দার্জিলিং জমজমাট ও কিছু কথা
#ফেলুদা #দার্জিলিংজমজমাট #ফেলু
ছোটবেলা নিয়ে আমি একটু বেশি খুঁতখুঁতে। তাই হয়তো ফেলু মিত্তির কে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট যে হারে বেড়েছে, সহ্যের সীমা অতিক্রান্ত। তবু হাজার হোক, ফেলুদা বলে কথা। যেই বানাক না কেন, একবার নিজের প্রথম গোয়েন্দা কে অন স্ক্রিনে আবার দেখার ইছে চেপে রাখতে পারিনি। আর সেখানেই ঘটেছে বিভ্রাট।
এটা আমার প্রথম রিভিউ ফেলুদার সিনেমা নিয়ে। ভুল ত্রুটি যেটাই হোক, সম্পূর্ণটাই ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার ফসল। যারা রিভিউ পড়ছ, কোন রকম তর্ক বিতর্কে যেও না। তেমন মনে করলে নিজেদের অভিজ্ঞতা লিখেও জানাতে পারো। সব্বার সাথে আমার মতের মিল হবে, এমনটা আশা করা বোকামি।
যেগুলো চোখে লেগেছে, বেশিরভাগটাই প্রথমহাফ এ। সেগুলো নিয়ে প্রথমে শুরু করছি।
১ । প্রতিটি এপিসোডের শুরুতে যে গানটি হছে , সেটা মূলত ফেলুদা কে ট্রিবিউট জানিয়ে তৈরি। বইয়ের ছবি গুলো নড়ে চড়ে বেরাছে, দারুন লাগছে।
কিন্তু শুরুতে ত্রিনয়ন এর বুলি টা না দিলেই হতো না ? গানটি ওভারল তেমন ভাবে দাগ কাটেনি। সঙ্গীতের শুধু মিউজিক যদি থাকতো, সাদাকালো দৃশ্য গুলো যেভাবে নড়ছে,নো ডাউট, দারুন লাগতো। নতুন ভাবে যে থিম টা দেখানোর চেষ্টা চলছে, সেটা অন্তত আরও স্পষ্ট হতো।
এখানে বলে রাখা ভালো, “ ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা “ আমার পড়া প্রথম ফেলুদা। তাই হয়তো ত্রিনয়ন নিয়ে আমি একটু বেশি বেশি করছি।
২। টোটা বাবু কি ততটা লম্বা ? উহু। তবে ক্যামেরা এতো উঁচুতে ধরে অথবা অনেকটা নিচ থেকে নিয়ে লম্বা বোঝানো হলেও, ফেলু ফেলু গন্ধটা আসে না। মাথায় একদিকে সিতে রেখে যে আভা টাক রয়েছে, সেটা অপ্রকাশিত রাখাই শ্রেয় ছিল, অন্তত এতোটা নয়।
৩। লালু দা, ওরফে লালমোহন ওরফে জটায়ু , কি তাড়াতাড়ি কথা বলেন। সাবলীলতা এতোটাই ভালো যে জটায়ুর বোকা বোকা ভাব গুলো অনেকটাই মিসিং। কথার মধ্যে একটা স্পেস থাকে।
উনি যদি এতো চটপটে হয়ে যান, ফেলুদার কাছ থেকে আর উপদেশ নেওয়ার দরকার পড়বে আদেও ?
৪। জটায়ু কে নিয়ে আরও একটা সমস্যা। বিরূপাক্ষ মজুমদার খুন হয়েছেন। কথাটা শোনা মাত্র উনি হ্যা করে ছিলেন। তারপর ওনার এফেক্ট কি ছিল ? উৎফুল্লের হাসি, দাত বার করে। কারন ?
ফেলু বাবু কে কাজে লাগতে হবে, ওনার আর তস সইছে না।
গল্পে এমন ছিল কি ? মনে নেই।
তবুও বলি, একজন মানুষ খুন হলে জটায়ু কিন্তু যেমন ভয় পান, তেমনি শোকপ্রকাশ করেন মাঝে মধ্যেই দেখেছি। কিন্তু স্ক্রিনের ব্যাপারটা চোখে লাগছিল বড্ড। সাজিয়ে গুছিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা যেত না ?
এমন জটায়ু কে আমি চিনতাম না।
৫। এবারো জটায়ু কে নিয়ে কথা বলছি। যদিও অ্যাঙ্গেল আমার ক্যামেরার দিকে।
সকালের কাঞ্চনজঙ্ঘা প্রথমবার দেখার অনুভূতি চরম।
যখন জটায়ুর পালা আসছে স্ক্রিনে, ক্যামেরা কি আর একটু দূর থেকে দেখানো যেত না ? পাশাপাশি দৃশ্য গুলো বাকগ্রাউন্দ এ থাকলে আরই ভালো লাগতো।
কিন্তু ওনার গোল বড় মুখ, থালার মত স্ক্রিন জুড়ে রয়েছে। বড্ড বিরক্তিকর।
ক্যামেরা ডিরেক্সন আমি জানি না তবে, খারাপ লাগা আর ভালোলাগার মধ্যেকার কথাটা বললাম।
৬ । ঠিক ঐ দৃশ্যে ফেলুবাবুর কথা বলি। কাওকে সন্দেহ না করলে উনি চোখে চোখ রেখে কথা বলেন না। মনোরম যে কথা গুলো উনি বলছিলেন, সেটা তথ্য নির্ভর হোক বা জ্ঞান দেওয়া হোক, কারোর দিকে না তাকিয়ে উদাসিন ভাবে যদি প্রকৃতিকে লক্ষ্য করে বলানো হতো, বোধকরি আরও আরও ভালো লাগতো। সম্ভবত এই লুক দেখেই এসেছি বরাবর।
৭। “ সাব্বাস তোপসে “ সাঙ্ঘাতিক কথা, সাঙ্ঘাতিক শব্দদ্বয়। এই ডায়লগ শোনার সময় আশা করছিলাম স্পেশাল কিছু, আরও জোরালো। উহু, কথাটা থ্র করার সময় সেই ব্যাপারটাই মিসিং। যেন একটা নর্মাল ডায়লগ।
৮ । চা খাওয়ায়ার দৃশ্য মনে আছে তো ? বিরূপাক্ষ মজুমদারের বাড়িতে প্রথম তিন মূর্তির পদার্পণ। কাপে যে চা ছিল না, সেটা রাখার সময় শব্দ পেয়েই বোঝা গিয়েছে। সেদিকে একটু সতর্ক হউয়া দরকার ছিল। আদতে অল্প পরিমান করে জল যদি দিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে মনে হয় এটা অতটা সমস্যা করতো না।
৯ । ব্যোমকেশ বাবু কি দোষ করলেন ? যে ওনাকে এখানে টেনে আনা হোল। যথাযোগ্য উদাহরন এভাবে না দিলেও চলতো।
১০ । নাগিন সিনেমার পোস্টার ওখানে কি করছিল, কে জানে।
দোষ গুন অনেক হোল, এবারে যেগুলো ভালো লাগল সেগুলো বলি।
১ । প্রতিটা সেট খুব নিখুঁত করে বানানোর চেষ্টা, অপূর্ব। এই বারে আলোক সজ্জায় ওনারা বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। প্রপার সোর্স নির্বাচন, যোগ্য আবহাওয়া তৈরি করার জন্য সঠিক আলোর ইনটেনসিটি দারুন।
২। যেমনটা তিন জন কে পাতার ছবিতে দেখে এসেছি, ঠিক সেই বেশভূষায়, সেই ফ্রেমে দেখতে পাওয়া।
৩। দার্জিলিং এর হালকা ছোঁয়া, স্ক্রিনে। মন ভরে যায়। তবে চিড়িয়াখানাটা আর একটু দেখা গেলে মন্দ হত না।
৪ । চেজ করার দৃশ্য অনুভূতি, ভালো ভাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
৫ । রেটরো লুক, সঙ্গে বেলবক্স কাটিং প্যান্ট, অন্য নস্টালজিয়া।
৬ । ফেলু বাবুর ইন্টারোগেশন সমীরণ বাবুর সাথে, সঙ্গে ক্যামেরার ডান বাম ঘোরাঘুরি। ঐ জায়গাটা পুরো জমে গিয়েছিল। সেই ধারালো দৃষ্টি, সেই রকম বাক্যবান। কোন কথা হবে না।
৭ । যবনিকা পতন এর সিন, বেশ ভালো। আরও ভালো করা যেত, যদি ক্যমেরা মাঝে মধ্যে ক্লোজ লুকে নড়াচড়া করতো।
এবার আসি উপসংহারে।
লালমোহন বাবুর সাথে আসলে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস ঘটছে। একই প্লাটফর্ম এ আরও একটি মুখ্য ভুমিকায় রয়েছে। সেই ব্যাক্তি এখানে আবার অন্য সত্ত্বা। অথচ সাজ পোশাক একদমই একই বলা চলে। কোথাও একটু অসুবিধে বোধ হছে বইকি।
কিন্তু কি করার আছে। আমরা যাকে আসল ফেলু মনে করতাম, উনি তো আর আমাদের মধ্যে নেই। তারপর যাকে পেলাম, উনি তো আর করবেন না বলে দিয়েছেন। এখন একপেরিমেন্ত ই ভরসা। তবু আমার মতে, ফেলুদা কে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভালো। ইমসনটা কোথাও ক্ল্যাশ করে যাছে। তাই জটায়ু কেও এমন ভাবে দেখে নিয়ে মেনে নিতে হছে।
তোপসে এর কথা আর বললাম না। কারনটা থাক।
যাকে আমার বেস্ট লাগে, লেগেওছে, উনি হলেন বরুন চন্দ। ওনার সম্পর্কে কিছু নাই বা বললাম। ওনার মেইনলি গলাটা, এক কথায় বলার ভাষা নেই।
দারুন দারুন দারুন।
মেইনলি, এটা “ দার্জিলিং জমজমাট “ দেখা যাবে কি না।
আমি বলবো, অবশ্যই দেখা যাবে। আগের সিজন থেকে অনেক ইম্প্রুভ হয়েছে। “ ছিন্নমস্তার অভিশাপ “ গল্পে চোখে অনেক কিছু পড়েছিল, কিন্তু লেখার সাহস হয়নি। এবারে সাহস জুগিয়ে লিখে ফেললাম। যেহেতু গল্পটি ছোটবেলায় পড়েছিলাম, তাই অনেক কথায় অসামঞ্জস্য থাকতেও পারে। বাকি কথা গুলো, আমার জাস্ট কিছু ভাবনা, সব্বার সাথে শেয়ার করা।
আবার বলছি, রিভিউ অত্যন্ত ব্যাক্তিগত। কারোর ভাবাবেগে আঘাত করলে আমি দুঃখিত। ভুল আমারও হয়ে থাকতে পারে। এটা শুধু মাত্র একটি আলোচনা।
ভালো থেকো সব্বাই।
#হইচই #সৃজিতমুখারজি #টোটারায়চৌধুরী
লেখনীতে, সমীরণ সামন্ত
Comments
Post a Comment