পুস্তক পরিচয়
=====================
#রিভিউ
#review
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
©সমীরণ
===========================
ত্রিসংকটে অর্ক
===========================
লেখক – পল্লব হালদার
প্রথম প্রকাশ – ২০২২, ডিসেম্বর
প্রকাশক – ধী
২৮৯/- টাকা
============================
মাস খানেক আগেকার কথা। এক বন্ধু
মারফৎ শুনলাম, অর্ক সমগ্রের ব্যাপারে। কিনে পড়তে শুরু করলাম এবং রিভিউ দিলাম। গ্রুপে
সেই রিভিউ আছে আশা করি, খুঁজে পাবেন। মনে মনে ভেবেছিলাম, দ্বিতীয় পর্ব যদি বের হয়,
কিনবো না। কারন যতটা আশা করেছিলাম, সেই অনুযায়ী আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কিন্তু
তারপর কি মনে হল জানিনা, দ্বিতীয় পার্ট আসতেই কি যেন একটা টানে কিনে ফেললাম। না
না, হিপনোটাইস কেও করেনি আমায়, এমনি ঘটে গেল। আর আজ পড়া শেষে বুঝলাম, দ্বিতীয়
সমগ্র কিনে ভুল করিনি।
v
ডক্টর অর্ক সেন,
পেশায় কন্স্যালটেন্ত সাইকিয়াট্রিসট, থাকেন লোগোসে, নাইজেরিয়ার বৃহত্তম শহর। আপাতত
ডিভোর্সি, তাই সামনে পেছনে ভাবনার কেও নেই। হ্যাঁ, তুহিন বলে বন্ধুটি রয়েছে। তার
জবানিতে ম্যাক্সিমাম গল্প আগে শোনা যেত, এবারে সেটা খুব বেশি হবে না।
একটি মাত্র গল্প রয়েছে সারা বই
জুড়ে। যার তিনটে চ্যাপ্টার, তিনটে কেস, তিনটি আলাদা স্থান। গল্পের নিরিখে যখন তখন
একে অপরকে ক্রস করে ফেলছে। পাঠক কখন থাকবে লোগোসে, কখনও হায়দ্রাবাদ আবার কখনও
কোলকাতা। সময়ের সাথে সাথে অর্ক কে নিয়ে পাঠকের এই ভ্রমণ দারুন লাগবে। ঘটনা যতই
এগিয়ে চলবে, ঘনঘটা ততই প্রকট হবে, রহস্যের জাল ততই নিজের দড়ি শক্ত করবে।
আর তারপর শেষমেশ ঘটবে যবনিকা পতন, যেখানে এই প্রথমবার অর্ক মৃত্যু কাছাকাছি পৌঁছে
গিয়েও তাকে উপেক্ষা করে ফিরে আসবে।
v
যেটা সব থেকে
বেশি ভালো লেগেছে, সেটা হল তিনটি কাহিনীর একটা সমবিন্ধু পয়েন্ট। কাহিনি গুলো সবটাই
আলাদা, আলাদা শরীর, আলাদা মন, আলাদা স্থান। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের মধ্যে কমন
ব্যাপার রয়েছে। একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সবগুলো গল্পই একে ওপরের সাথে দারুন ভাবে
কানেক্টেড।
v
আর একটা দারুন
ব্যাপার হল লেখকের লেখার ধরন। গদ্যের আকারে লেখা, যেমন ঝকঝকে তেমনই পরিস্কার এবং
সহজ বাক্য ব্যাবহার করা। যার ফলে খুব তাড়াতাড়ি গল্প পড়ে ফেলা এবং বুঝে ফেলা সম্ভব।
লেখাগুলো যতই বড় হোক, পড়তে সময় লাগে অত্যন্ত কম। এর জন্য অনেকটা ক্রেডিট লেখক মশাই
এর প্রতি রইলো। এই ব্যাপারটা ওনার আগের সমগ্রতেও ছিল।
v
অর্ক চরিত্রে দুটো
নতুন বিশেষণ চোখে পড়ল।
প্রয়োজনে উনি রোগীর বাড়ির লোক কে ফোন করে কনভিন্স করে ফেলতেও ছাড়েন না, রোগীর
স্বার্থে।
এছাড়া, কাকে কি কথা হাসি মুখে বলে কাজ হাসিল করা যাবে, এটা জানেন। একজন
মনস্তাত্ত্বিক এর এমন ক্যারেক্টার
স্বাভাবিক ভাবে হয় না, কিন্তু প্লটের খাতিরে এটা করা যেতেই পারে।
v
বর্ণবিদ্বেষী
ব্যাপারটা মানুষের ভেতরে আজও রয়েছে, শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে। গল্পের মাধ্যমে
তার দারুন একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সালার মিউজিয়াম এর দারুন বিবরন, আলাদা ভাবে প্রশংসনীয়।
এবার আসি না ভালোলাগার একটা লিস্ট নিয়ে। যেগুলো আমার মনে
হয় লেখক বাবু একটু যদি মন দেন , তাহলে সময়ে অর্ক আরও ভালো জায়গা নিতে চলেছে গল্প
জগতে। নিঃসন্দেহে একটা কথা বলে রাখি, প্রথম পার্টের থেকে দ্বিতীয় পারত,অনেক বেশি
কম্প্যাক্ট এবং জমজমাট।
v
তিনটি গল্প
অবশ্যই ভালো। অবাক করে দেওয়ার মত ঘটনা একের পর এক ঘটবে। যখন তখন একে
অপরকে ক্রস করে যাবে। এক্ষেত্রে অনেক স্কোপ ছিল, পাঠক কে এক মুহূর্তের জন্য থ করে
বসিয়ে দেওয়ার। যদি পল্লব বাবু সেই জায়গাটা কিছুক্ষণের জন্য থামাতে পারতেন,
অবাঞ্ছিত কিছু ঘটনা ঘটার ফলে একটু ভাবতে বাধ্য করতেন আবারও, তাহলে আরও ভালো হতো।
লেখার নিরিখে ঘটনা পরবর্তী মুহূর্তেই পাল্টে যাছে, পরের লাইনে। পাঠক কে ভাবতে সময়
দেওয়া একটু উচিৎ। তার জন্য উচিৎ প্লট পরিবরতনের সময় আরও একটু বেশি সময় দেওয়া। সেই
ব্যাপারটা ফিল করার মধ্যে পাঠক আলাদা অনুভূতি পায়।
v
যেটা না বললেই
নয় সেটা গল্পের ক্লাইম্যাক্স। নিঃসন্দেহে ভালো। কিশোর বয়সের গল্প প্রেমীরা দারুন
উপভোগ করবে। তবে আমি বলবো, আরও বেশি সাংঘাতিক জটিল হতে পারতো। আরও অনেক ভাবে
কাহিনীতে প্যাঁচ মোচড় আনা যেত। সাইকোলজিক্যাল টার্ম যথাযথ ভাবে ব্যাবহারের পরেও ওর
রেসটা কাজে লাগানো যেতে পারতো। শুরুটা যতটা ভালো ভাবে হয়েছে, গল্পের শেষ কিন্তু
সেই লেভেল এ আসেনি। যেন তাড়াহুড়ো করে কনক্লুড করে দেওয়া হল মাত্র। আরও দশ পাতা
বাড়লে, আরও ব্যাখ্যামূলক, চিন্তামূলক কথা যোগ করলে আমি খুব খুশি হতাম।
v
চিত্তরূপার
ব্যাধিটার উৎপত্তি ফোকাসে এলো না। পাঠক কিন্তু একটু হলেও অসন্তুষ্ট হবে। কারন যেটা
নিয়ে চারিদিকে একটার পর একটা প্লট ঘটছে, তার উৎপত্তি যদি কুয়াশা থেকে যায়, তাহলে
মন ভালো হয় কি করে। আমার কিন্তু সব থেকে বেশি ইন্তেরেস্তিং কেস ওটাই লেগেছিল।
v
জ্যোতি ম্যাম এর
বাড়ির সমস্যাটা আরও একটু মশলা যোগ থাকলে ভালো লাগতো। ব্যাপারটা জাস্ট সল্ভ হয়ে
গেল। মন ভরেনি কিন্তু।
v
মিউজিয়াম কিসসা,
যথেষ্ট ভালো। ভালো কথাটা আপেক্ষিক তাও বলছি, তিনটি গল্পের মধ্যে এটাই বেশি
কম্প্যাক্ট হয়েছে।
v
বইয়ের নামকরনে ‘
সমগ্র ‘ শব্দটা নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই। অনেক গুলি গল্পের সংকলন কে এক কথায় এটাই
বলে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই বই তে একটাই গল্প রয়েছে বলবো। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে
অর্ক তিন রকমের কেস স্টাডি করেন। কিন্তু পাঠক তাতে তুষ্ট হবে কেন ? সে তো চাইবে
আরও বেশি গল্প থাক। পড়তে বসলেই তো হুস করে শেষ হয়ে যাচ্ছে, শুরু করতে করতেই। তাহলে
এমন করে চলবে কি করে।
এই পর্বের নামকরন ‘সমগ্র‘ হিসেবে না লিখলেই হয়তো ভালো হতো।
v
গল্পের বইয়ের পৃষ্ঠা
কোয়ালিটি মোটামুটি। সেই অনুযায়ী দামটা একটু চড়া মনে হল।
কাদের জন্য এই বইটি ?
যারা সাইকোলজিক্যাল ভয় পেতে অথবা চাখতে
ভালোবাসো অথবা যারা ভয় কে অন্য ভাবে দেখতে চাও, টানটান রহস্য অনুভব করতে চাও, তাদের
বলবো। আগে প্রথম পর্বটি পড়ে ফেলুন। সেখানে অর্ক তুহিন এর সাথে যেমন পরিচয় ঘটবে, তেমনই
পল্লব বাবুর লেখার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। এই সব কিছু কমপ্লিট হলে তারপর
এই বই টি রইলো।
বলাবাহুল্য, লেখকবাবুর হাত আরও ভালো হয়েছে, লেখার দিক থেকে। উনি বুঝেছেন, পাঠকদের
কিভাবে সম্মোহন করে বসিয়ে রাখতে হয় গল্পের মধ্যে। একবার শুরু করে শেষ না করা
পর্যন্ত শান্তি নেই, এমন লেখাই দরকার আজকের সময়ে।
তবে বেশ অনেকবার একই লাইন, একই ঘটনার উল্লেখ এক একজনের মুখ থেকে বলানো, ভালো
লাগেনি। এতে অহেতুক শব্দ সংখ্যা বেড়েছে, যেহেতু প্রতিবার একই কথা রিপিট হয়েছে,
কোথাও এক্সট্রা এলিমেন্ত যোগ না করে।
পুনশ্চ -
বেশ কিছুদিন আগেকার কথা। নিউটাউন বইমেলা চলছিল, দিনটা ২৫শে ডিসেম্বর। দেখলাম একজন মানুষ,
বেশ লম্বা, এগিয়ে আসছেন। পল্লববাবুকে ছবিতে দেখে ততটা লম্বা মনে হয়নি, কিন্তু সামনে
থেকে দেখে বুজলাম, উনি মানুষের সাথে ভালো রকমই মিশতে পারেন, কথা বলতে পারেন। না, আমি
কথা বলিনি, তবে সব্বাই মিলে একটা ছবি তুলেছি, দেখুন তো খুঁজে পান কিনা।
শুভ
কামনা জানাই অর্কের আড়ালে থাকা পল্লব বাবু কে, ভালো থাকবেন।
স্কোরবোর্ড – ৩ / ৫
#সমীরণসামন্ত
#ত্রিসংকটে অর্ক
#রিভিউ
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
Comments
Post a Comment