#কোন_রেসিপির_গল্প_নয়
তেল গরম পর্ব -
নন্দন বসল বাইকের পেছনে।স্টার্ট দিলাম সশব্দে।
“ কি রে, কাগজ গুলো ঠিক করে গুছিয়ে নিয়েছিস তো ?”, পেছন থেকে।
“ শোন ভাই, বারবার বলার দরকার নেই। এটা তো আর প্রথম বার নয়, যে আমার ভুল হবে।“
“ আগের কেসটায় ছেলেটার ছবিটা স্পটে কে ফেলে এসেছিল ? “, ব্যাঙ্গের সুর।
“ আরে সেদিন একটু তারা ছিল, তুই ঐ দিনের কথা নিয়ে রোজ খোটা দিবি ? সার্ভিস এক্সামে আমিই টপ করেছিলাম, সেটা ভুলে জাস না। ”
এই একটা কথাই যথেষ্ট, নন্দন কে চুপ করানোর জন্য। আমি জানি সেটাই ওর মোক্ষম দাওয়াই।
মেছেদা থেকে হাইরোড ধরে সোজা কলকাতা, বুলেটে চেপে তাও ঘণ্টা ২ লাগবে, লালবাজার পৌছাতে। গত ৫ মাস ধরে এমন এক ধরনের কেস পেয়েছি, না আছে কোন ক্লু, না আছে কোনরকম সন্ধান। শুরুটা কোথা থেকে করবো কিছুতেই বুঝতে পারছি না।
এই বছরের মার্চ মাসের তেইশ তারিখ। একটি ছেলের নিখোঁজের ডাইরি এলো। বয়স মাঝারি, অবিবাহিত। বরাবরের মত এটা আর নতুন ভাবে কিছু পাত্তা দিয়নি। যুবক ছেলে, রক্ত গরম, অনেক কিছুই করতে পারে। ঘর ছেড়ে চলে যাওয়াটা নতুন ব্যাপার নাকি। হাতে পয়সা ফুরিয়ে গেলে সুড়সুড় করে চলে আসে।
কিন্তু এই ছেলেটি আর ফেরেনি। তেমন কোন রকম খবর ওর আত্মীয়দের কাছ থেকেও পাওয়া গেল না। বাড়ির লোকের কথা অনুযায়ী, ছেলেটির কাজের জায়গায় খোঁজ নিয়েও জানা গেছে, সে সেখান থেকে চলে এসেছে। কিন্তু ঘর পর্যন্ত আর এলো না।
দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে যায়।
তারই পর আবার আর একটি ছেলের নিখোঁজ ডাইরি। দুটি ঘটনা সমান মনে হয়নি। এমনটা হামেশাই ঘটছে। রোজ এমন কত ডাইরির নিচে সাইন করছি। তবে সেগুলোর প্রত্যেকটার খবর পেয়ে যাই। কেও বা লুকিয়ে ছিল কোন কারনে।
কেও বা পালিয়ে বিয়ে করেছে, ভয়ে ঘরে ঢুকতে পারছে না। কেও বা চুরি করে টাকা নিয়ে ধা। আবার কারোর লাশ পাওয়া গেছে নদীর ধারে ইত্যাদি।
মোটের ওপর ওদের সব্বাই কে পাওয়া যায়, জীবিত বা মৃত।
ধাতে সয়ে গেছে ব্যাপারগুলো। কিন্তু এখনের কেস গুলো গোলমেলে যে বড্ড। রোজের মত বাইরে গেল, আর ফিরল না।
আরও এক মাস কেটে গেল হুস করে, এই দ্বিতীয় ছেলেটিরও কোন রকম ট্রেস পেলাম না। নড়েচড়ে বসল ডিপার্টমেন্ট। কি ঘটছে, সেটাই বুঝতে পারছি না। নট অ্যা সিঙ্গেল ক্লু। না আছে কিডন্যাপের ফোন বা হুমকি, না অন্য কিছু।একেবারে জিরো পয়েন্ট।
মাসের পর মাস কাটতে থাকল। প্রায় প্রতি মাসেই ছেলে নিখোঁজের ডাইরি আমাদের ডিপার্টমেন্ট কে তঠস্থ করে তুলত। জন পনের জনের ডাইরি হলে, মাস শেষের আগে চোদ্দ জনের হদিস কোন না কোন ভাবেই পেতাম। কিন্তু একজন হয়ে যেত বেপাত্তা।
এভাবে ছয় মাসে ছয় জন ছেলে নিখোঁজ।
কোন ছেলেই যে মারা যায়নি, এটুকু নিশ্চিত। কারন কারোর বডি পাওয়া যায়নি।
অন ডিউটি ওপর মহল থেকে চাপ আসতে শুরু করেছে।
লালবাজার স্পেশাল ব্রাঞ্ছ এর মাথা হলাম আমি, বিবেক। আর আমার সাথে অ্যাসিস্ট্যান্ট, আমার ছোটবেলার বন্ধু, নন্দন।
ঠিক করলাম, আমরা নিজেরাই ইনভেস্টিগেশনে নামবো। এছাড়া আর কোন রাস্তা নেই।
ফোড়ন পর্ব -
“ জিশানের খানা পিনা “ রেস্টুরেন্টটি হঠাৎ করেই নামডাক করে ফেলেছে, এই মাস খানেক হোল।
বম্বেরোডে হাওড়া যাওয়ার পথে, কোলাঘাট। সেটা পেরানোর ঠিক পরেই বেশ কটা ধাবা বাম দিকে রয়েছে। সেখান থেকে ৫০০ মিটার দুরেই এই রেস্টুরেন্ট। বাস বা গাড়ি, সচরাচর প্রথম ধাবাতেই হল্ট করে যেত, পরের টার কথা কেও ভাবতই না।
আর ভাববেই বা কেন, এখানে সব ধরনের খাওয়া পেয়ে যেত। আর ওখানে এক বয়স্কলোক তিন কর্মচারীদের নিয়ে চালাত। খাবার অর্ডার দেওয়ার পর বসতো রান্না।
টাটকা করে খাওয়ানটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস রাস্তায় অতো সময় কেই বা দেবে। তারা আসলেই আসে খিদে বাঁচাতে, নাকি টাটকার গন্ধ শুকতে।
সময়ের তাগিদে আস্তে আস্তে রেস্টুরেন্ট ঝাপ বন্ধের পথে। এমন সময় বয়স্ক লোকটির ছেলে এসে হাল ধরল। আজকালকার ছেলে, জানে কি করে মানুষের মন জুগিয়ে চলতে হয়। টাটকা খাবার দেবে, অথচ তাড়াতাড়ি, এই কায়দা তার বাপের জানা ছিল না। ছেলের নামে রেস্টুরেন্ট খুলে আজ ছেলেই তার কপাল ফেরাতে চলেছে।
এখন এখানে ৫ জন কাজ করে, তাও সামলাতে পারে না “ জিশানের খানা পিনা “।
গত বছর জিশানের বাবা মারা গেছে , বার্ধক্যজনিত কারনে। মন থেকে একটু বাঁধা পেয়েছিল, তবে থেমে থাকেনি। বাবা থাকাকালীন এই রেস্টুরেন্ট এর হাল ধরেছিল বলেই রক্ষ্যে হয়তো। তবে নামডাক হোল অনেকটা সময় পেড়িয়ে, সেটা বাবা দেখে যেতে পারেননি। জিশানের আক্ষেপ রয়ে গেছে। ভাগ্যের পরিহাস ভেবে মেনে নেয়। তবে সে তার বাবা কে সবসময় সঙ্গে করেই নিয়ে চলে। গলায় একটা লকেট, ছবিটা বাবার, সঙ্গে একটা টেপরেকর্ডার, যেখানে রয়েছে বাবার গলায় স্বর।
মেনুকার্ডে সবথেকে ওপরে লেখা রয়েছে,
“ কচি পাঁঠার ঝোল ( ২ পিস, আলু ১ পিস ) ৯০টাকা।
এই আইটেমটাই এখানের সব থেকে ফেমাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দোকানটা যেন এটার ওপর ভর করেই মাথা তুলেছে।
জিশান মনে করে, তার বাবার রেসিপির জাদু এটা। তাই বাবা চলে যাওয়ার পর, প্রতিদিন সকালে একমাত্র নিজের হাতেই রান্না করে। প্রতি সকালে টেপরেকর্ডার চালিয়ে বাবার গলাটা শুনে নেয়, রেসিপিটা বলছেন, যেন সামনে বসেই আছেন। মন ভালো হয়ে যায়।
সরু এবং নিখুঁত গলায় প্লে হয়।
“ পেঁয়াজগুলো এক হাতে রেখে আর এক হাতে ছুড়ি চালিয়ে বড় বড় গোল পিস করা হোল। এইভাবে কাটার ওপর ঝোলের রঙ পরিবর্তন হয়। তাছাড়া স্বাদেও তকমা লাগে। আদা আর রসুন কে হামানদিস্তার মাধ্যমে পেস্ট করতে হবে। অল্প রসাল হলেই হাফ গোটা অবস্থায় রেখে দিলেও চলবে। মিক্সি মেশিন যতই আসুক বাজারে, হামানদিস্তার বিকল্প কিছুতেই নেই জিশান। কিছু পরিমান দেশি গাছের সবুজ লঙ্কা থেঁতলে দিলে ভালো হয়, নয়তো আড়াআড়ি ভাবে চিরে দিলেও বিচে সমেত চলবে।
লোহার কালো কড়াই নেওয়া হোল। বড় উনুনে চটজলদি গরম হয়ে যায়। সর্ষে তেল পরিমান মত দিয়ে অপেক্ষা, গরম হওয়ার জন্য। তেলের পাক দেখে বোঝা যায়, সেটা গরম হতে শুরু করেছে। লাল গোটা লঙ্কা কয়েকটা তেজপাতার সাথে দিতেই দমকা ধোয়া ওঠে, সঙ্গে গোটা গোলমরিচ। আর ঠিক তারপরই পেঁয়াজ কুচি গুলো দেওয়া যায়। মাঝারি আঁচে যতক্ষণ না লাল হয় পেঁয়াজ, ততক্ষণ একটু দেখে দেখে নাড়তে হবে। মিনিট ১৫ পর, যখন দেখা গেল রঙ বাদামি হয়েছে, তেল পাস থেকে ছাড়ছে একটু একটু করে, কড়াই কে খুন্তিতে ধরে একটু কাত করে দেওয়া হোল সাবধানে। কড়াই এর একপাশে তেল জমা হয়েছে অনেকটা। এখানে একটা কায়দা করতে হয়।
হলুদ,ঝাল লঙ্কা, কাশ্মীরি লঙ্কা গুড়ো একেবারে ঐ তেলের ওপর দিয়ে দেওয়া হোল। তেলে সরাসরি হলুদ গুড়ো দিলে, ঝোলের কালারটা ভয়ানক সুন্দর হয়। সমগ্র পেস্ট যখন তেলে মাখামাখি, কড়াই এর পেঁয়াজ গুলো ওর ওপর ফেলে নাড়ানো শুরু করা হোল। নুন পরে দেওয়া হবে, আগে মশলাটা তৈরি হোক।
ঠিক এরপর রসুন আর আদার থেতানি যোগ করা হয়। আলতো আঁচে প্রায় মিনিট আট।
কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নাড়ানাড়ি শুরু।
আজকের রেসিপিতে ঝালটা বেশি হবে, মুখে দেওয়া মাত্রই গন্ধ টেস্টের তুলনায় খুব তাড়াতাড়ি মন জয় করে নেবে।
এদিকে জল কাটানো দই কিছু পরিমান নিয়ে ফেটিয়ে রাখা ছিল, আগে বলতে ভুলে গেছি। এই মুহূর্তেই কড়াই তে দিয়ে দেওয়া ভালো হবে।
জল এক ফোটাও এখনও পর্যন্ত দেওয়ার দরকার নেই। মাংস রান্নার সময় এটা মনে রাখা উচিৎ,জল যত কম ব্যবহার করবে, রান্না খুলবে তত বেশি। নিজের তেলে নিজেই জমে মজে যাবে।
কড়াপাকে মশলা একদম তৈরি কিছু সময় পরই।
অল্প পরিমাণ ধনে আর জিরে গুড়ো মিশিয়ে দেওয়া হোল। টম্যাটো আর দেওয়ার দরকার নেই, কারন ওটার কাজ দই করে ফেলেছে।
মশলা থেকে তেল ছাড়তে দেখা যাবে।
এবার সময় হয়েছে কচি পিস গুলোকে কড়াইতে তুলে দেওয়ার।
উহু, এই পিস গুলো কিন্তু ম্যারিনেট করার দরকার নেই। শুকনো পিস মশলায় এলেই মাখমাখ ভাব হয়ে যায়। মিনিট পনের ধরে হালকা আঁচে চলতে থাকবে মশলা ভার্সেস মাংস। মিলন সম্পূর্ণ হলেই বোঝা যায়, তেল ছেড়ে দেয়, কড়াই নাড়তে বেশ সুবিধে হয়। নিচে লেগে না থাকাই তার প্রমান। অর্থাৎ কষা সম্পূর্ণ হয়েছে।
এর পরের ধাপ, দুই ভাবে হয়, একটা কড়াই তে, অপরটা প্রেসার কুকারে।
দ্বিতীয়টায় মাংসটা সেধ্য হয় খুব ভালো, কিন্তু ওভারকুক হওয়ার ভয় থাকে, তাছাড়া ঝোলের থিকনেস অত্যন্ত পাতলা হয়। কাস্টমার পছন্দ নাও করতে পারে। প্রতিবার সিটিতে আসল গন্ধ অর্থাৎ ফ্লেভারটাই বেড়িয়ে যায়।
তাই আমার ভাবনা, প্রথম পধতিতেই কড়া ভালো।
তাই কড়াই তে কিছু জল গরম করা ছিল। ঢেলে দেওয়া হোল মশলা সমেত কষা মাংস। চন্দ্রমুখী কটা আলু আগে থেকে ভাজা করে রাখা থাকলে, মিনিট ২০ পর এই ঝোলে দিয়ে দেওয়া হোল।
কড়াইয়ের ওপরে কিছু একটা কভার দিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া ভালো, একটু সময় ধরে।
সব যখন টগবগ করে ফুটছে, আঁচ বন্ধ করে গরম মশলা ওপরে ছড়িয়ে বড় থালা চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হোল।
গরম পরিবেশন করলে যে খায় সে আনন্দ মনেই খায়, আর ডুবে যায় স্বাদে। “
মশলা তৈরি পর্ব -
গাড়িতে ওঠার পর থেকেই নন্দনের গতিক ভালো ঠেকছে না। যে ছেলে এত বকবক করে, আমায়
সিনিয়র ভেবেও গ্রাহ্য করে না,এই কেসের ঐ সমস্যা হেনা তেনা নিয়ে তাকুরতুকুর করতে
থাকে, সে একদম স্পিকটি নট।
“ কি রে, চুপ মেরে গেছিস সেই তখন থেকে, কি ব্যাপার? কিছু হয়েছে ?”
“ সেই সকাল থেকে দৌড় চলছে, তোর কথা শুনে একটা চা বিস্কুট টেনে চলে এলাম। বউ এর
কাছেও ঝাঁটা খেয়ে হজম হয়ে যায়, কিন্তু এই খিদে হজম করি কি করে ?”
“ওহ এই ব্যাপার ?”, আমি বললাম।
“ থাক ভাই। বিয়ে তো করিসনি, আর বুঝবি কি। আজকের সুস্বাদু টিফিনটা পর্যন্ত তোর জন্য
আনতে পারিনি তাড়াহুড়ো করে।“
ওহ, পেছন থেকে গ্রীষ্মের গরম হলকা আসছে। এর মুখ বন্ধ না করালেই নয়, নয়তো আবোলতাবোল
বলা যা শুরু করেছে, আমরা কলকাতা যাওয়ার আগেই এ বোধয় পাগল করে ছেড়ে দেবে।
“ থাম তুই,
কোথায় খাবি বল। আজ আমি
খাওয়াবো তোকে। এই তো কোলাঘাট ক্রস করছি আর দুই মিনিটে।“
মজা পেয়েছে বোধয় কথাটায়। পেছন থেকে একপ্রকার আনন্দের চাপড়ানো পেলাম পিঠে।
“ ব্রাভো ব্রাদার, তাহলে চল ঐ রেস্টুরেন্ট এ একবার যাওয়া যাক।“
“ এখানে আবার রেস্টুরেন্ট কই, সামনে তো ধাবা পড়বে।
“
“ আরে না, ঐ ধাবার পরেও একটা ছোট্ট রেস্টুরেন্ট পড়ে রে।
ওটায় খাবো ।“
“ ওখানে কোন রেস্টুরেন্ট আছে নাকি ? তাজ্জব ”
“ আরে হ্যাঁ আছে, অনেক আগে থেকেই ছিল। আসলে তেমন খরিদ্দার হতো না। তবে কিছু
সময়ের মধ্যে দারুন নামডাক করে নিয়েছে। তুই আর কথা বারাস না, চল। দুপুরের লাঞ্ছটা
তোর পকেট কেটে খাবো। “
রাস্তার বামে খোলামেলা জায়গা।
খুব সুন্দর ভাবে রঙ করা হয়েছে, দুপাশের দুটো পিলার
বাঁশ। ওপরে একটা শক্ত বোর্ডের প্ল্যাকার্ড,
“ জিশানের খানা পিনা “। দেখনদারি কিন্তু বেশ আছে।
আর যাইহোক, পাশাপাশি ধাবার থেকে অনেক গুনে সুন্দর ও
চকমকে ঝকঝক।
কৃত্রিম সুন্দর এই গেট পেড়িয়ে সামনে একতলা রেস্টুরেন্ট।
শুরুতেই ছোট্ট কাউন্তার একদম মাঝখানে বসানো, একজন বসে আছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে টাকা এখানেই দিয়ে, মৌরির কৌটোয় কবজি ডুবিয়ে নিয়ে মুখে চিবোতে চিবোতে বেড়িয়ে আসছে।
পসার
যে ভালই হয়েছে, সেটা বোঝা যায় এই লোকটার টাকা গোনার ব্যাস্ততা দেখে। লোক না ছোকরা
বলাই যায়।
পুলিশের দুটো পোশাক এগিয়ে আসছে। ছোকরা তৎপর হোল। বসে থাকা অবস্থায় টাকা গুনতে
গুনতে দাড়িয়ে পড়ল। নন্দনের দিক থেকে নজর আমার দিকে। ডান হাতে টাকার বাণ্ডিল, উঠে
গেল কপালে, স্যালুটের ভঙ্গিতে।
এগিয়ে সামনে এসে, “ ভাত হবে ? “
কথা বলেনি ছোকরা। শুধু মাথা নাড়ল। একটু আদটু ভয় পাওয়া ভালো অবশ্য।
সারা ঘরে মোট ছটা টেবিল পাতা রয়েছে। প্রতিটায় চারটি
চেয়ার। সবগুলই ভর্তি মোটামুটি।
শেষেরটা বাদে।
নন্দনের দিকে তাকালাম। সবুজ সিগন্যাল।
বসার সাথে সাথেই সবুজ কলা পাতা দিয়ে গেল। সদ্য কাটা, দেখেই বোঝা যায়। ডান হাত দিয়ে
জল মুঠিতে নিয়ে ছড়িয়ে পরিস্কার করা নন্দনের বরাবরের অভ্যাস। আজ নয়, সেই ছোটবেলা
থেকে দেখে আসছি। কোথাও একসাথে খেতে গেলেও ওটা করত।
“ কিরে সেজে গুজে বসে রইলি, অর্ডারটা দে। “, বললাম।
“ কি অর্ডার দেবো , মেনু কার্ড কই ?”, নন্দন বলল।
“ ছাপোষা রেস্টুরেন্ট, তার ওপরে আবার মেনু কার্ড ? তুই পারিস বটে। কথাটা বলে ঐ
ছোকরাটাকে ডাকলাম, যে এখুনি মাটির ভাঁড়ে জল দিয়ে গেল।
“ এখানে কি পাওয়া যায় রে ? খুব খিদে পেয়েছে। জলদি বল। “
“ ভাত, আর কচি পাঁঠার ঝোল “
“ আর ?”
“ এই দুপুরে এটাই পাবেন, বাবু “, আমতা স্বরে বলল ছেলেটি। বুঝলাম, ছোটখাটো জায়গায়
আর কি হবে। মাংস কেমন হবে,
জানি না।
দাম তো মন্দ নয়।
“ কি রে, কচি পাঁঠার ঝোলের সাথে মাংস থাকবে তো ?”, একটু ইয়ার্কি করেই বললাম।
সাথ সাথ ২টো ফুল প্লেট সঙ্গে ভাত এর অর্ডার দিয়ে বসে রইলাম।
“ কেসের ব্যাপারে কিছু ভাবলি ?”, আমাকে বলল নন্দন।
“ দেখ, এটুকু জানি, কিডন্যাপ মোটেও নয়। তাহলে সে গেল কোথায় ? এটাও বোধয় আগের ছটা
কেসের লিস্টে যোগ হবে।“
মন মেজাজ একটু তিরিক্ষি হয়ে গেছে আমার ,
“ আরে কি করে শুরু করবো বলতো। দৌড়ে শুধু ইনফরমেশন
কালেক্ট করছি। এছাড়া কি করবো বলতো। ওটা ছাড়া আমরা তো অচল। অফ ডিউটিতে বেড়িয়ে যে
কিছু করতে পারবো, তাও নয়। সমস্তটাই বেশ ঘেঁটে আছে রে।“, বললাম।
“ আছা, এমন নয়তো,ছেলেগুলো বাড়ি থেকে বেরছে, কারোর সাথে দেখা করতে যাচে, আর তারপর সে
গুম করে দিছে ?”
“ কি রকম ?”
“ এই মনে কর, আইবুড়ো ছেলে গুলো। ধরে নে, কোন মেয়ের সাথে দেখা করতে গেছে, আর সেই
মেয়েটাই ওকে মেরে ফেলে গুম করে দিয়েছে ? ”
“ তুই এসব আজগুবি গল্প ফাদা বন্ধ করবি ? কোথায় পাস বলতো ? এই জন্য বলেছি, ফেসবুক
ঘাটা বন্ধ কর। যতসব গাজাখুরি গল্প ফাদে। “
“ আরে আরে, চটছিস কেন ? মেয়েরা খুব বিপজ্জনক হয় রে। আজকাল কার মেয়ে তো, অনেক বুঝে
শুনে না চললে...“
“ যদি তুই চুপ না করিস নন্দন, আমি কিন্তু চললাম। খিদে কিন্তু তোর একার পায়নি। আর
খিদে পেলে আমার মাথা এমনই কাজ করা বন্ধ করে দেয়।“
হঠাৎ করে মাথায় ঝিলিক খেলে গেল আমার। কথা স্টপ করে,
“ একমিনিট। তুই একটু আগে কি বললি নন্দন ? ”
হড়কে গেল নন্দন,“ মেয়েটা গুম করে “
“ না তার আগে... “
মাথা চুলকে, “ ছেলে। আইবুড়ো ছেলে... “
“কারেক্ট! সবকটা ছেলেই আইবুড়ো। মাথায় আসেনি এর আগে... “, নিশ্বাস ছেড়ে বললাম।
“ আজকের ছেলেটার স্ট্যাটাসটা দেখত।“, বললাম।
দেখতে হবে না ডিয়ার। এটাও আইবুড়ো। আমি আগেই লক্ষ্য করেছিলাম। বুঝতে পারিনি
ব্যাপারটা।
কথাটা শেষ করার আগেই, কচি কলাপাতায় গরম ধোয়া।
আহ! গরম ভাতের সাথে কলাপাতার সম্পর্কটা একটু মাখও মাখও। সুন্দর গন্ধটা খিদে নাচিয়ে
তোলে আরও বেশি করে।
সিঁথিতে অল্প নুন, পাশে একটা লেবুর বাটি। সঙ্গে ঝুরি ঝুরি আলুভাজা। আর একটা মাটির বড় বাটিতে রয়েছে লাল টকটকে ঝোল, একটা
গোটা আলু, আর দুই পিস মাংস। এক একটা পিস পেল্লাই সাইজের। খিদের জন্য কিনা জানিনা, আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে
পারিনি। একপিস লেবু ডান হাত দিয়ে নিয়ে ভাতের ওপর টিপে ফেলছি। নন্দনের দিকে তাকালাম,
অন্য সময় দুজনেই একসাথে স্টার্ট করতাম, কিন্তু আজ সেটা রক্ষা করতে পারিনি। লজ্জা
মুখটা ওর দিকে দিতেই দেখলাম, ব্যাটা ছেলে তো অলরেডি পিস মাংসে মুখ বসিয়ে দিয়েছে।
লজ্জার মাথা যাক নিপাত, আগে হোক ভুরিভোজ।
খুব সত্যি কথাটা বলতে ইছে করছে। খাবার আনার পর থেকেই যে গন্ধটা নাকে আসছিল, সেটা
নিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম খাবারটা অনেকটাই আলাদা স্বাদ দেবে। এখন দেখছি, যেটা ভেবেছি
তার থেকেও শতগুণে ভালো। ঝোলটা একেবারে জুসের মত, এমনটা আমার মুখে আজ পর্যন্ত জোটেনি।
প্রথমত মাংসটা সফট, গায়ে হালকা চর্বি লেগে রয়েছে, আলাদা করে টেস্ট আনার জন্য।
মাংসের পিস থেকে টুকরো গুলো আসতে আসতে খসে পড়ছে,লেয়ার লেয়ার করে, দাতে চাপ দেওয়া
মাত্রই। ভেতরটা সম্পূর্ণ জুসি, আর টেস্টই অবশ্যই।
গোলমরিচের ঝালটা দারুন লাগছে। কাশ্মীরি লঙ্কার অতিরিক্ত পরিমান রঙের সাথে ঝালের
গুন বাড়িয়েছে একটু বেশি।
এক পিস আলু, সাইজে বেশ বড়। চন্দ্রমুখী কি এতোটা বড় হয় ? ধুর অতো ভেবে কি হবে, খেতে
থাকি।
মিনিট পাঁচেক পর যখন ভাতের আর দুই মুঠো বাকি, মাংসের প্লেটের দিকে তাকালাম,
পুরোটাই ঝোল, তাও অল্প।
আর একটু ভাত নিলে হতো না ? মাংসটাও যদি নেওয়া হয়, হুস করেই কখন শেষ হয়ে গেছে।
এই ভেবে নন্দনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠেছি।
আমার দিকে ও অনেক আগে থেকেই তাকিয়ে আছে, আমি বুঝতে পারিনি। অপেক্ষা ঐ দিক থেকে
ছিল, অনেক আগে থেকেই।
চোখে চোখে যা বলার যা বোঝার দুজনেই বুঝে গেছি।
ছোকরা কে ডেকে চটজলদি টেবিল টা আবার ভর্তি করার নির্দেশ দিলাম।
“ সত্যি রে বিবেক, মুখে লেগে থাকার মত। আমি অনেক দিন ধরেই এর নামডাক শুনেছিলাম।
এমন স্বাদের জাদু হলে, রেস্টুরেন্ট যেখানেই হোক, দাড়িয়ে যাবে, কি বলিস? “
নন্দনের কথা মিথ্যে নয়। নিজেই বলছি আমি, এতোটা সুস্বাদু খাবার আজ পর্যন্ত চাখিনি।
কোলকাতার তাবড় তাবড় বড় রেস্তরা মার খাবে।
“ একটা কথা ভাবছি, শুনবি ?”, বললাম।
ঠিক এই মুহূর্তেই টেবিল ভরে উঠলো ভালবাসার গন্ধে। কথা রইল পড়ে। এখন শুধু খানা
পিনা।
অনেকটা দিন পর এমন খাবার খেলাম। মাংসের টানে এক্সট্রা ভাত নেওয়ার অভ্যাসটা অনেক দিন বাদে ফিরে এসেছে। নন্দন
না বললে হয়তো এমন রস রাজের খোঁজ পেতাম না এই জন্মে।
মাংসের শেষ টুকরোটা মুখে ঢুকিয়ে বললাম, “ এই জিশান লোকটার সাথে দেখা করতে হবে।“
সুরুৎ সুরুৎ করে আওয়াজ করতে করতে খাছিল নন্দন। আমার কথা শোনার সাথে সাথেই হাড্ডি
পাইপটা রেখে দিল, “ কেন রে ? কি দরকার ?”
“ এই রান্নাটা কে রাধে তার সাথে কথা বলতে চাই আসলে। রেসিপিটা চাইব, না দিতে চাইলে
পারিশ্রমিক দেবো।“
“ তোর মনে হয়, কেও এমন একটা কাজ করবে ? নিজের দোকানের সিক্রেট রেসিপিটা কেও কারোর
কাছে বিক্রি করবে ? তাহলে তার রেস্টুরেন্ট এর কি হবে ভাই ?”, নন্দন বলল।
“ আরে আমি তো আর দোকান খুলে বসছি না , ওকে সেটাই বলবো। তাছাড়া জামার রঙ দেখলে
নিশ্চয় একটু হলেও মিনমিন করবে।“
আমার আত্মবিশ্বাস দেখে নন্দন খুশি হয়নি মোটেও। সামনের ঐ ছোকরা কে ডাকলাম, যে
বসেছিল মাঝখানে, টাকা গুনছিল।
“ তোদের বাবু কই রে ? একটু কথা বলার আছে ? ডেকে নিয়ে আয় ”।, গলা একটু গমগমে
করেছিলাম।
“ কেন স্যার, কিছু কি ভুল হয়ে গেছে ?”, ভয় পেয়েছে, ওর বলার ধরন দেখেই বোঝা যায়।
“ মুখে মুখে কথা না বলে তোদের বাবু কে ডেকে আনলেই তো হয়, এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।“,
সুর একটু নরম করেছিলাম।
“ বাবু এখন তো আসতে পারবেনা, এখন রান্না করছেন। আজ শনিবার তো, দূরের বাস বেশি
দাড়ায় এখানে। আগে থেকে মাংস না করে রাখলে সামলাতে পারবো না। তাই...”
আসল পাচক ঠাকুর তাহলে ইনিই, স্বয়ং জিশান। চোখে চোখ পড়ল আমার আর নন্দনের।
“ কোথায় রান্না করছে বল, আমরা একটু যাই, দেখা করে নি।“
“ আপনারা যাবেন ? “
নন্দন ওদিকে আমায় ইশারা করল। আমি বুঝতে পেরেছি ও আমার এমন কথায় অবাক। হতেই পারে
খাবার ভালো লেগেছে, তাই বলে দেখা করতে হবে, এ কেমন কথা। ছোটখাটো দোকানে এমন ভালো
খাবার পাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার তেমন নেই। তবে নন্দন এটুকু জানে, ভালো জিনিসের সন্ধান
পেলে আমি তার শেকড় পর্যন্ত যাই। সেটা ক্রিমিনাল হোক অথবা ছোটবেলার টিচার খোঁজা।
“ কিরে, কি বলছিস ? কলকাতা যাবি না ?”, নন্দন বলছে।
“ হ্যাঁ, যাবো তো। কিন্তু যার হাতে এমন করিতকর্মা জাদু রয়েছে, একবার দেখেতে চাই।“
“ কেন ? কি দরকার ?”
“ ওকে জিজ্ঞেস করবো, রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে এসেছিল কিনা ?”
কষা পর্ব -
কথাটার মানে নন্দন বোঝেনি। মুখটা অমন পাঁশুটে করে রয়েছে।
“ চল চল, তোদের বাবুর সাথে দেখা করে আসি।“, তারা লাগালাম আমি ছোকরা কে।
নন্দন আর তেমন কিছু না বলে, আমার পেছন ধরল।
আমি সাধারণত দুটো জিনিসের প্রতি খুব আকৃষ্ট হই।
ভালো খাবারের গন্ধ, অপরটা ক্রিমিনালের গন্ধ।
এখানে যদিও প্রথমটাই এসেছে।
বসার জায়গা পেড়িয়ে এককোণে ডান দিকে, ছোট্ট বেসিন। কলের ব্যাবস্থা নেই, জল তুলে
তুলে ঢালতে হয়। ওটার গায়ে লাগোয়া একটা গেট, কাঠের। ছোকরা সেখান থেকে ঢুকল। সামনে আর
একটা ছোট্ট ঘর, চিটে বেড়া। বেশ শক্ত পোক্ত করে বানানো। সূর্যের আলো ঢুকছে, ঠিকরে।
পাশে রয়েছে দুটো বড় বড় হাড়ি, লালহলুদ খাসি মাংস, কাঁচা। পেঁয়াজ গোল গোল করে কাটা,
আদা রসুন এর থেঁতলানো জামবাটি ভর্তি। হামান দিস্তায় লেগে রয়েছে। সামনে একটি বড়
মাটির উনুন। পাশে কাঠ, পাটকাঠি, ঘুটে রয়েছে, জালনের কাজে লাগে।
বাইরে রেস্টুরেন্ট এর অবস্থা তো তফা, তাহলে রান্না এখানে কেন করে, ভালো একটা ঢালাই
জায়গা করে নিলেও তো পারে।
“ কি ভাবছেন ? মাটির উনুনে রান্না করি কেন ? আমার বাবার করে যাওয়া জায়গা। সেজন্যই স্বাদ
খোলে পুরো তরে। নমস্কার, আমি জিশান।“
পেছন থেকে কোন একজন যে আমাদের পেছনে এসে দাড়িয়ে পড়েছে, বুঝতে পারিনি। আমি যে কি
ভাবছি, আশ্চর্য ভাবে বুঝতে পেরেছে।
নমস্কারের প্রতি নমস্কার জানিয়ে দেখলাম, চেহারা অতি স্বাভাবিক, তবে পেটানো বডি।
হাতের মাসেল মুগুর ভাজার ছাপ বোঝায়। কাঁধে লাল সাদা চেক গামছা, নীল স্যানদ্যো
গেঞ্জি, নিচে লুঙ্গি হাফ ভাজ করে কোমরে তোলা। মালিক কম, বাবুর্চি ছাপ বেশি। সেটাই
স্বাভাবিক।
“ সরেন স্যার, এগুলো একটু এখানে রাখি।“ বলে জিশান সদ্য কাটা মাংসের অংশগুলো রেখে
দিল সামনে।
“ বলেন স্যার এখানে কি জন্য আসা। “
“ এখানে এসেছি অন্য কারনে। তবে আপনার দোকানে এই প্রথম। আপনাকে দেখতে এলাম, যে
রেস্টুরেন্ট এ এত সুস্বাদু খাবার রয়েছে, তার মালিক এর সাথে একবার পরিচয় করা দরকার
বইকি।“
“ লজ্জা দেবেন না স্যার, সবই আপনাদের কৃপা। আমি আজ মালিক সেটা ঠিক, কিন্তু বাবা
এটার ভিত দেন। সবই বাবার জন্য। আমি তো শুধু কাজ করি।“, চেহারার সাথে গলার তেমন মিল
নেই, তবুও বেশ মায়া ভরা।
“ বাহ, এটা ভালো বলেছেন তো। একটা কথা জিজ্ঞেস করি, রান্নাটা কি একাই করেন ?”
“ নাহ, বাবা সঙ্গে থাকেন। বাবার দেওয়া রেসিপিটাই আজও চলছে।“, কথাটা বলে গলা তে
ঝোলানো কার বার করল, ছবির একটি লকেট। বাবার প্রতি ভালবাসা প্রচণ্ড।
“ একটা কথা না জিজ্ঞেস করে পারছি না আপনাকে, এত সুন্দর মাংস রান্না কি আদেও সম্ভব
? আমার কলকাতায় অনেক রেস্তরায় ঢোকার
অভিজ্ঞতা রয়েছে, প্রতিটাই বেশ ভালো লাগে। তবে তার কোন ধারে কাছে যায় না এই মাংস। একবার যদি মুখে লেগে যায়, ওসব কিছু
ভুলক্রমেও ভালো লাগবে না। এত সুন্দর মাংস পেতেও তো আপনার খাটনি ? “
নিজের সিক্রেট বলতে কার্পণ্যবোধ করার ছেলে নয় জিশান।
গোলমরিচ গুলো ওদিকে সরাতে সরাতে হাত ধুয়ে আমাকে বললেন, “ আসেন স্যার আমার সাথে। “
এই বলে ঐ স্থান থেকে বেড়িয়ে পড়লেন।
“ শিবেন, তুই এইদিকটা দেখ। আমি স্যারদের একটু ঘুড়িয়ে আনছি”, এই বলে হাইওয়ের বিপরীত দিকে হাঁটা শুরু করল
জিশান। ওদিকে তাকিয়ে দেখলাম, কাউন্তার যে সামাল দিছিল, সে মুখ বাড়িয়ে হাত নেড়ে
নেড়ে বুঝিয়ে দিল, সে সামলে নেবে।
মিনিট খানেক হাটার পর একটা সবুজ জমি। তার ঠিক ঐ পাড়ে, বড় একটা জায়গা। একতলা ছোট্ট
বাড়ি। তার পাশে কত গুলো ছাগল চড়ছে। এক একটা পেল্লাই সাইজ। কচি পাঠার তো এমন আকার হওয়ার
কথা নয়। নন্দন এতক্ষণ চুপ করে ছিল। আমার কথা ভেতর থেকে আঁচ করেছে। পেছন থেকে জাপটে
ধরে নন্দন কানে কানে বলল,
“ এগুলো কচি পাঁঠা নাকি খাসি বলতে পারবি ?”
“ আমারও সেরকমই সন্দেহ লাগছে। পাঁঠা বলে খাসি খাওয়ানোর রেয়াজ আমাদের কলকাতায় বড়বড়
রেস্টুরেন্ট এই হয়, আর এখানে আর নতুন কি। তবে খাওয়ার পয়সা যেমন নিছে, তেমনই অপূর্ব
স্বাদের ভাগ বসাতে দিয়েছে, এটুকু মানতেই হবে। “
একতলা সমান বাড়ি। ছোট্ট, বেশ সাজানো বাইরে থেকে।
জিশানের থাকার জায়গা সম্ভবত। মেইন দরজার সামনে বেশ সাজানো, অনেক ফুল গাছ। বাড়ির এক পাশে স্নানঘর, আর কিছুটা বড় জায়গা। বাড়ির
ডান পাশেই একটা জমি, বেশ বড়।
আমরা এসে দাড়িয়ে পড়লাম।
ঐ জমির দিকে চোখ গেল। খান দশেক ছাগল
চড়ছে ওখানে। বেঁধে রাখা অবস্থায়।
নন্দন আর আমরা মনের ভাবনা গুলো লুকিয়ে রেখেছি।
“ আপনি এখানে ছাগল বেঁধে রেখে যান, চুরি হয়ে যায় না ?”
“ না স্যার, মাঠের মাঝখানে ঘর, এখানে তেমন কেও আসে না। একটা গোটা ছাগল লুকিয়ে নিয়ে
কি লাভ স্যার, এই তল্লাটে আমার ছাগল কাটার মত কারোর ক্ষমতা নেই, এই বলে দিলাম।“
ছেলেটার আত্মবিশ্বাস দেখে আমি বেশ খুশি হলাম।
“ তবে স্যার, আমায় মাফ করবেন, একটা মিথ্যে বলেছি।“, মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল।
“ মিথ্যে ?”, আমি চমকে উঠলাম।
“ আমাদের ?”
“ হ্যাঁ স্যার, আসলে এরা কোনটাই পাঁঠা নয়, সব কটাই খাসি। কিন্তু মেনু কার্ডে আমি
পাঁঠা বলেই চালাই।“
নন্দন আর আমি নিজদের দিকে চোখ দেখাদেখি করলাম। যে ভাবনাটা দুজনের মনে এসেছে, সেটা
অতিমাত্রায় সঠিক। সেটা আমরা যে বুঝতে পেরেছি, তা জানতে দিলাম না,
না বোঝার ভান করলাম মাত্র।
“ ব্যাপারটা ঠিক করে খোলসা করো দেখি ?”
“ হ্যাঁ স্যার, বলছি। তবে এসব আপনারা বাইরে বলবেন না যেন। আর আপনাদের পয়সা লাগবে
না। আমি বলে দেবো শিবেন কে। “
একটা বসার জায়গা ছিল,বসলাম। নন্দন দাড়িয়ে ছিল পেছনে ঠিক মাথার কাছে, যতই বন্ধু হই,
এখানে আমি স্যার।
শহরের মানুষরা আসলেই খাসি আর পাঁঠার পার্থক্য বোঝে না। অথচ এটুকু পার্থক্যে
খাবারের প্লেট এর স্বাদে আমুল পরিবর্তন আনে।
খাসি আর পাঁঠা, দুজনেই পুরুষ প্রজাতির। তফাৎটা ঘটে যখন একটা পুরুষ ছাগল জন্মানোর কিছুদিনের
মধ্যেই অণ্ডকোষ কেটে ফেলে দেওয়া হয়। তখনই একটা পাঁঠা পরিনত হয় খাসি তে।
প্রজননে অক্ষম হলেও বেশি মাত্রায় খাওয়া দাওয়া শুরু করে এরা। ফলে শরীর হয় রুষ্টপুষ্ট, চাবুকের ন্যায়। পাঁঠার গায়ের
এক প্রকার গন্ধ খাসিতে আর থাকে না।
ভালো মেদ জমলেই, সেটা রেওয়াজি খাসি বলে চালানো হয়।
আমার এখানে সবই খাসি প্রায়। তবে একটা দুটো পাঁঠা করে রাখতে হয়। নয়তো মুস্কিল। “
“ কি মুস্কিল ? গুছিয়ে বলেন, শুনতে কিন্তু বেশ লাগছে। “
পেছনে তাকিয়ে আয়েশে বললাম,
“ওহে নন্দন, আজ কলকাতা যেতে একটু লেট হোক। কাল থেকে ফুল দমে লেগে পরবো। ভাত ঘুম
এসে গেল যে। “
হাই উঠলো।
জিশান আমতা আমতা করে মাথা চুলকে, নন্দনের দিকে লজ্জাভাবে তাকিয়েছে। নন্দনের ইশারায়
সম্ভবত আবার বলা শুরু করল।
“ স্যার, সবগুল খাসি করে ফেললে তো বাজার থেকে মাংস কিনতে হবে। বাজারে পয়সা বেশি
দিয়েও মনের মত খাসি তো পাওয়া যায় না। তাই আমি কিছু ছাগল কে পাঁঠাই করে রাখি। ওরা
মাদি ছাগল কে আকর্ষিত করে খুব সহজে। গা থেকে কি একটা জিনিষের গন্ধ বেরোয়। সেই
টানেই ওদের সঙ্গম ঘটে। “
পেছন থেকে “ ক্যাপ্রিক অ্যাসিড, সঙ্কেত C10H20O । ফোর, ইথিল অকটানাল। ছাগলের শরীরে এটাই বেশি থাকতো। যার জন্য গন্ধটাও তেমন
হতো, সাঙ্ঘাতিক রকমের । “
কেমিস্ট্রি একমাত্র বিষয়, যেটায় ছিল নন্দন আমার থেকে এগিয়ে। আসলে আমার কিছুতেই
অরগানিক চ্যাপ্টারটা মাথায় ঢুকত না। ইন অরগানিক তো গুলে মুখস্থ মারতাম।
জিশান, “ স্যার,একটা কথা বলি। মাদি ছাগল কেও বাজারে বেচা হয়, তবে খুব কম।
বাজারে যেখানে সস্তায় ছাগল কিনতে পাবেন, ধরুন কেজিতে
২০০ টাকা কম, জানবেন সেগুলো মাদী। আসলে বার বার প্রজননের ফলে ওদের মাংসের টেস্ট
একেবারেই কমে যায়। “
“ অনেক কিছুই তো জানেন দেখছি। “
“ স্যার, এই কাজে আছি, এটুকু তো জানবই। তবে আপনি তখন বললেন না এমন সুস্বাদু মাংস
হয় কি করে। পাঁঠা গুলো যা খায় খাক, আমি খাসিগুলোর জন্য স্পেশাল কিছু রাখি। সবসময় সেটা কম বেশি পেয়েই যাই, কিন্তু খাবারের সাথে
অল্প করে দিয়ে দিলে ওরা খায়। যার শরীরে যেমন ঘাটতি, অন্য ভাবে পূরণ করলে শরীর ভালো
থাকে। আপনার শরীরে যদি লবনের পরিমান কম হয়, আপনাকে লবন জল খেতে বলেন ডাক্তার, এটাও
তেমনই “
“ বাহ বাহ। দারুন বলেছ তো।“
জিশান শুধু হাসল মাত্র।
“ তাহলে পাঁঠা কে খাসি করার কাজটা কে করে ?”
“ ঐ যে জায়গাটা দেখছেন, বড় আকারের। ওখানে আমি নিজে ঐ কাজটা করি। পাশে হেল্পিং
হ্যান্ড থাকে অবশ্য। একা একা সম্ভব নয়। “, ঘরের ভেতরের জায়গা দেখিয়ে বলল।
“ কি ভাবে করো শুনি “, কঠিন প্রশ্ন আমার।
এমন ভাবে সব কথা বলা যায় নাকি। জিশান এখন মনে মনে তেমনটাই ভাবছে বোধয়। এত কথা
বলছে, আর এটুকু বলতে কি আর দোষ।
মাথা চুলকে নিয়ে,
“ উঁচু একটা জায়গায় ছাগলটা রেখে পিছনের পা দুটো টেনে সামনে আনতে হয়। এরপর
অণ্ডকোষকে ৩% টিংচার দ্রবন দিয়ে ভালো করে মুছে দিয়ে চামড়ার বিপরীতে চেপে ধরে
টানটান করে চামড়ার নিচের দিকে এক টানে কেটে ফেলতে হয়। কোষ দুটি বার করার পড়ে রগ
কেটে ফেলে, থলিতা আবার টিংচার অব আয়োডিন দ্বারা ...”
গলার ভয়েস আসছে পেছন থেকে, অর্থাৎ নন্দন। ও এসব জানল কি করে।
সাথে সাথে পেছনে তাকাতেই,
সামনে সজোরে একটা আওয়াজ হোল। দুই পায়ের ভাজের মধ্যে কিছু একটা ঘটে গেল এই
মুহূর্তে, ভয়ঙ্কর কিছু আমি বুঝতে পারছি না সেটা। মুখ ফিরিয়ে তাকাতেই টের পেলাম প্যান্টের চেনের জায়গাটা
আর নেই। হাত দিয়ে বড্ড ভেজা লাগছে।
থলথলে মাংসপিণ্ডের দলা পাকানো একটি
রক্তাক্ত গহ্বর। কোন ব্যাথা লাগছে না এই মুহূর্তে। একেবারে অবশ। আমি বুঝতে পারছি
না কি হোল। দেহের এই অঙ্গটা কোথায় গেল।
মাথা তুলতেই সামনে দেখলাম, জিশানের হাতে দলা পাকানো মাংসপিণ্ড টা, ঝুলছে। তখনও গলা উঁচিয়ে নড়ছে যেন। জিশানের আর এক হাতে ধারালো
শান দেওয়া চোপার। রক্তে মেখে ছটপট করছে, লকলক করছে, আরও রক্ত খাবে বলে।
আমি আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়ছি।
পায়ে চাপ দিয়ে উঠতে যাবো, জোর পাছি না। পেছনে নন্দন কে ডাকার জন্য মাথা ঘোরালাম।
একটা বড় পাথরের চাই এসে মুখের ওপর পড়ল সপাটে, নন্দনকে তার পিছনে শেষবার দেখলাম।
“ ইশ, মাথাটা থেঁতলে দিলে গেলাম, গেল বদনটা বিগড়ে। “, আফসোসের গলা নন্দনের।
“ অসুবিধে হবে না, আমার ছাগল সব ধরনের মাংস খেতেই প্রস্তুত। তবেই না এমন স্বাদ
বেরোয় ওদের রান্না করলে। “, জিশান, মুখে পিশাচের হাসি।
বিবেকের দেহ টা মাটিতে পড়ে গেছে মুহূর্তেই। এখন মাটি শুষছে রক্তের স্বাদ।
এগিয়ে এলো নন্দন সামনে।
দুই পায়ে ভর দিয়ে মাটির ওপর বসে, কপালের মাঝে সজোরে আঘাত, একটার পর একটা।
ধিপ ধিপ করে শব্দ হছে। কপালের অংশ ভেতরে ঢুকে ছিন্ন টুকরো মত রক্ত ঘিলু মিশে চলেছে।
“ কি রে, আর আমার ওপর বাটপারি করবি ? শালা ছোট বেলা থেকে অনেক জ্বালিয়েছিস। পড়তে
গিয়ে ফার্স্ট, স্কুলে ফার্স্ট, কলেজে ফার্স্ট। সব জায়গায় শুধু বিবেক আর বিবেক।
আমার বউটাকেও ছারলিনা। তুই জানতি ও আমাকে ভালোবাসে, তাও ওর সাথে সময় কাটাটি। নিজেও
বিয়ে করিসনি, ওকেও করতে দিছিলিনা। কেন রে শালা ? আমি তোর কোন বা** ছিঁড়েছিলাম ?
শুয়ো*** বা**। ডিপার্টমেন্ট এও আমার মাথার ওপর এসে পড়লি। হারামজাদা, এখন দেখ, তুই
নিচে, আমি ওপরে। আমি ওপরে...”
চোখের মনি ভেতরে ঢুকে গেছে বিবেকের,
নন্দনের বারবার পাথরের আঘাতে। চোখের জায়গায় রক্ত কোটর ছাড়া কিছু নেই।
“ স্যার, স্যার, আর না। আপনি শান্ত হন। আমার হাতে বেশি সময় নেই। এর মধ্যেই যা করার
করে ফেলতে হবে। আপনার প্রতিশোধের আগুন নিভেছে ? “, জিশান।
মুখে চোখে রক্তের ছিটে। মুখে হাত দিয়ে মোছার চেষ্টা করল নন্দন। রুমালটা বার করে ঘেন্না ভরা মুখে একরাশ থুতু ছেটাল।
“ তোমাকে ধন্যবাদ জিশান।“ নন্দনের চোখে ঘেন্নার ছোবল।
“ বাবু, ধন্যবাদ তো আপনাকে আমার দেওয়ার কথা। আমার খাসিদের জন্য ১ মাসের খাওয়ার যে
জুগিয়ে দিয়ে গেলেন। ওদের শরীরে যেটা নেই, সেটা ওদের খাওয়াবো, বাকিটা উপরি পাওনা। শুধু রেওয়াজি বানালে এমন জাদু মাখা টেস্ট পাই না যে। “
নন্দন একটু শান্ত হয়েছে।
“ সেদিন যখন তোমার সাথে কথা বলতে এসেছিলাম খাওয়াতে পারনি আমায়, আজ আক্ষেপ টা গেছে
তোমার তাহলে ? “
“ হ্যাঁ স্যার, আপনাকে খাইয়ে আমি তৃপ্ত। “
“ তবে আমার মনে একটা প্রশ্ন, তুমি এদের বডি লুকিয়ে রাখো কোথায় ? সেটা তো বুঝতে
পারছি না।“
“ বাবু, বডি লুকিয়ে রাখার দরকার কি। মাংস গুলো সব খেয়ে নেয় এরাই, বাকি রইল হাড়গোড়।
ওগুলো উনুনের জ্বালানি হয়ে যায়। “
জিশানের মগজের তারিফ না করে পারা গেল না। জলজ্যান্ত লোক কে ভ্যানিস করে দেওয়ার সম্পূর্ণ সরঞ্জাম এখানে।
আর একটা কথা বোলো আমায়, “ গত কয়েক মাসে খাবার কি করে আসতো এখানে, শুনি । আয়েশ করে বসল নন্দন এবার সেই চেয়ারে। পায়ের নিচে, নিথর বিবেক, উলটে পড়ে আছে।
“ এটা খুব ভালো কথা বললেন স্যার। সবই রেসিপির জাদু। আপনার স্যার এর মত অনেকেই আছে,
যারা শুধু তারিফ করতে আসে আমার কাছে।
ভুলিয়ে ভালিয়ে এখানে যদি এনে ফেলতে পারি, তাহলে তো আমি একাই কাজ সেরে ফেলি।
আপনাকে সেদিনই বললাম তো।
প্রতিমাসে একজন করে এখানে আনতে খুব বেশি বেগ পেতে হতো না, হয়ও না। “
ওদের ইনভেস্টিগেশনের শিকড় আসলেই এখানে, নন্দন মোটামুটি জানত। এটাও জানত নিখোঁজ
হওয়া সব ছেলে কোন না কোন ভাবে এখানে খেতে এসেছিল। বিবেকের মাথায় একটা কথা আসেনি,
ওরা প্রত্যেকেই খাদ্যপ্রিয় মানুষ ছিল, প্রত্যেকের বাড়ির লোক এই কথা বারবার করে
বলেছে। তাছাড়া প্রত্যেকের কাজের জায়গা, এই রোডের ওপরেই পড়ে। সেজন্যই তো জেনে বুঝে এসে
জিশানের সাথে কথা বলেছিল
নন্দন।
শেষ পাতে পর্ব –
মৃত দেহ আস্তে আস্তে নগ্ন করতে শুরু করেছে জিশান, ঐ ফাঁকা মাঠে। কেও নেই যে সন্দেহ
করবে। বিবেকের দশাসই চেহারা, হ্যাঁ অনেক দিনই চলে যাবে।
“ এটা না হয় এক মাস, তারপর আবার পরের মাসের খাবার পাওয়ার জন্য চিন্তা, তাই না ? ”
“ না, আর চিন্তা নেই। “
পেছন থেকে কথাটা আসামাত্রই, নন্দন কে মাথা ঘোরাতে তর দিল না, হামান দিস্তায় থেঁতলে
গেল পেছনটা। ঘিলু বেড়িয়ে পড়েছে রক্তে মিশে, সাথ সাথ। পাকা হাতের খেলা, এতদিনে
ছাগলের ঘিলু সাইজ করেছে, এটা তো নস্যি শিবেনের কাছে। মাথার ওপর হুমড়ি খেয়ে নিশানা
ধরে হাত ওপরে তুলছে, আর সজোরে নিচে নামিয়ে দিছে। ওপরে তুলছে , আর সজোরে নিচে পড়ছে দ্বিগুণ
গতিতে। প্রতিবার থেঁতলে যাচে, আরও বেশি , আরও রক্ত মাংসের সাথে মিশে শিবেনের মুখে
ছিটছে।
একরাশ ঘেন্না ভরা মুখ নিয়ে শিবেন।
চোখে জল, শাস্তি দেওয়ার পরের তৃপ্তির জল।
“ আজ আমার বোনটা শান্তি পেলো।“, দীর্ঘনিঃশ্বাসের পর মুখ খুলল শিবেন।
“ এই কি সেই ?”, জিশান বলল।
“ হ্যাঁ, জিশান দা, এটাই সেই লোক যার জন্য আমার বোন বাঁচতে পারেনি। পাড়ার কুত্তা
গুলো ওকে খেলো। আর এই শুয়োরের
বাচ... কিনা ওদের কাছ থেকেই পয়সা খেয়ে বলছে, ওরা নির্দোষ।
সেইদিন আমার বোনটা যে আত্মহত্যা করবে বুঝতে পারিনি, বুঝতে পারিনি। জানলে আমি...”
জিশান ওর কাঁধে হাত রাখল।
বোন হারা এক ভাইয়ের কাঁধে আর এক হতভাগ্য ছেলের হাত।
“ যেদিন প্রথম তোমার সাথে কথা বলতে দেখলাম ঐ ইন্সপেক্টর কে, আমি চিনতে পেরেছিলাম।
কিন্তু কিছু বলিনি। আজ আবার এখানে আসতে দেখে, সুযোগে ছিলাম।“
“ চল চল,রাতের খাবার টা সেরে ফেলতে হবে। অনেক দেরী হয়ে গেল। আর মন খারাপ করিস নে।
এরপর থেকে কাজে মন বসবে তো তোর ?”
চোখ মুছতে মুছতে শিবেন ঘাড় নাড়ল শুধু। “
আগামি দুই মাস নিশ্চিন্ত, কি বলিস শিবেন ?”
“ হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। আইবুড়ো হলে টেস্ট আরও ভালো হয়। এই একটা ভুল হোল যা আজ।
তবে হ্যাঁ, কেও যদি যেচে এই জায়গা পর্যন্ত চলে আসে। তাহলে আমি কিন্তু আমার হাত
সামলে রাখতে পারবো না, সে আইবুড়ো হোক বা বিবাহিত “, শিবেনের হাসিমুখের কথা।
দূর থেকে রেস্টুরেন্ট এ ঢোকার সময়, জল দেওয়ার ছোকরা দৌড়ে এসেছে।
“ জিশান দা, তোমার রান্নার তারিফ করতে কে একজন দাড়িয়ে আছে। তোমার সাথে না দেখা করে
সে যাবেই না। কি জ্বালা বলতো।“
জিশান আর শিবেন একে অপরের দিকে তাকাল, মুখে এক প্রকার রক্তাক্ত হাসিটা, বড্ড
বেদনাদায়ক।
============== সমাপ্ত
==================
© সমীরণ সামন্ত
( কপিরাইট সংরক্ষিত )
#কচি_পাঁঠার_ঝোল
# কচিপাঁঠারঝোল
#সমীরণসামন্ত
#গল্প
#রহস্য
#থ্রিলার
Comments
Post a Comment