্যান ইনভেস্তিগেট করলে ভাল হয়, কিন্তু হচ্ছে টা কই। এখনও আমাকে অনেক কিছুই শিখতে হবে।

অহল্যা কি নিজের ঘরেই ছিল ? নিজের কল্পিত বন্ধুর সাথে কথা বলছিল ?
নাকি সেই এসেছিল আমার ঘরের বাইরে, পায়ে ঘুঙুর পড়ে। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। ভদ্রসেন বাবু যাই বলুক সেদিন রাতের কথা, আমার কাছে ব্যাপারটা বিশ্বাস যোগ্য নয়।
সেভিয়ার বাইপোলার ডিসঅর্ডার এর ক্ষেত্রে সাবজেক্ট এর মুড সুইং করে, আনন্দ ও ডিপ্রেশন এর মাঝে সুইচ করে
সিজফ্রেনিয়া এর ক্ষেত্রে সাবজেক্ট এর শুধু অডিটরি হ্যালুসিনেসন হয় তাই নয়, সঙ্গে প্যারানয়া, মিডিয়া অবশেসন হয়। অহল্যার ক্ষেত্রে এই দুই ধরনের ডিসঅর্ডার রয়েছে সম্মিলিত ভাবে। যার মধ্যে এত বড় সমস্যা, সে শাড়ি পড়ে, পায়ে ঘুঙুর বেধে রাতের বেলা এখানে শুধু ঘুরতে আসবে ? খাপে খাপ মিলছে না।
আর একবার ভেবে দেখি।


ডাইরিটা মনে করলাম অহল্যা পড়েছে। তাহলে ওর ক্ষেত্রে অনেক কিছুই করা সম্ভব। নিজের মায়ের মারা যাওয়া মন থেকে হয়তো স্বীকার করতে পারেনি অহল্যা। নিজের বোন শিঞ্জিনী কে হয়ত সেই জায়গাটা দিতে পারেনি, কারন বয়সে সে অনেকটাই ছোট। তাই নিজের কল্পিত এক বন্ধু তৈরি করে, যার সাথে কথা বলে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই কল্পিত বন্ধু কি অধিরাজ সোম ? কল্পিত বন্ধু হয়তো সেই খুন গুলো করছে। আসলেই ঘটনা ঘটছে আলাদা। হয়ত অহল্যা নিজেই খুন করছে, নিজের হাতে ক্ষুর নিয়ে। আর ওদিকে কল্পনায় দেখছে অধিরাজ সোম কে সেই কাজ করতে, হ্যলুসিনেসন এর মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এতটা ভাবা একমাত্র মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তাহলে কি আমি ভুল সন্দেহ করছি অন্যদের। কোথাও ভুল করছি না তো ? আবারও নিজের সাথে লড়াই করতে শুরু করলাম




আজ রাতটা একটু বেশী সতর্ক থাকতে হবে আমায়।
ভদ্রসেন বাবুকে শুধু বলা ছিল, আজ মেইন গেট বাদে সব দরজা খোলাই থাকবে। যাতে আমি যে কোন সময় এই ঘর থেকে বেড়িয়ে যেদিকে চাই বের হতে পারি।
রাত ঠিক বারোটা বেজে গিয়েছে

আমি বাইজি ঘরের বাইরে দাড়িয়ে পায়চারি করছিলাম। না কোনভাবেই আজ কোন খুন হতে দেওয়া যাবে না। আজ ঘরের ভেতর থাকলে গতকালের মত যদি ঘটনা রিপিট হয়, তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। বিন্নি দি র স্বামী একটু আগে পর্যন্ত আমার এখানেই ছিল। মনের দুঃখে বেচারা বলেছে, এই জমিদার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আমি তাকে কথা দিয়েছি যে বিন্নি দি কে যে খুন করেছে তাকে আমি ধরবই।
আমার উত্তরে লোকটা একটু চমকেই গিয়েছিল। অধিরাজ সোম যে শরীরী নয়, সেটা সেও জানত। তবুও আমাকে দেখে তার কোথাও মনে হয়েছিল, অশরীরী হলেও এই মেয়েটা হয়তো সেটা কাবু করার ক্ষমতা রাখে।

ওপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সব ঘরেই আলো নেভান। এতক্ষণ পর্যন্ত অন্তত। সব্বাই আজ ঘুমিয়ে পড়েছে, দশটা বাজা মাত্র

কিন্তু ওই একটা ঘরে আলো জ্বলল। হাত ঘড়িতে বারোটা বেজে পাঁচ। আর ঘরটা শিঞ্জিনীর।
দৌড়ে গেলাম ওপরে, যতটা পারা যায় পা টিপে টিপে। চিন্তায় পড়ে গেলাম, শিঞ্জিনী এখন কি করছে। দরজাড় বাইরে দাড়িয়ে আমি। না সেটা এখনও খোলেনি। অপেক্ষা করছি। আর একটা অঘটনের গন্ধ নাকে আসছে।
হিসেব মিলছে না আমার আবারও।
মিনিট খানেক পর দরজা খুলে আস্তে করে বেরিয়ে এলো শিঞ্জিনী। আমার মুখোমুখি পড়ে গেল সে। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছে আমায় সামনা সামনি দেখে, এত রাতে।
“ আপনি এখানে কেন ? “
“ তার আগে তুমি বল, এত রাতে কোথায় চললে ? “
“ দিদি কে দেখতে। ও কাল রাতের মত আর বেরোতে না পারে, তাই জন্য। আবার কাউকে মেরে ফেলবে। “
“ কাল গিয়েছিলে দেখতে দিদি কে ?”

“ না, কাল যাইনি বলেই তো এত কাণ্ড ঘটেছে। আজ তাই যাচ্ছি। “
“ তুমি রোজ দেখতে যাও দিদি কে দেখতে ?”
“ হ্যা “
“ চলো, দুজনে একসাথে যাই আজ



সিঁড়ির ওই পাশের ঘরটা বন্ধ। আমরা দুজনে ঘরের বাইরে ধীরে ধীরে পৌঁছে গিয়েছি। ফিসফিস করে একটা শব্দ আসছে। কানের মধ্যে দিয়ে সেটা যাচ্ছে। না, সেটা অহল্যার গলা নয়। একটু আধিভৌতিক। ঠিক না বুঝতে পারার মত। কল্পিত বন্ধুর সাথে কথা চলছে নাকি ?
আমি শিঞ্জিনীর দিকে তাকালাম। আর শিঞ্জিনী আমার দিকে। দুজনেই কিছু না বোঝার মধ্যে আটকে আছি
এই মুহূর্তে নিজেদের নিঃশ্বাস আর ঘরের ভেতরের কথোপকথন, এক তরফা শুনতে পাচ্ছি। অনেক সতর্ক হউয়া সত্ত্বেও দরজায় আমার হাত লেগে কড়া টা নড়ে উঠলো সেই নিঃশব্দে। ভেতর থেকে কথা বন্ধ হয়ে গেছে।
তৎক্ষণাৎ দরজা খুলে গেল দড়াম করে।
আমি আর শিঞ্জিনীর ভয়ে কাঠ।

দরজার ওপারে, দাড়িয়ে আছে অহল্যা। সেই রক্তচক্ষু, ঠিক গতকাল যেমন দেখেছিলাম। পায়ে ঘুঙুর। ছমছম করে এগিয়ে এলো, “ আমি না সব্বাই কে মানা করেছিলাম, আমার ঘরের বাইরে আড়ি যেন না পাতে
তাহলে কেন এসেছিস তোরা ? জানিস না আমি ওর সাথে কথা বলি। আজ তোদের জন্য ও বিরক্ত হয়েছে, শুধু মাত্র তোদের জন্যে। এর শাস্তি পেতেই হবে তোদের। “

এই বলে ঝাপিয়ে পড়ল অহল্যা আমার দিকে। ছমছম শব্দটা এতটা ভয়ঙ্কর হবে সেটা আমি জানতাম না। হাতে একটা ছুরি নিয়ে এগিয়ে এলো আমার কাছে। আমি এই মরি কি সেই মরি। মনে জোর রেখে অহল্যার চোখে চোখ রাখলাম। মনে মনে ভাবলাম, আজ বোধহয় আমার শেষ রাত এটা।
হইহল্লার শব্দ পেয়ে ভদ্রসেন, সঙ্গে নিক্কন বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে।

“ আমাদের কথা আড়ি পেতে শোনার কে অধিকার দিয়েছে তোকে ? সেদিন কি জিজ্ঞেস করেছিলি আমায় আমি কার ......। “ এই বলে তেড়ে আসছে অহল্যা আমার দিকে। আমি ভয়ে শিটিয়ে যাওয়ার আগে একবার শেষ চেষ্টা করলাম।
ছিটকে গেলাম দরজার কোনায়। এই সুযোগ।
অহল্যা কে এই মুহূর্তে পেছন থেকে ধরে আছে ভদ্রসেন বাবু। পাশে দাড়িয়ে নিক্কন দেবী ফুঁসছেন। সুযোগটা কাজে লাগালাম। নিজেকে ছো মেরে সরিয়ে দিলাম সবার কাছ থেকে। দৌড় দিলাম।

“ আপনারা সব্বাই নিচে বাইজি ঘরে চলে যান, শিঞ্জিনী কে নিয়ে। ভদ্রবাবু আমি এই কেস সল্ভ করে ফেলেছি। আর একটু অপেক্ষা করুন।
আপনি অহল্যার হাত থেকে ওটা সরিয়ে না নিলে আপনাদের আরও ক্ষতি হয়ে যাবে
“, এই বলতে বলতে দৌড় দিয়েছি।

দূর থেকে দেখলে আমায় যে কেউ ভীরু ভাব্বে
এমন আচরণ আশা কেউই করতেই পারবে না। কিন্তু আমি জানি, আমি কেন দৌড়ে যাচ্ছি, ঠিক কোথায় যাচ্ছি।
কেস যতটা জটিল ছিল, এখন ততটাই জল ভাত।





বাইজিঘরে, যে বিছানায় আমার শোয়ার আয়োজন হয়েছিল, সেটায় আপাতত শুয়ে আছে অহল্যা। চোখ বন্ধ, প্রচণ্ড ভাবে ক্লান্ত। এখন রাত্রি একটা, ঘড়িতে দেখে নিলামগতকাল এই সময়ে একটা খুন হয়ে গিয়েছে। আর আজ, তার সমাধান আমি করতে চলেছি। একটু আগেও যেটা আমার কাছে স্পষ্ট ছিল না। নিজের প্রতি আবার আস্থা পাচ্ছি আমি। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে এক্সপিরিএন্স অবশ্যই ম্যাটার করে কেস সল্ভ করার ক্ষেত্রে

বিছানার সামনে দাড়িয়ে আছে ভদ্রসেন মশাই। তার বাম পাশে একটা সোফায় বসে আছে, নিক্কন দেবী এবং শিঞ্জিনী। একটু আগে পর্যন্ত বিন্নিদি র স্বামী এই ঘরেই ছিল। আমার কথামত সে এখন মেইন দরজার বাইরে।
ঘর একেবারেই থমথমে। তাই আমি শুরু করলাম।

ঘরে এই মুহূর্তে আছে আমি ছাড়াও আপনারা চারজন। অহল্যা কে বাদ রাখছি বিশেষ কারনে। এই চারদেওয়ালের মধ্যে এমন কিছু কথা আলোচনা হবে, যেটা বাইরের লোক জানলে শুধু লজ্জা নয়, এই জমিদার বাড়ির মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে। অবশ্য এই সবটাই আপনি বা আপনারা জানেন। প্রশ্ন হচ্ছে জেনেও কেন আমার কাছে সমস্তটাই চেপে গিয়েছিলেন।

কিছু কথা শুরু করার আগে আমি একটু বলতে চাই গোড়ার কথা, যখন আমাকে ভদ্রসেন মহাশয় ফোন করেন। উনি প্রথমেই আমাকে বলেছিলেন, ওনার মেয়েকে বাঁচাতে।
যে মানুষের দুটো মেয়ে, সে নিজের এক মেয়েকে নয়ত ‘বড়মেয়ে’ বলে সম্বোধন করে নয়ত বলে ‘মেয়েদের’
কিন্তু এখানে এসে আমি জানতে পারি, ওরা দুই বোন। শিঞ্জিনী তার দিদির প্রতি যত্ন নিচ্ছে, খেয়াল রাখছে, কিন্তু অহল্যা নয়। কেন ? মানসিক ভাবে অসুস্থ হলেও যে ঘরে দুটো বোন থাকে, তারা একে অপরের সবথেকে কাছের মানুষ হয়, যেখানে আবার তাদের মা তাদের কে ছেড়ে চলে গিয়েছে, আর তাদের বাবা নিয়ে এসেছে সৎ মা কে। কিন্তু এখানে পুরই ব্যাপারটাই আলাদা দেখলাম। অহল্যা এই মা কে পছন্দ করে না। শিঞ্জিনী কে বোনের লিস্টেও আনল না। কেন ? এটা প্রথম খটকা সেদিনই আমার মনে এসেছে। ব্যাপারটা তেমন গুরুত্ব দিয়নি প্রথম দিকে।

শিঞ্জিনীর পাশে দাড়িয়ে নিক্কন এর দিকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “ আপনি অনেক তাড়াতাড়ি নাচটা ছাড়লেন, কিন্তু কেন ? আপনার নাচ কিন্তু ভদ্রবাবু খুব ভাল ভাবেই উপভোগ করতেন। “
“ আপনি এসব কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।“, নিক্কন দেবীর স্পষ্ট উত্তর।

“ সব আমি বললে যে অন্যায় হবে। অনেক তথ্য গোপন করার ফলে যে আমি যে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম একবার। “
“ কি সব বলছেন আপনি ? আমি মিথ্যে কথা বলেছি ? “, এবারের কণ্ঠ ভদ্রবাবুর। কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, “ আপনি এই সব শোনানোর জন্য এত রাতে আমাদের বসতে বললেন ? কোথায় আমার মেয়ে কে ঠিক করবেন তা নয়, এসব শুনিয়ে আমাদের কি বোঝাতে চান আপনি ? “

“ শিঞ্জিনী, তোমার জামাইবাবু কে একটু শান্ত হতে বল। এত উত্তেজনা শরীরের জন্যে ভাল নয়।“
ওপর থেকে বাজ পড়লে যেমন হয়, তেমন অবস্থা হোল।
“ মাথার ঠিক আছে আপনার ? “, এবার ভদ্রবাবুর কণ্ঠে একটু গতি রাশ পেয়েছে, তোতলানোর ভঙ্গিমায়।

“ ভুল কই বললাম
শিঞ্জিনী তো আপনার মেয়ে নয়, ও তো নিক্কন দেবীর বোন। আর নিক্কন দেবী, আপনার স্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু আসলে উনি এক আধুনিক বাইজির মেয়ে, তাই না ? সেই কলকাতার পুরনো গলির বারবনিতা নিজের স্ত্রী থাকাকালীন কলকাতা মাঝে মধ্যে সেজন্যই তো যেতেন। আর তাছাড়া আপনার শরীরে তো জমিদারের রক্ত, কিছু গুন তো অবশ্যই আপনি পাবেন। তাই ওনার প্রেমে পড়লেন, অথবা বলা চলে শরীরী প্রেমেএমন অবস্থায় আপনার স্ত্রী মারা যান। আর আপনার রাস্তা পরিস্কার হয়ে যায়। তাই বিয়ে করে নিয়ে আসেন এই জমিদার বাড়িতে, সঙ্গে আসে তার বোন শিঞ্জিনী
“ এসবের কি প্রমান আছে আপনার কাছে ? “, ভদ্রসেন এর রক্তচক্ষু এবার দেখা গেল।

“ আসছি সব আস্তে আস্তে। যখন নিক্কন শব্দটা আমার কানে লাগলো, গতকাল রাত্রে বাংলা অভিধান ঘাটলাম
নিক্কন মানে, ঝঙ্কার। স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে, নুপুর বা বীণার ধ্বনি। তখনই মনে পড়ল, শিঞ্জিনী নামের মানে এমন একটি নুপুর যেটা সুমধুর ঝংকার তুলতে সক্ষম। দুটো নামের মধ্যে যথেষ্ট মিল। এই মিল একমাত্র দুই বোন অথবা অথবা মা-মেয়ের মধ্যে হয়। এদিকে অহল্যার মানেটা সম্পূর্ণ আলাদা।
প্রথমে এত অমিলের কারন বুঝতে পারিনি। পরে কাল রাত্রে ব্যাপারটা মাথায় ক্লিক করল। শিঞ্জিনীর সাথে তার দিদি নিক্কন এর মুখের দারুন মিল রয়েছে। শিঞ্জিনী যে কেয়ারিং দেখাচ্ছে, সেটা পুরোটাই দেখানো। কারন অহল্যা একবারের জন্যও নিজের বোনের কথা উল্লেখ করেনি।  “


“ একটা নামের মানে নিয়ে এতদুর চলে গেলেন ? “, হাসতে থাকলেন নিক্কন দেবী।
বেশ কিছুটা সময় ওই অট্টহাসি পুরো ঘরটা জমিয়ে তুলেছিল এই রাতদুপুরেও। তারপর আবারও বললেন, “ সত্যি, আপনার মত কলকাতার মেয়েছেলে, একটা তিল কে কিভাবে তাল করতে পারেন, সেটাই দেখছি এতক্ষণ ধরে। কোন প্রমানের বালাই নেই
জোর করে কিছু একটা বানিয়ে দিচ্ছেন গাঁজাখুরি গল্পের ন্যায়। আছে কোন জান্তব প্রমান আপনার বলা তথ্যের ওপর ? “


“ আমি প্রমান “।
শব্দটা এলো পেছন থেকে। বিছানায় শুয়ে থাকা অহল্যা জেগে উঠেছে। সঙ্গে আমার মুখে হাসিও ফুটে উঠেছে।
এই সময়ে ভদ্রসেন বাবু আর নিক্কন এর মুখটা ছিল দেখার মত। ভূত দেখে মনে হয় না এতটা ভয় পায়


“ আপনাদের ঘাবড়ে যাওয়ার কিছুই নেই। অহল্যা সুস্থই আছে। ওর মধ্যে কোন সমস্যা ছিলই না। আমারই ভুল, প্রথমে সাবজেক্ট চিনতে পারিনি
আসলে নিজের ইনভেস্টিগেশনের জীবনে এমন কেস এই প্রথম, তাই একটু হোঁচট খেয়েছিলামআজ সকালে অহল্যা কে পাওয়া যায়নি তাই না ? আসলে ও লুকিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল আমার সাথে দেখা করতে। সঙ্গে আরও একজন ছিল অবশ্য, সেটা পরে জানবেন। এতক্ষণ ধরে যে কথা গুলো বললাম, সেগুলো অহল্যার বলা কথা। বাকিটা আমি মিলিয়ে দিয়েছি মাত্র। “

“ দেখুন, এটা তো আমাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার। সেটা নিয়ে মাথা না গলালেই ভাল। আপনাকে যেই কারনে আনা হয়েছে, সেটা তাহলে মিটে গেছে যখন, তখন আর কথা বাড়িয়ে কি লাভ। “, ভদ্রসেন বাবু অনুরোধের স্বরে বললেন এই কথাগুলো, ইতি টানার ভূমিকায়।

“ কেস সল্ভ তো এখনও বাকি আছে মশাই
দুটো নিস্পাপ প্রান চলে গেল, তার দায় অহল্যার উপর পড়লে সেটা তো আমি মেনে নেব না। “

“ মানে ? অহল্যাই তো খুন করেছে। এতে আবার কিসের রহস্য। ও আচ্ছা, আপনাকে গিয়ে ও বলেছে যে ও খুন করেনি, আর আপনি এটাও বিশ্বাস করে নিয়েছেন। বাহ , চমৎকার। একটা রোগীর কথা আপনি কি করে ? “, নিক্কন দেবী ।

“ অহল্যা রোগী নয়, আপনারা ওকে রোগী বানিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন
মা হারা মেয়ের নামে এই জমিদার বাড়ির অর্ধেক সম্পত্তি তো লেখাই রয়েছে। ওকে যদি রোগী বানানো যায় এবং তার সাথে খুনের একটা যোগাযোগ করিয়ে ফেলা যায়, তাহলে এই ঘর থেকে ওকে সরানো সহজ হবে।
আমি এখানে আসা থেকেই দেখছি, ভদ্রবাবু খুনের কিনারা না করিয়ে তার মেয়েকে রোগীর তকমা দেওয়াতে মেতে উঠেছেন। কিন্তু উনি বুঝতে পারেননি, আমার নাম দাক্ষায়ণী। দেবীর দুর্গার মত আমার দশটা হাত নেই, কিন্তু দশ দিকে খেয়াল রাখাটা আমার কাছে কোন ব্যাপার না।
একজন অশরীরী যেমন খুন করতে পারে না, তেমনই একটা ছোট্ট মেয়ে গলার নলি চিনে সেটা ক্ষুর দিয়ে টানতে পারে না। “


সব্বাই চুপ করে আছে দেখে আমি একটু সাহস পেলাম। এটুকু বুঝলাম সত্যকথা ওদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে।

“ পারিজাত ছেলেটি কেমন একটু বলবেন ? “
“ ভাল ছেলে, আমি তো আগেই বলেছি। আর কি শুনতে চাইছেন ? “, ভদ্রসেন বাবু বললেন।
“ এই ঘরে ও কি শুধুই কাজ করতে আসত ? “
“ মানে ? “
“ আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করি, ঠিক আছে ? এই পারিজাতের সাথে অহল্যার কি কোন সম্পর্ক আছে ?”
“ না “
“ আচ্ছা, তাহলে আর একটা প্রশ্ন করি ? পারিজাতের সাথে আপনার স্ত্রীর কোন সম্পর্ক আছে ? “
“ হোয়াট ? আপনি কি সব বলছেন ? “

এই সময় নিক্কন দেবী ফুঁসলে উঠলেন। “ আপনি তখন থেকে অনেক অভদ্রতামি করছেন, এবার চুপ করুন, নয়ত ঘর থেকে বার করে দেব। “
“ অভদ্রতামি ? আমি ? আর আপনি ? নিজের স্বামীর অগোচরে নিজের সতীনের মেয়ের ভালবাসা কে নিয়ে শরীরী খেলায় মেতে উঠতে আপনার লজ্জা করেনি ? আপনি আমায় ভদ্রতা শেখাবেন ? “

ঘরের মধ্যে আবারও সব্বাই চুপ। পরমানু বোম আঘাত করল যেন।

“ নিক্কন দেবী, আপনি গতকাল রাত্রে কোথায় ছিলেন ঠিক যেই সময়ে খুন হয় ? “

“ ও ঘরেই ছিল। “, উত্তরটা এলো ভদ্রসেন বাবুর মুখ থেকে, যেটা আমি ভাবিনি।

“ আচ্ছা, আপনি কোথায় ছিলেন ? আর জানলেনই বা কি করে যে আপনার স্ত্রী সেই সময়ে ঘরে ছিলেন ? তাছাড়া খুন টা কোন সময়ে হয়েছিল, আপনি জানলেন কি করে একটু পরিস্কার করে বলবেন ? “
কোন উত্তর আসেনি কারোর কাছ থেকে আবারও


ভদ্রবাবুর সিকে তাকিয়ে আমি বললাম জোর গলায়, “ আপনি বিন্নি দি র গলায় কোপ মেরেছিলেন। গতকাল আপনিই নিজে এসেছিলেন আমার এখানে, ওই পেছনে
বিন্নি দি কে মেরে ওখানে চলে গেলেন, আর দোষটা চাপল অহল্যার ওপর
“ আপনি মিথ্যে বলছেন ? কি প্রমান আছে আপনার কাছে ? ”, নিক্কন দেবী ঝাঁঝিয়ে উঠলেন।
ভদ্রসেন বাবুর নীরবতা দেখলাম, মাথা নিচু করে।
“ এই ক্ষুরটা, এটায় এখনও রক্তের দাগ লেগে কালকের। আরও একটা রক্তের দাগ এর বাটে রয়েছে, সেটা মনে হচ্ছে আর একটু পুরনো। “
“ কার ক্ষুর এটা ? “, নিক্কন দেবী হামলে পড়লেন।
“ জমিদার বাড়িতে ছেলে এমনিতেই কম। বিন্নিদির স্বামী, যার একগাল দাঁড়ি, প্রমান করে সে জীবনে নিজে থেকে কখনই দাড়ি কাটেনি। আর একটা পঙ্গু লোক, এভাবে এই কাজ করতে পারে না।
এই ক্ষুর টা আমি আপনার ঘরে থাকা আয়না আলমারির মধ্যে থেকে পেয়েছি
এর পর নিশ্চয়ই প্রমান দরকার নেই ? “
অবশ্যই দরকার। শুধু মাত্র এটুকু জিনিস পেয়ে কাউকে খুনি আপনি বলতে পারেন না। আর এটা যদি আমার স্বামী খুন করে থাকে, তাহলে আগের চাকরকে কে খুন করল ? “

“ নিকু, আর কথা বাড়িও না। উনি যখন বুঝতে পেরেছেন, তাহলে আর কথা চেপে রেখো না। “, ভদ্রবাবুর গলার স্বরে হ্রাস এসেছে। একজন অপরাধী মুলক গলা ঠিক যেমন হয়, তেমনই।

“ কিন্তু তুমি... “

“ আহ ! তুমি যা বলেছ তাই করেছি। এরপর আর নতুন করে সমস্যা তৈরি করো না। হ্যাঁ, ম্যদাম, আমি খুন করেছি। এসবের মূলে আমি দায়ী। কিন্তু সেটা কাউকে জানতে দিতে চাইনি। তাহলে আমাদের বংশের মান সম্মান ধুলোয় মিলিয়ে যাবে। তার থেকে যদি দোষটা অহল্যার ঘাড়ে চাপানো যায়, তাহলে আর যাইহোক, সম্পত্তি রক্ষাটা অন্তত করতে পারব। “

মুখে হাসি এলো ঠোটের প্রান্তে, “ আমি জানতাম
নিজের ভুল ঢাকতে একটা নিষ্পাপ মেয়েকে জলে ফেলে দিচ্ছিলেন... কিন্তু ওইটুকু মেয়ে...”

“ আমি ভুল করেছি, আমি ভুল করেছি। মা মড়া মেয়েটার প্রতি অন্যায় করেছি। “
“ অন্যায় তো শুধু একজনের ওপর নয়, আপনি বিন্নির ওপরও অন্যায় করেননি ? বলুন ? “
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলেন ভদ্রসেন বাবু।

আমি শুরু করলাম আবার, “ আপনি বিন্নির দেবির স্বামীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে, তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেননি ? বলুন ? চুপ করে থাকবেন না, বলুন ভদ্রসেন সোম
নিক্কন দেবীর প্রতি হয়তো আপনার নেশা কেটে গিয়েছিল, তাই এবার নতুন শরীর আপনি আবার নিজের শরীরে জমিদারের শক্ত প্রমান করলেন। চরিত্র টা পালটাতে পারলেন না আর। “

ভেঙ্গে পড়লেন ভদ্রসেন বাবু, তারপর কিছুটা সময় নিলেন কথা বলার জন্য।
“ বিয়ের প্রথম প্রথম সবটাই ঠিক ছিল। নিক্কন কে ভালবাসতাম, কিন্তু ওর শরীরটা পুরোনো হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে। তারপর নজর পড়ল বিন্নির ওপর।
এদিকে নিক্কনের শরীরের প্রতি অবহেলা, ওর তেষ্টাকে দমাতে পারেনি। আমি আসলে পারিজাত কে ডাকতাম বিভিন্ন সময়ে। আপনি একটা কথা ভুল বলেছেন, পারিজাত আমার কথাতেই আসত এখানে। কোলকাতায় আমি যেতাম মাঝে মধ্যে স্বাদ পরিবর্তনের জন্য। রেখে যেতাম পারিজাত কে। আমি আর আমার স্ত্রী, নিজেদের শরীরের খিদে মেটাতে চেয়েছি মাত্র
 কিন্তু কখনও ভাবিনি এমনটা হয়ে যাবে। “, এক নিঃশ্বাসে বলে গেল ভদ্রসেন মশাই, নিক্কনের দিকে তাকিয়ে।

“ সমস্যা সেদিন শুরু হয়, যেদিন পারিজাতের ব্যাপারে অহল্যা আপনাদের বলে। আপনাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সেটা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না। সব কিছু ঠিক করতে, হাতে নিলেন চাবুক, ভাবলেন অহল্যা তাতে চুপ করে যাবে, সবটা ভুলে যাবে। কিন্তু সেটা হোল না।
এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ আপনারা গড়তে দিতে চাননি, কারন তাই হলে সমস্ত খেলা নষ্ট হয়ে যাবে।  নিক্কন চায়নি এই শরীর টা হাতছারা হোক। আপনিও চাননি কোলকাতায় যাওয়া বন্ধ হোক। কিন্তু অহল্যা নিজের মা মারা যাওয়ার পর, এই ছেলেটার প্রতি আরও দুর্বল হয়ে যায়। প্রতি রাতে লুকিয়ে পেছনের রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে দেখা করত ওরা। কখনও ঘরে ডেকে কথা বলত ওরা দুজনে, আর আপনারা ভাবতেন পুরো উলটো।
জেনে রাখুন ভদ্রবাবু, আপনার ভাবনার কয়েকগুণ এগিয়ে ভাবে আপনার স্ত্রী। নিক্কন আসলেই এখানে এসেছে আপনাদের সম্পত্তির লোভে। আপনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে সব কিছু হরন করার আগে ওদের দরকার অহল্যা কে সরানোর। নিজের উত্তরাধিকারি তো কেউই তৈরি হয়নি
সবটা শিঞ্জিনীর ওপর ভর করে হয়েছে।
ষড়যন্ত্র কোনভাবেই আঁটতে পারছিল না নিক্কন। কিন্তু তারপরই তারপর একটা সময় আসে।

আপনাদের পুরনো চাকর সেদিন ঘরেই ছিল।
নিক্কন ইচ্ছে করেই পারিজাত কে ডাকল আপনার দ্বারা এবং প্রায় প্রকাশ্যে অশ্লীল কিছু দৃশ্যপট তৈরি করল।
এমন একটা আপত্তিকর মুহূর্তে দেখে ফেলে সেই চাকর
সেটা নিক্কন এর চোখে এরায়নি।
নিজের মালিক কে এই মহিলা ঠকাচ্ছে। ঠিক করল ভদ্রবাবু কে সবটা জানানোর। সেটাই কাল হোল ওর। ও জানতই না যে আপনি সবটাই প্রথম থেকে জানতেন। এদিকে ঘরের চাকর এসব অন্দরমহলের কথা জেনে গেলে মুশকিল। কথা পাঁচকান হতে বেশী সময় লাগবে না। তাই ঠিক করলেন, চাকরটি কে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলতে হবে। উস্কে দিল নিক্কন নিজে।
সব্বার অলক্ষ্যে বাইজিঘরের সামনে ভদ্রসেন ডাকলেন চাকর কে।
আর তখনই ক্ষুর দিয়ে...
ব্যাস কাজ শেষ। আর হ্যা, আপনার বানানো গল্পটা ভাল লেগেছে। সেদিন অহল্যা মোটেও ওখানে যায়নি। আপনি ছাদেও ওঠেননি। কিন্তু অহল্যার ওপর দোষ চাপাতে হলে এই গল্পটা জরুরী ছিল।
কিন্তু গতকাল বিন্নি দি কে কেন মারলেন ? হতে পারে ও কিছু বলেছে আমায়, কিন্তু তার জন্য আপনার ওকে মারার মত কারন তৈরি হয়েছিল কি ? “

চুপ থাকার পর মুখ খুললেন ভদ্রবাবু, “ আমি যে অহল্যার ওপর হাত তুলেছি, এটা আপনার জানা মানেই এর পর আরই কিছু আপনাকে ও বলবে ঠিকই। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই ওকে চুপ করিয়ে দিতে হোল। সেটাও নিক্কনের সাথে পরামর্শ করেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও আপনি সবটাই জেনে গিয়েছেন


“ হ্যাঁ, তবে এটা অবশ্য পারিজাত নিজে মুখে আমায় বলেছে। “, চমকে গেল নিক্কন আর ভদ্রসেনবাবু।
“ পারিজাত ? “
“ কি হোল চমকে গেলেন নাকি নামটা শুনে ? আমিতো ওকে সকাল থেকেই খুজছিলাম। তারপরে পেলাম, কিভাবে সেটা আপাতত আপনাদের না জানলেও চলে। তবে এটা শুনলাম, কাল তো আপনি ওকে ডাকেননি। পারিজাত এমনি এসেছিল, দেখা করতে এসেছিল অহল্যার সাথে, প্রকাশ্যে
পারিজাত আর শিঞ্জিনী কথা বলছিল ঠিকই, কিন্তু ওদিকে অহল্যা কথা বলতে চাইলেও সেটা করতে দিচ্ছে না শিঞ্জিনী ছাদ থেকে প্রথমে আমি দেখে ভুল বুঝেছিলাম।
ভদ্রবাবু বলেছিলেন ওনারা বন্ধু। কিন্তু এই বয়স টা তো আমিও পেরিয়ে এসেছি, তাই মুখে কিছু না বললেও ওদের মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি


“ কিন্তু দাক্ষায়ণী দেবী, প্রথম দিনের ঘটনা আমি হয়তো কিছুটা বানিয়ে বলেছি। সত্যি কথা, আমি ছাদে যাইনি। অহল্যা ঘুমিয়েছিল নিজের ঘরে। কিন্তু সেদিন ঘুম ভেঙ্গেচ্ছিল নুপুরের আওয়াজেই। শুধু আমি নই, নিক্কন আমার সাথে ছিল। ও শব্দটা শুনেছিল। বাইরে গিয়ে কাউকে দেখতে যেমন পাইনি। ভেতরে ভেতরে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। খুন টা ততক্ষণে করা হয়ে গিয়েছে, লাশ পড়েছিল বাইজি ঘরের পাশেই। মনে মনে শঙ্কা তৈরি হোল, একি ভৌতিক কাণ্ড শুরু হোল নাকি রাতারাতি
তারপরেই দুজনে মিলে স্থির করলাম, আপনাকে ডাক পাঠানোর। নুপুরের আওয়াজের রহস্য সমাধান হোক, সঙ্গে অহল্যার ওপর দোষ পড়ুক। “

“ আপনি বলতে চান, নুপুরের আওয়াজ টা সত্যি হয়েছিল ? “, কথাটা বলতে বলতে আমি ওর দিকে তাকালাম।
“ হ্যা, আমি সজ্ঞানে ছিলাম। মানসিক অশান্তিতে এমনিতেই ঘুম আসছিল না আমার। “
“ গতকালও আমি এমন একটা আওয়াজ টা পেয়েছিলাম। সেটা অবশ্য খুন করার আগেই। তখনও বুঝতে পারছিলাম না আসল ব্যাপার টা কি। কিন্তু আসল রহস্যটা ধরতে পেরেছি, আজ সকালে। চারিপাশে ঘুরতে ঘুরতে পেলাম একটা ঘুঙুরের অংশ, চকচক করছে। “
“ তারমানে সত্যি কেউই কাল এসেছিল ? অহল্যা কি সত্যি তাহলে... “
কথাতার গুরুত্ব আমি তেমন না দিয়ে ডাকলাম,
“ পারিজাত, একবার ভেতরে এসো তো। “, পেছনের দরজার দিকে তাকিয়ে






 
চারিদিকটা বেশ শান্ত এখন। রাত দুটো বেজে গিয়েছে। কারোর চোখে ঘুম নেই।
পারিজাত ঘরের একদিকে দাড়িয়ে আছে। আমি আর সময় নষ্ট করিনি।
“ তুমি অহল্যা কে এখনও ভালোবাসো ? “
কিছু না বলেও ঘাড় নেড়ে নিজের সম্মতি জানিয়ে দিল সেই ছেলেটি।
“ তুমি মাঝে মধ্যে ওই দিক দিয়ে রাতের বেলা ওর সাথে দেখা করতে আসো, অহল্যার সাথে সুখ দুখের কথা বলবে বলে তাই না ? “, এবারেও ঘাড় নাড়ল সে।

ভদ্রসেন বাবু এবার হঠাৎ একটু অশান্ত হয়ে গেলেন, “ আপনি বলছেন ছেলেটা নুপুর পড়ে... “
“ আমি এখন কিছু বলিনি। একটু অপেক্ষা করুন। এই রাত এখনও বাকি আছে। “, আমার কথার দৃঢ়তা আবারও ওনাকে চুপ করিয়ে দিল।

“ পারিজাত, তুমি এখন এই মুহূর্তে অহল্যা কে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে ? “
“ একি বলছেন ম্যাদাম, এ আমি পারব না। “
“ তোমাকে পারতেই হবে নয়ত, নয়ত... “, আমার ভেতরে ভেতরে যেটা চলছে সেটা আমি কাউকে বোঝাতে পারিনি।
অহল্যার দিকে তাকালাম, “ এটাই সময় অহল্যা, পারিজাতের কাছে চলে যাও। “

মেয়েটা বিনা কথায় নিঃসঙ্কোচে বিছানা থেকে নেমে গেল। ধীরপায়ে এগিয়ে যাবে পারিজাতের দিকে, ঠিক তখনই ঘটল সেই ঘটনা যার জন্য আমি প্রতীক্ষা করছিলাম।
এতক্ষণের কথা বার্তায় সব্বাই ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি যে শিঞ্জিনী ঘরের এক কোনে থেকে থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে পরিবর্তন করছে।

একটা বাজখাই গলা, একটি এগারো বছরের মেয়ের থেকে বেরোবে, এটা কল্পনার অতীত, আমি ছাড়া এই ঘরের সব্বার কাছে অন্তত

“ কে কোথায় আছিস রে, সব্বাই আয়। বেধে ফেল ওই ব্যাটা ছেলে পারিজাত কে। চাবুক দিয়ে ওর পিঠ আমি ফালাফালা করে দেব। রক্ত রক্ত করে দেবই চারিদিক। তারপর এই হারামজাদীকে আমি নিজের করে নেব। কিরে , সুখ দিবি না আমায় ? দিবি না আমায় তোকে ভোগ করতে ? তোর পুরুষের থেকে আমি আরও ভাল করে রাখব। আয় আয় আয় ! “

এই কথা গুলো বলতে বলতে শিঞ্জিনী প্রায় দৌড়ে আসে অহল্যার দিকে। ঠিক তখনই আমি দাড়িয়ে যাই এদের মাঝখানে, হাতে ঘুঙুর নিয়ে। মুখের সামনে রেখে বাজাতে থাকি। শিঞ্জিনী সেটা দেখে থমকে দাড়িয়ে যায়, আমার দিকে তাকায়। “ তুই কে ? “, সেই সাঙ্ঘাতিক গলায় আমাকে জিজ্ঞেস করে।

“ তুই কে ? “, আমি উলটে প্রশ্ন করি।
“ আমাকে তুই বলা ? জমিদার অধিরাজ সোম কে তুই বলা ? দারা তোকেও শেষ করব

“ তুই মরে গেছিস। এটা তোর সময় না। এই বাচ্চা মেয়েকে ছেড়ে দে। “
“ আমি ফিরে এসেছি
আমি কোথাও যাব না। সুখ ভোগ করব। ওর নরম তুলতুলে উরুতে মুখ রেখে ওপর পর্যন্ত গন্ধ নেব। ওর চুলের মুঠি ধরে ...।

কথার মাঝেই ঠাটিয়ে চড় কষালাম আমি। আর ঠিক তখনই শিঞ্জিনী জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেল।
এই মিনিট খানেক ঠিক কি হোল, কেউই বুঝতে পারল না। আমি এটাও জানি, এমন কিছু একটা যে ঘটবে, সেটা কেউও জানত না।
“ এই নিন, শিঞ্জিনীর ঘরে ছিল “, এই বলে ডাইরি টা তুলে দিলাম ভদ্রসেন বাবুর হাতে।


ডি আই ডি, অর্থাৎ ডিসোসিয়েটিভ আইডেনটিটি ডিসঅর্ডার
এটি একটি মানসিক রোগ। প্রচুর চিন্তা, অথবা স্ট্রেস অথবা এমন কোন ঘটনা যেটা মানসিক ভাবে মেনে নেওয়া কষ্টকর, তার ফলস্বরূপ এই রোগের সূচনা হয়। এই রোগের আউটপুট খুব অদ্ভুত এবং চিন্তার বিষয়। রোগী নিজের ব্যাক্তিত্ত ছেড়ে অন্য পারসোনালিটি তে ট্রান্সফার হয়ে যায়। সহজ ভাষায় বললে, রোগী নিজের সত্ত্বা কে ভুলে, প্রভাবশালী সত্ত্বা কে নিজের মনে করে।
উদাহরন স্বরূপ একজন ছেলে নিজের সত্ত্বা পরিবর্তন করে এই রোগের স্বীকার হলে সে একজন মেয়ের মত ব্যবহার করতে পারে, অথবা একজন ইয়ং যুবতী হয়তো একজন ৭০ বছরের বুড়ির মত ব্যাবহার করছে। আপাত ভাবে এগুল দেখলে মনে হয়, রোগী এটা ইচ্ছে করে করছে। আসলে তা মোটেও নয়। ব্যাপার টা নিজে থেকেই হয়।
আলাদা পারসোনালিটি একবার চলে এসে সেটা কখনও ১ ঘণ্টা, কখনও ২ ঘণ্টা আবার কখনও সারাদিন থাকতে পারে। রোগী যখন স্বাভাবিক হয়ে নিজের সত্ত্বায় ফিরে আসে তার আর কিছুই মনে থাকে না।
পৃথিবীতে এমন বহু কেস হয়েছে, যার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে।
এর ট্রিটমেন্ট একমাত্র থেরাপি, যার নাম কগনেটিভ বিহেভার‍্যাল থেরাপি। সঙ্গে ডিপ্রেশন বা আঞ্জাইটি এর ট্রিটমেন্ট চলবে। একজন ভাল সাইকিয়াটিসট এর পুরোটাই সমাধান করার চেষ্টা করেন।  
শিঞ্জিনী একজন ডি আই ডি এর রোগী। কবে থেকে এটা ওর সাথে ঘটেছে সেটা জানা নেই।
তবে অন্ধকার পাড়ায় থাকতে থাকতে অনেক কিছুই অবচেতন মনে ঢুকে যাওয়া সম্ভব। নিজের চারপাশে শরীরী খেলা, সময়ের আগে নজরে এলে একটা বাচ্চা মন দুষিত হয়। নিজের মা অথবা দিদি কে অন্যের সাথে পাশের ঘরের বিছানায় দেখা, বারবার নতুন লোক, এগুল সব্বাই নিতে পারে না। শিঞ্জিনীও হয়তো পারেনি। ভেতরে ভেতরে হয়তো ঝড় উঠেছিল, নিজের অজান্তে।
এদিকে শিঞ্জিনী আসে এই জমিদার বাড়িতে। কোন ভাবে এই জমিদারের ইতিহাস টা তার কানে যায়
ডাইরিটা কিভাবে হাতে পেয়েছে তা আমার জানা নেই। হয়তো ভদ্রসেন বাবুর অনুপস্থিতিতেই সেটা ঘটেছে। ডাইরির প্রতিটা কথা অত্যন্ত রসঘন করে লেখা। যে কেউই এই অশালীন, কামুক লেখা পড়ে আরও উৎসাহিত হবেই।
আপনিও এটা পড়েছেন , বারবার, আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন ভদ্রসেন বাবু। যে কোন বয়সের ছেলে অথবা মেয়ে যদি এই বর্ণনা পড়ে, তাহলে কামের প্রতি একটা বিকৃত ধারনা তৈরি হবে, এটা স্বাভাবিক। শিঞ্জিনী এই ডাইরি একবার নয়, বারবার পড়তে থাকে। অবচেতন মন আস্তে আস্তে নিজের খোরাক খুজে পায়

দিদির বিয়ের পর হয়তো সবটা ঠিক হয়ে যেত, কিন্তু এদিকে আবার এই জমিদার বাড়িতে চোখে পড়ে গেল সেই একই ধরনের অযাচিত শরীরী খেলা
নিক্কন আর পারিজাত হোক বা ভদ্রসেন আর বিন্নিদির, সবটাই সম্পর্কের বাইরে, অসামাজিক রতি
বাস্তবের সাথে নিজের কল্পনা কে গুলিয়ে ফেলল
বয়সের এই সময়ে ওরা ক্ষতিকারক জিনিস গুলই ব্রেনে স্টোর করবে, এটাই স্বাভাবিক। নিজেকে ক্রমশ শিঞ্জিনী থেকে হারিয়ে ফেলতে থাকল। এদের শাস্তি দিতে হোক অথবা নিজের খিদে মেটাতে হোক, নিজের মধ্যে দুটো পারসোনালিটি এর জন্ম দেয়। একটা অধিরাজ সোম,যে নিজের অজান্তে খিদে মেটাতে আসে, অপর জন হয়তো সেই নারীর মধ্যে কেউ, যারা জমিদারের অত্যাচারের ফলে মৃত্যুবরন করে, ভেতরে ভেতরে ক্রোধের আগুন জালিয়ে রেখে।
প্রকৃত ভাবে কটা পারসোনালিটি ওর মধ্যে আছে সেটা আমি জানিনা, যতক্ষণ না সঠিক কাউন্সেলিং হয়। আপাতত আমার কাছে সঙ্খ্যায় দুটো। রাতে অধিরাজ এক নম্বর, আর তার আগে অথবা পরে, পায়ে নুপুর পড়ে সারা জমিদার বাড়ি টহল, কোন এক মহিলার সত্ত্বায়
কখন কে প্রকট হয় বোঝা মুশকিল। তবে আমি একটা রিস্ক নিয়েছিলাম মাত্র। পারিজাত আর অহল্যা কে পাশাপাশি দেখলে হয়তো ওর মধ্যে অধিরাজ সোম জেগে উঠবে। নাও হতে পারত, তখন আমায় অন্য ফন্দি ভাবতে হত। “


“ তারমানে আপনি বলছেন, সেদিন... “
“ হ্যা, সেদিন ও এসেছিল। আপনাদের ঘরের বাইরে লুকিয়ে লুকিয়ে হয়তো আপনাদের ফলো করছিল। গতকাল ঘরের বাইরে এই ঘুঙুরের একটা অংশই পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। শিঞ্জিনী কে বলে তো ওর ঘরে প্রবেশ করা যাবে না, তাই কাল অহল্যা কে নাটকটা করতে বলেছিলাম, যাতে আমি আপনাদের সব্বার ঘর একবার দেখে নিতে পারি। শিঞ্জিনীর ঘুঙুর টা ওখানেই পড়ে ছিল। আর নীচের ড্রয়ারে ডাইরিটা। “
 
একটু সময় নিয়ে বললাম,
“ সন্দেহ টা সেদিন বিকেলে হয়। ছাদে দাড়িয়ে আমি দেখলাম, পারিজাত কে ও ঠিক সহজ চোখে দেখছে না। এটা ঠিক ক্রোধ নয়, তার থেকেও একটু বেশী কিছু। আমার কাছে সকালে যে ভাবে ও এসেছিল, সেই চোখ তখন মিসিং। সিম্পটম ছিল বেশ, কিন্তু প্রমান নেই।
সকালে ঘুরতে গিয়ে এই ঘুঙুর টা পাই, দুই দুই চার হয়। এর পর দরকার ছিল একটা সঠিক জোরালো কিছুর। ততক্ষণে অহল্যার সাথে প্লানিং হয়ে গিয়েছে আমার। শিঞ্জিনীর ঘরে রাতে যখন গিয়েছিলাম, আড়াল করে দেখছিলাম, নিজের পায়ের ঘুঙুর টা ভাল করে দেখতে দেখতে ও লুকিয়ে রাখল। ওর মুখে ছিল অন্য ধরনের এক হাসি। একটা রোগীর সব গুন ওর মধ্যে ছিল। বাকিটা একটা টাকটা প্রমান, আপনাদের সামনে আনা।
একটা ট্রিগার যথেষ্ট সাধারন থেকে রোগীর সত্ত্বায় পরিবর্তন করার। মুখে বললে বিশ্বাস করতেন না, তাই আজ রাতের নাটকটা আপনাদের সামনে করতেই হোল। আমি জানতাম শিঞ্জিনী আমাকে হতাশ করবে না।
 

পরিশিষ্ট -

কলকাতা ফেরার ট্রেন ধরব। খুব সকাল সকালেই বেড়িয়ে এসেছিলাম জমিদার বাড়ি থেকে। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে একটু দেখা করার দরকার হয়েছিল। সবটাই ওনাদের হাতে ছেড়ে এসেছি। যেটা ভাল বুঝবেন করুক, আমি একজন অনামি সামান্য ইনভেস্তিগেটর মাত্র।
কিন্তু একটা কথা আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না। বেড়িয়ে আসার সময় অহল্যা আমায় প্রনাম করতে গিয়ে কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিল, “ দিদি, গতকাল তুমি গ্রামে কোথায় গিয়েছিলে ? আমাদের সাথে দেখা হওয়ার আগে ? “

আমি সত্যিটা বললাম, পারিজাতের বাড়ি গিয়েছিলাম। অহল্যা চমকে উঠলো এবং বলল, “ পারিজাতের মা আমার মা মারা যাওয়ার পরই মারা গিয়েছে, অসুস্থতার কারনে
আমার মা আসলেই পারিজাত কে নিজের জামাই করার স্বপ্ন দেখেছিল। কারন পারিজাতের মা আর আমার মা ছিল ছোট্টবেলার বান্ধবী। “
আমি বাকিটা বলার সাহস পেলাম না। কার সেই মুহূর্তে আমি নিজেও বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। গতকাল আমার সাথে কে কথা বলল ?

ট্রেনের আওয়াজ আসছে, প্ল্যাটফর্মে ঢুকবে এখুনি।


 
<< সমাপ্ত >>






 

 




 
 









 

Comments