=====================
পুস্তক পরিচয় ২৭
=====================
#রিভিউ
#review
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
©সমীরণ
==================================
==================================
লেখক – কাজল ভট্টাচার্য
প্রকাশক – শব্দ প্রকাশনী
প্রকাশকাল – বইমেলা, ২০২৩
মুল্য – ৩৫০টাকা
==================================
সব্বাই কে বাংলা নববর্ষের আন্তরিক
ভালোবাসা জানিয়ে আজকে একটি দারুন সিনেমার রিভিউ... না না, দারুন গল্পের বইয়ের রিভিউ
করতে চলেছি। লেখক আমার দাদাতুল্য গুণী মানুষ, ধন্যবাদ জানাই ওনাকে এতো কাছ থেকে
পেয়েছি বলে। তার মানে এটা বায়াসড লেখা হতে চলেছে, অনেকেই মনে করতে পারে। তাদের কে
বলি, যারা আমার লেখার সাথে, কাজের সাথে পরিচিত, তারা খুব ভালো করেই জানে, আমি যেটাই
বলি সঠিকটাই বলার চেষ্টা করি, ভেতর থেকে যেটা আসে। কে কি বলল তাতে আমি কিছুই মনে
করি না।
রিভিউর শুরুতে সিনেমা বলে আবার নিজেকে শুধরে নিলাম। এর যথেষ্ট কারন একটা রয়েছে।
প্রতিটা গল্প গল্পের আকারে পাতাবাহার করা হলেও বুঁদ হয়ে পড়তে গিয়ে এক প্রকার ঘোর
লেগে যেতে পারে। গল্প পড়ছি নাকি চোখের সামনে সিনেমা দেখছি, সেটা আলাদা ভাবে পৃথক
করা একটু মুশকিল হয়ে গেছিল আমার নিজের ক্ষেত্রে।
গত বছর এই সিরিজের প্রথম পর্ব পড়েছি, বেশ লেগেছে। তবে এই বছরের দ্বিতীয় পর্ব তার থেকেও বেশি ভালো লেগেছে। প্রথমটা যদি কাঁচা লঙ্কা হয়, দ্বিতীয় পার্ট ধানী কাঁচা লঙ্কার আচার। যতই ঝাল লাগে, খেতে ইচ্ছে আরই বেড়ে যায় ক্রমে।
মোট চারটি গল্প রয়েছে। গল্প ঠিক না, সবটাই সত্য ঘটনা। ‘এফ বি আই’ শব্দটার সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। এই ডিপার্টমেন্ট এর কাজ শুরু করে যখন স্থানীয় পুলিশ কোন কেসের সুরাহা করতে অক্ষম হয় ( আমি অন্তত তাই জানি )। এতদিনের কেস স্টাডিতে তাদের কাছে এমন অনেক অমীমাংসিত কেস রয়েছে, যেটা আজও ওপেন সারা পৃথিবীতে। আজও সেই কেস সঠিক বিচারের আশায়। হতে পারে সেটা পঞ্চাশ অথবা একশো বছর আগের পুরনো কিসসা, যেখানে আসল খুনি অথবা অপরাধী কে সঠিক প্রমানের অভাবে ধরতে গিয়েও ধরতে পারা যায়নি। আসল ঘটনা কি ঘটেছে, কেউই জানে না। শুধু ক্লাইম্যাক্স থেকে পিছিয়ে পিছিয়ে প্রমান জোগাড় করতে করতে আসল ঘটনার একটা ছায়া পাওয়া গিয়েছে মাত্র।
ক্রাইমের জগতে সবথেকে ঘৃণ্য, সাংঘাতিক, রক্তাক্ত, চাঞ্চল্যকর, অবিশ্বাস্যকর, দমবন্ধ এবং অকল্পনীয় কেস গুলোর মধ্যে লেখক বাবু বেছে নিয়েছেন চারটি ভিন্ন ধরনের প্রায় অমীমাংসিত কেস।
‘ট্রুথ ইজ স্ত্র্যাঞ্জার দ্যান ফিকশন’, এই কথাটা বারবার মনে পড়ছিল বইটা খুলে পড়তে বসার সময়। ঘটনাগুলির ভয়াবহতা যতটা বেশি, তার থেকেও বেশি ঘটনার সত্যতা। আসলেই এই ঘটনা ঘটেছে, ভাবলেই অবাক লাগে। কতটা প্ল্যানিং, কতটা নেগেটিভ সাইডে মগজ কে কাজে লাগিয়ে একটার পর একটা চরম অপরাধ করতে পারে একটি সিঙ্গেল একা মানুষ। পুলিশ বা এফ বি আই এর চোখে ধুলো দেওয়া যায়, কিন্তু কিভাবে।
রাজপুত্রের অন্তর্ধান ও হত্যা রহস্য
বিচারের প্রতীক্ষায় নিহত গোলাপ
আমেরিকায় আতঙ্ক খুনি ‘জোডিয়াক’
মৃত্যু উপত্যকা জোনসটাউন
মোট চারটি পিসের মধ্যে দুই নম্বর গল্পের ঘটনাটি আমার বেস্ট লেগেছে। একটা মানবী ক্যারেক্টার এর মধ্যে এতগুলো শেড, এই গল্পে স্পষ্ট। জাস্ট ভাবতে গেলেও অবাক হতে হয়। কোন গল্পের জিস্ট বলে স্পয়লার দেবো না, বরাবরের মত। শুধু এটুকু বলবো, যারা পড়তে চাও আগে ১ ধরে ২ এ এসো। একে অপরের সাথে কোন লিঙ্ক নেই, কিন্তু প্রখরতা শুরু হয় প্রথম বই থেকে, যেটা ক্রমে দ্বিতীয় বইতে এসে আরও পাকা পোক্ত হয়েছে।
আলাদা ভাবে কাজলদা কে বলার কিছু নেই। যেভাবে বর্ণনার মাধ্যমে উনি লিখছেন, বোঝাই যায় এর পেছনে কতটা শ্রম রয়েছে। কতটা খুঁটিনাটি পরিশ্রম রয়েছে, কতটা পড়াশোনা রয়েছে। যদি যেকোনো গল্পের মাত্র একটা পাতা যদি পড়া হয়, তাতেই হয়তো নতুন একটা কি দুটো অজানা শব্দ ( টার্ম ) আমাদের কাছে চলে আসবে, যেটা বেশ ইন্টারেস্টিং ও কৌতূহল উদ্দীপক।
আমি এই গল্প পড়তে গিয়ে মাঝে বেশ অনেকটা সময়ের বিরতি নিয়েছি। কারন প্রতিটা গল্প এতোটা কম্প্যাক্ট, এতোগুলো নতুন তথ্য পাওয়া গিয়েছে, শেষ করার পর একটা রেশ রয়ে যাচ্ছে। অবাক করা এক প্রকার অনুভূতি রয়েছে প্রতিটা পিসের শেষে। ভাবতে বাধ্য করছে, ঠিক একটু আগেই যেন কি একটা জঘন্য অপরাধের সাক্ষী হয়ে গিয়েছি আমি। মাঝের বিরতি নিয়ে আসতে আসতে মজিয়ে বইটা অনুভব করেছি মাত্র।
প্রুফ এর ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি জায়গা পরবর্তী সংস্করণে শুধরে যাবে আশা করি। বিশেষত তৃতীয় গল্পে একটু বেশি ভুল চোখে পড়েছে মনে হোল। বইয়ের বাইন্ডিং আগের মতই খুব ভালো। এই নিয়ে কোন কমপ্লেইন নেই, বিকাশ দার কাছে।
সব শেষে একটাই কথা, তৃতীয় কিস্তি আসছে, তৃতীয় ধারার অপরাধ আসছে, নিজের সংজ্ঞা আরও জটিলতর করে। লেখক বাবুর শেষ গল্পের শেষ উক্তি তেমনই ছিল মনে হোল।
বইমেলার সংগ্রহের তালিকায় এই একটা জম্পেশ বই, এক কথায় বইবন্ধ আতঙ্ক।
#সমীরণসামন্ত
#এফবিআই_ফাইল_থেকে_২
#রিভিউ
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
©বাতাসবাবুরপাতা
©সমীরণসামন্ত
Comments
Post a Comment