সারবিয়ান ডান্সিং লেডি
ভাইরাল একটি খবর চোখে পড়ছে বেশ কিছু দিন ধরে, অশরীরী গন্ধ রয়েছে। ভাবলাম একটু দেখে নেওয়া যাক, আর আপনাদের জানিয়ে দেওয়া যাক, কি কিসসা।
একটা ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে।
একজন মহিলা, রাতের অন্ধকারে নির্জন রাস্তায় একা একা নেচে চলেছে। কোন কিছু তোয়াক্কা সে করে না। নিজের খেয়ালে নাচতে গিয়ে হঠাৎ সে থেমে যায়। তার মনে হয়, সে একা নয়, তাকে কোন একজন দেখছে, পেছন থেকে। নাচ বন্ধ করা মাত্রই, শরীরের কোন এক জায়গা থেকে ছুড়ি বার করে উলটো দিকে ধেয়ে আসে, প্রচণ্ড গতিবেগে, মুহূর্তের মধ্যে, ক্যামেরা ম্যানের দিকে। ঠিক তখনই ক্যামেরাম্যান যিনি, তিনিও পেছনে দৌড় দেন। শেষের দৌড়ের মুভমেন্ট গুলো শুধু মাত্র ধরা গিয়েছিল, ব্যাস। ভিডিও সমাপ্ত।
এই মুহূর্তের ভাইরাল একটা ভিডিও। যদিও এটা আসল ঘটনা কিনা জানা নেই। তবে মুল ঘটনা একটু আলাদা, সেটাও ভাইরাল হয়েছে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ভিডিও। ১১ সেকেন্ড মাত্র। কি ছিল সেই ভিডিও তে ?
খোজ নিয়ে জানা গেল, ভিডিওটি আসলে ২০১৯ সালের, অর্থাৎ চার বছর আগেকার। সেই মুহূর্তে তেমন ভাবে সাড়া পায়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে এটা একটা সাঙ্ঘাতিক আকার ধারন করেছে।
২০২১ সালেও আবার এমনই একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।
কি ছিল সেই প্রথম ভিডিও তে ?
ওপরের বর্ণনা অনুযায়ী একটি মেয়ে নিজের খেয়ালে নেচে চলেছে, পড়নে সারবিয়ান কসটিউম। পায়ের গোড়ালির ( সম্ভবত যেটা দেখে মনে হোল ) ওপর ভর দিয়ে নেচে চলেছে, সারবিয়ান ফোক ড্যান্স ‘কোলা’ এর রিদিমে।
দুই হাত টি-এর ( ইংরেজি অক্ষর ) আকৃতি করে নেড়ে চলেছে তালে তালে, পায়ের গোড়ালি কে ডান বামে মুভ করে। স্মুথ সেই নাচ। অদ্ভুত দৃশ্য। দেখলে কিন্তু কেমন একটা ক্রিপি ক্রিপি ভাবে জন্মায়।
সমগ্র ভিডিওটি ক্যাপচার করা সামনের কোন এক ঘরের জানালা থেকে। তারপর আপলোড করা হয় সেইসময়ের বিশেষ একটি সোশ্যাল প্লাটফর্ম, যার নাম টিকটক।
২০২১ সালে আর একটি ভাইরাল ভিডিও, একটি হসপিটালের পাশে তোলা। সেখানেও একই ব্যাপার। মনে করা হয়, মহিলাটি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। এক্ষেত্রে পড়নে ছিল কালো রঙের ড্রেস, মাথায় টুপি।
এই হোল ঘটনা।
কোন ভিডিওতেই মেয়েটিকে চিহ্নিত করা যায়নি। মুখ দেখা যায়নি। তাই তাকে দেখতে কেমন সেটা বলা মুশকিল। ভিডিও টি ৬.৪ মিলিয়ন লাইক এর অধিকারী হয়, যেখানে ১০৫.৩ মিলিয়ন ভিউ দখল করে।
উইকিপিডিয়া তে দেখলাম একটা কথিত গল্প আছে।
একটি মেয়ে ছিল, অন্য কোন গ্রামের ছেলের প্রেমে পড়ে। পরিবার থেকে একসেপ্ট হয় না এই রিলেশন। তারপর সুইসাইড। সারবিয়া এর বিভিন্ন জায়গায় সেই মেয়ের আত্মা কে দেখতে পাওয়া যায়, যে সারা গ্রামে ঘুরে ঘুরে দুঃখের গান গাইতে থাকে। তাকে একবার যে দেখে, দুর্ভাগ্য তার সাথে আটকে যায়, এমনকি মৃত্যু আসে খুব তাড়াতাড়ি।
গল্পটা আমার একেবারেই রিলেভেন্ট লাগেনি।
এই মুহূর্তে অনলাইনে এটা নিয়ে দারুন চর্চা শুরু হয়েছে। সারবিয়ার এই ঘটনা সব্বাই কে চমকে দেয়। এর পর থেকেই নেট দুনিয়ায় এমন অনেক ভিডিও দেখা যেতে থাকে, যেখানে সেই নাচতে থাকা মেয়েটি কে দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থানে। বেশীরভাগ সেগুলো বানানো, জাস্ট মজা করার জন্যে বা পাওয়ার জন্যে।
ব্যাপারটা কতটা সত্যি আমি জানিনা। পুরোটাই কিছু দেখা শোনা আর ফুটেজ দেখে লেখা মাত্র। কোনরকম সত্যি মিথ্যে যাচাই করা নেই। তাই ব্যাক্তিগত ভাবে কিছু মতামত দিতে চাই।
সারবিয়ার এমন ঘটনা হয়তো হয়েছে। লোকাল খবরেও সেটা দেখানো হয়েছে। মানুষের মনে এক প্রকার ভীতি সঞ্চার হয়। হয়তো এটার জন্যই ভিডিও টি বানানো হয়েছে। অনেকেই বলছে, আসল ভিডিও তে মেয়েটিকে অশরীরী ভর করেছিল। কথাটার সত্যতা আপাতত জানা নেই কারোর।
এদিকে যদি ভিডিও বানানো হয়েই থাকে, তাহলে পুলিশ তদন্তে কাউকে পায়নি কেন ?
২০১৯ এর ওই মহিলা কে দেখা মাত্রই কিন্তু পুলিশে জানানো হয়। প্রায় চার বছর কেটে গিয়েছে, পুলিশ কিন্তু সেই ভাবে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। কিন্তু কেন ? ওনারা কিছু লুকোতে চান ?
কনফিউশন টা এখানেই।
এই মুহূর্তে যে ভিডিও গুলো আপলোড হচ্ছে, দেখা যায় মেয়েটিকে ক্যামেরাম্যান এর পেছনে দৌড়ে আসতে, হাতে ছুরি নিয়ে আঘাত করতে। আসল ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে মাত্র।
কারোর পেছনে দৌড়ানো ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক, যতক্ষণ না সে লোকের কোন ক্ষতি করে। যদিও সেটা নির্ভর করছে সিনারিওর ওপর।
ভারতে এমন কিছু কিসসা আপাতত নেই। কারন আমাদের ভারতে এর থেকে অনেক অনেক বেশি কিছু আছে। আর যাইহোক, এমন কেউ আসবে না, যে খুন করার আগে নেচে নেচে বেড়ায় ( সাইকো বাদে )।
এটা একমাত্র মঞ্জুলিকা করতে পারে।
মেরে ঢোলনা শুন... মেরে পেয়ার কি ধুন...
#সারবিয়ান_লেডি #হরর #প্যারানরম্যাল
©সমীরণসামন্ত
©বাতাসবাবুরপাতা
Comments
Post a Comment