একশো বছর পুরনো বই এর উত্থান
=====================
পুস্তক পরিচয় 16
=============
#রিভিউ
#review
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
©সমীরণ
=========================
সচিত্র
অদ্ভুত হত্যাকাণ্ড
=========================
->লেখক
– কিশোরীমোহন বাকচি
-> প্রথম প্রকাশ – ১৯০৮
->প্রকাশক – জয়ঢাক
অরন্যমন সংস্করণ ( ২০১৮ )
->২৫০/- টাকা
================
প্রথম একটা বই পড়তে শুরু করলাম, যার কোন ভূমিকা অথবা লেখক এর নিজস্ব কোন কলাম ছিল
না। আমার মনে হয়, একশো বছর আগে লেখার শুরুতে এই ব্যাপারটা সেই ভাবে বাংলায় প্রচলিত
হয়নি।
হ্যাঁ ঠিক, বলছি।
গল্পটি লেখা হয়েছে একশো বছরেরও আগে। সম্পূর্ণ সাধু ভাষায়।
২০১৮ সালে এটাই নবসংস্করণ করে, লেখার ফন্ট পরিবর্তন করে আমাদের সামনে নতুন ভাবে নিয়ে আসা হয়েছে।
এবারের বইমেলায় যেটা আমারও চোখের সামনে এসে গিয়েছিল। হাতছাড়া তো পরের কথা, কীভাবে এত্ত বড় গল্প শেষ করবো, সেটা নিয়েই চিন্তায় ছিলাম, এই ব্যাস্ততার জীবনে। অবশেষে দারুন একটা অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ বইটি শেষ করলাম, আর রিভিউ শুরুতেই বলবো।
“ আহা, কি পড়িলাম, জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না “
পুরানো কোলকাতার গল্প।
১৯০৩ সালে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ করার প্রস্তাব রাখেন।
এই গল্পের প্রেক্ষাপট মোটামুটি ১৯০৫ সালের পর বা সমসাময়িক।
গ্রামের একটি ছেলে কলকাতায় আসে, চাকরির খোঁজে। মূলত টাকা জোগাড় করে গ্রামে ফিরে, তার ভালবাসা কে পেতে চায়, বিয়ে করতে চায়। ছেলেটির ঘরে নিজের বোন আর একজন বয়স্কা ( পিসি সম্ভবত ) ছিলেন। তাদের টাকা পাঠানোটাও বড্ড জরুরি।
প্রথম দিন কলকাতায় পা রাখার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত ভয়ানক ছিল। সে যাই হোক, চাকরি একটা জুটে যায়। পয়সা মাসে মাসে পাঠাতে থাকে, সঙ্গে পত্র বিনিময়।
মাস ছয়েক এভাবেই কাটতে কাটতে বিপদ অজান্তে দরজায় কড়া নাড়ে।
গ্রাম থেকে নিজের প্রেমিকার এবং বোনের চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়। চিন্তায় মগ্ন ছেলেটি, গ্রামে শিগগির যায়।
কিন্তু তাদের কারোর দেখা পায় না। উপরন্তু ঘরটি দেখে, পরিত্যাক্ত মনে হয়। বোঝাই যায়, অনেক দিন ধরে এখানে কেও থাকে না।
মাথায় বাজ পড়ে যায়। এখন কি করবে ছেলেটি ?
নিজের বলতে তো ঐ বোন, আর প্রেমিকা। ওদের ছাড়া বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যই বা কি।
কলকাতায় ফিরে ছেলেটি ঠিক করে ফেলে।
সে পুলিশ তথা গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেবে। আর নিজের বোন ও ভালবাসা কে ঠিক খুঁজে বার করবে।
তারপর ?
পুরানো কলকাতায় এই গোয়েন্দাবাবু এমন একটি কেস প্রথমেই পায়, যেটা তার ক্যারিয়ার জীবনের প্রথম ধাক্কা হিসেবে আসে।
ক্রাইম ডিটেকশন সেই সময়ে ঠিক কেমন ভাবে হতো ?
কথার থেকে কাজ চলতো বেশি। মাথা চলতো তার থেকেও দ্রুত।
রোমহর্ষক, রোমাঞ্চকর পথটি দেখানো হয়েছে ছেলেটির তীক্ষ্ণ বুধিমত্তার মাধ্যমে।
নিচু পদে থাকা সত্ত্বেও কি করে নিজের মাথা খাটিয়ে ছেলেটি আস্তে আস্তে জট খুলতে শুরু করল, আসলেই কি সে সফল হবে প্রথম কেসে ?
কি এমন জটিল কেস, যে ভারপ্রাপ্ত অফিসাররা তার ওপর ভরসা করতে শুরু করেছে ?
শেষমেশ কি হোল।
যে কারনে গোয়েন্দা বিভাগে আসা, সেটা কি সফল হোল ?
শুরু থেকেই টানটান একটা জটিল ভাবনা নিয়ে গল্পটা যেমন এগিয়েছে, তেমনি মাঝে মধ্যে অনেক লেয়ার গল্পের টান আরও কিছু গুন বাড়িয়েছে।
সময়ের আগে ও পরে, ঘটনার কাল অনুযায়ী আগে পরে বা পরে আগে লেখার স্টাইলটা কিন্তু সেদিনও ছিল। লেখা পড়তে গিয়ে সেটা বিশেষ ভাবে উপভোগ্য।
সত্যি কথা বলতে অনেক দিন পর এতো বড় গল্প পড়লাম, তাও সাধুভাষায়। লেখার সরলতা এতোটাই দারুন ছিল, যে পড়তে গিয়ে অসুবিধে তো হয়নি, শুধু মনে হয়েছে এই ভাষায় আরও লেখা যদি পেতাম।
বইটি অখণ্ড সংস্করণ, তবে মোট তিনটি খণ্ডে বিভক্ত।
মাঝে মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছবি, প্রেক্ষাপট কে কন্দ্র করে।
গল্পের মধ্যে শুধু পুরানো কোলকাতা আছে বলবো না, সঙ্গে সেই সময়ের ভাষা প্রয়োগ রয়েছে সারা বই জুড়ে, বেশ লাগছিল পড়তে গিয়ে।
পুরানো কোলকাতার অন্ধকারে জুয়াচুরি যেমন হতো, তেমনি নারীমাংসের স্বাদ সেদিনও চাখা হতো, চড়া দামে।
পুলিশ বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগ সব্বাই নিজের কাজে পটু মানুষদেরই আগে রাখার চেষ্টা করতো।
লেখকের ব্যাপারে কিছু কথা বলে রাখি।
কিশোরী বাবু জন্মগ্রহন করেন ১২৭৩ বঙ্গাব্দে।
পড়াশোনা শেষ করে নিজ দেশে ব্যাবসার কাজে মনোনিবেশ করেন। বাবার নাম প্যারি মোহন বাগচী।
ওনার নামেই কিশোরী বাবু প্রতিষ্ঠা করেন , পি এম বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি।
স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন এর সময়ে কিশোরী বাবু বিদেশী কালি বয়কট করার কথা চিন্তা করেন এবং নিজের কারখানাতেই কালি প্রস্তুত করেন। সফল ভাবে পরবর্তী সময়ে উনি সরকার, রেল, স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান গুলিতে কালি সরবরাহ করতে থাকেন। ব্যাবসায়িক স্থিতি আসে এবং পরবর্তী সময়ে রবারস্ট্যাম্প,শিলমোহর, পঞ্জিকা ইত্যাদির ব্যাবসা শুরু করেন।
এই গল্পের বইটির প্রথম সংস্করণ ওনার কারখানাতেই হয় বলেই আমার ধারনা। প্রমান স্বরূপ পুরানো কভারপেজটি আমি দিয়ে রাখলাম।
সেই সময়ে এই বইয়ের দাম ছিল, এক টাকা। প্রায় ৩০০ এর বেশি পেজ ছিল। নতুন সংস্করণের সেটা অবশ্য ১৯৬টি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু মন খারাপের ব্যাপার হোল, আমি ওনার লেখা আর কোন কিছুই খুঁজে পাছি না।
পাঠক বন্ধুদের কাছে একটা দাবী, যদি ওনার লেখার অন্য কোন কিছুর সন্ধান পাও, তাহলে একবার জানিও।
শেষে একটা কথা বলবো ?
চোখের সামনে সিনেমা দেখছিলাম মনে হয়েছিল, বইটি পড়ার সময়ে। কোন সংস্থা যদি এটা সিজন হিসেবে অথবা সিনেমা হিসেবে বার করতে পারে, আমি সব থেকে বেশি খুশি হবো। গল্পের নৃশংসতার আর এক নতুন রূপ দেখতে পাবো।
তবে যেমন তেমন ভাবে ঐ “চইচই” প্লাটফর্ম কিনে নিলে, বেকার হয়ে যাবে, আমার বিশ্বাস তেমনটাই।
রিভিউ কেমন লাগছে, কমেন্ট করে জানিও। প্রশ্নের প্রত্যুতর লেখার ইছেডানা কে আরও প্রসারিত করে।
ভালো থাকবে সব্বাই।
#সমীরণসামন্ত
#সচিত্রঅদ্ভুতহত্যাকাণ্ড
#কিশোরীমোহন_বাকচি
#বইমেলা২০২২
#রিভিউ
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
Comments
Post a Comment