======================
পঞ্চম দিন – বাহুবলির শুটিং স্পট
©SamiranSamanta
#অন্ধ্রপ্রদেশ
#andhrapradesh
#andhrapradeshtourism
#talakonafalls
#andhra
#ভ্রমন
মন্দির তো
অনেক দেখলাম, এবার একটু স্বাদ পালটালে কেমন হয়। ত্রিপ প্ল্যানিং সেভাবেই করেছিলাম,
যাতে একদিন দৌড় হলে পরের দিন হালকা অথচ দারুন কিছু দেখতে পাব।
আজ বেড়িয়ে পড়েছি একটি ড্যাম দেখার জন্য।
তিরুপতি থেকে বেশ অনেকটা দূরে পুলিশ কোয়ার্টার এর মধ্যে পরে এই স্থানটা। ফরেস্ট
ডিপার্টমেন্ট থেকে সকল ট্রেনিং এই জায়গায় করানো হয়। ওহ, ড্যাম পরে দেখবো, আগে
ব্রেকফাস্ট হোক।
শহরের ভীড় কাটিয়ে এই রাস্তার মাঝে একটা শপ চোখে পড়ল। শপ না বলে, বাড়ি বলা যায়, যার
এক তলার গ্যারাজ এর বড় বড় অংশ গুলো দোকান হিসেবে চালায়। পাশে একটা প্ল্যাকার্ড
দেওয়া, “ ডিগ্রি কফি “। অদ্ভুত নাম না ?
কফি আবার ডিগ্রি ? কি জিনিষ ভাই...
এটার পেছনে একটা গল্প আছে, ড্রাইভারদার মুখে শোনা।
বছর খানেক আগেকার কথা, চারবন্ধু কলেজ পাশ করেছে। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কাজকম্ম তেমন ভাবে জুটিয়ে উঠতে পারেনি। উপায় তেমন কিছু ছিল না। হঠাৎ একটা আইডিয়া খেলে যায়। চারজনে মিলে কফিশপ খোলে। কফির প্রসেসটা একটু অন্য রকম। তাক লাগানো ব্যাপার হোল, এটা দেওয়ার কায়দাটা, তামা অথবা মেটালের একটা গ্লাস আর নিচে থাকবে আর একটা বড় মেটালের বাটি।
সময়ের সাথে সাথে সেই শপ ফুলে ফেপে ওঠে। আজ এই মুহূর্তে প্রায় ১৫০টি শপ ফ্রাঞ্ছাইজি নিয়েছে “ ডিগ্রি কফি “ ব্র্যান্ডের। তারমধ্যে এই শপটাও পরে।
মুলত তিরুপতি এলে, এই ব্র্যান্ড এর নাম অহরহ চোখে পড়বেই।
হুম, কফি খেয়েছি। দারুন, বেশ অন্যরকমের।
তার আগে অবশ্য প্লেন ধোসা খেয়েছি বেশ কটা। ঝাল চাটনিটা এখানে বেশ দিয়েছিল। শপের দাদাটি বেশ হাসিখুশি, কথা বুঝতে পারিনি তবে ওনার মুখে যে মাসুম ব্যাপারটা রয়েছে, সেটা খুব ভালো লেগেছে আমার। এরাই আসল খেটে খাওয়া মানুষ এর দলে পরে।
এবার চলি ড্যাম দেখতে।
গেট এ গাড়ির নাম্বার এন্ট্রি করিয়ে সাইলেন্স রক্ষা করে গাড়ি এগিয়ে চলেছে।
নামার পর দেখলাম, ঐ জায়গায় আমি আর আমরা, আর কেও নেই। আসলে এই ড্যামে তেমন কেও আসে না, পর্যটক বলতে তেমন কেও না ঢুকলেও মাঝে মধ্যে স্থানীয় গ্রামবাসীদের দেখা যায়, যেটা কিছুক্ষণ পরেই আমি দেখতে পেয়েছিলাম।
পাহাড়ি পোষাকে জল বাধনের দৃশ্য, বেশ শান্ত বেশ নীরব। সময়ে এটাও হয়তো উত্তাল রূপ দেখায়। পাখী গুলো উড়ে চলেছে, দূরে পাহাড়ের গোটা ভাঙ্গা চ্যাঁই প্রাকৃতিক শোভা বাড়িয়েছে।
দুঃখের কথা, ড্যামটা খোলা ছিল না। গেট পেড়িয়ে যে মাঝবরাবর যাবো, ওখানে থেকে জলের লেভেলের মাপকাঠি, গভীরতা দেখে পা যে দুরুদুরু করবে ভেবেছিলাম, সেটা আর হোল কই। পাশের জঙ্গলের পথে একটু খানি গিয়েছিলাম। এর পথের কোন শেষ নেই বুঝলাম, ফিরে আসার পথ ধরলাম।
পিছিয়ে এসে দুটো মন্দির। হেটে হেটে নিচে নেমে গেলাম, ড্যামের গা বরাবর। বেশ অন্যরকম অনুভূতি হয়েছিল। সবুজ গাছ, জঙ্গলের মত। স্থানীয় কিছু মানুষ সেখানে রয়েছে, কাজ করছে।
ওখানে বসার জায়গা রয়েছে। সত্যি বলছি, জায়গাটা এতোটা শান্ত, যতক্ষণ মন চায় বসেই থাকতে ইছে করবে।
বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে চললাম এগিয়ে।
এবার চলেছি, তালকনা ফলস। এখানে আসা থেকে এটা আমার কাছে দ্বিতীয় ফলস ভিজিট। এতোটা অপূর্ব কিছু দেখতে চলেছি, যেটা আমি আগে থেকে আঁচ করতে পারিনি।
ফলস আসার আগে একটা চেকপোস্ট পরে। গাড়ি অথবা লোক অনুযায়ী টিকিট কেটে নিতে হয়। এর পরের রাস্তা যেমন ভালো, তার থেকেও ভালো রাস্তার পাশের অংশ।
কিছুই নেই অবশ্য, তাহলে আমার ভালো লাগল কেন ? আসলে এই জায়গা গুলো দেখে মনে হছে, যদি নামতে পারতাম, আর সঙ্গে রান্নার জিনিষ থাকতো, চিকেন কষে ভাত মেরে দিতাম। আসলে মাঝে মধ্যে এতোটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে, পিকনিক করার জন্য উপযুক্ত। দেখেই মনে হছিল, গাড়ি থেকে নেমে চলে যাই।
মেইন গেট পড়ার আগে বামদিকে সরকারি গেস্ট হাউসের রাস্তা চলে গেছে। আমরা ওদিকেই ঢুকলাম আগে। তার কারন, এখানে যদি খাওয়ায়ার ব্যাবস্থা থাকে, তাহলে আগে থেকে বলে রাখতে হয়, ফেরার পথে লাঞ্চ হয়ে যাবে।
খাবারের সন্ধান পাইনি, তবে যেটা পেয়েছি, জাস্ট কিছু বলার নেই।
প্রথমত, এখানের শান্ত সবুজ জংলি পরিবেশের মাধুর্য। গাছে গাছে বাঁদরের হুমকি অতি অসাধারন শব্দ তৈরি করছে।
ওপরের সামনের দিকে ঝুলন্ত ব্রিজ, সেটা শুধু মাত্র যারা কটেজে থাকবে তাদের জন্য। ওদিকে যাওয়ার আগে, বাধানো জায়গা, যেখান থেকে প্রবল বেগে জলধারা বয়ে চলেছে, কোথাও ধাক্কা লেগে বুদবুদ ফেনা তৈরি হয়েছে। আসল ফলসের জল এখান থেকে যাচে, কাওকে জিজ্ঞেস না করলেও জলের গতি দেখে সেটা বোঝা যায়। ওখানেই আমরা ছিলাম প্রায় আধঘণ্টা। নাহ, মন ভরে গেছিল। খাবারের সন্ধানে এসে এমন একটা রসদ পাব, ভাবতে পারিনি আমরা কেওই।
বর্ষাকালে এখানের রূপ আরও আলাদা হবে, কল্পনা করছিলাম, ওখানে দাড়িয়ে দারুন ভাবনা আসছিল। এমন অনুভূতি এই ত্রিপ এ প্রথম।
মেইন ফলস এ যাওয়ার রাস্তা ধরলাম এবার, মাত্র ২ কিমি আর। দেড় কিমি মত গাড়িতে, বাকিটা পায়ে হেটে, আঁকাবাঁকা পথে, পাথুরে পাহাড়ি রাস্তা।
মেঘালয়ের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছিল এই ব্যাপারটা। প্রতিটা ফলস এর পথে কম বেশি এভাবেই যাতায়াত করতে হতো তো। অন্ধ্রতে এসে সেই ব্যাপারটা রিপিট হতেই, মনে মনে একটা অন্য প্রকার আনন্দ অনুভব করেছি।
আসল একটা কথায় আসি।
“ বাহুবলি “ কজন দেখেছ, হাত তোলো। ও হ্যাঁ, আমিতো আর দেখতে পাব না কাওকে, কাজের কথায় আসি। বাহুবলির প্রথম পার্টের বেশ কিছু শুটিং এখানে হয়েছে। প্রথমের কিছু সিন মনে আছে, গ্রামের সামনে একটি ফলস, যার নিচে শিব লিঙ্গ প্রতিস্থাপন করবে নিজের বাহুতে মূর্তি এনে।
প্রভাস ফলস এর নিচ থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে উঠবে। “ ধিবারা “ গানের শুটিং এর দৃশ্য গুলো এখান থেকে নেওয়া। তবে এটা ঠিক, গ্রাফিক্স এর প্রচুর খাটনি করা হয়েছে, নয়তো এটুকু জায়গাকে এমন ভাবে পরিবেশন করা মুস্কিল হতো।
গাছের একটা দৃশ্য রয়েছে মনে পড়ে ? খুব যদি ভুল না হয়, ওখানে ঐ গাছটা রয়েছে, তবে অতি ছোট। ওটাকে কাজে লাগিয়ে ভি এফ এক্স কত কি করে ফেলেছে, নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না।
পাহাড়ি রাস্তায় আমরা আসতে আসতে এগিয়ে চলেছি সিঁড়ি ভেঙ্গে। দূর থেকে গর্জন পাওয়া যাচে। পথের মাঝে, উঁকি মারছে, জল পড়ছে। একদম টপ এর ঐ সোর্সটা দেখেই আনন্দ অনুভূতি।
কিছুটা এগিয়ে গিয়ে, বিশাল কলেবরে দাড়িয়ে রয়েছে, তালকনা ফলস। জাস্ট, দেখছি চুপ করে।
এই রে,এরা কারা। কোন ফিল্মের শুটিং চলছে। অগত্যা একটু অপেক্ষা করতে হোল। তারপরই এলো সুযোগ।
ফলসের একদম কাছে চলে গেছি, জলের নিচে সোজাসুজি।
খাড়াই ওপর থেকে সোজা জল নিচে পড়ছে, হাতে ক্যামেরা, ভয় সেখানে।
রাখব কোথায় ? বান্দরের দল ঘুরছে, ছিনতাই হয়ে গেলে সব গেল। পাথরে পা স্লিপ না কাটে, জুতোটা ওদিকে রেখে এসেছি, ওদের কিন্তু ওদিকেও নজর রয়েছে। নিলে নেবে, আমি এখন ফলস উপভোগ করি।
মাথার ওপর ছিটেফোটা করে ঠাণ্ডা অনুভূতি। প্রাকৃতিক জলের ধোয়া তৈরি হয়েছে মাথার ওপরে। মুহূর্তটা কি ভাবে অনুভব করেছি, বোঝাতে পারবো না।
এটুকু বলতে পারি, বেস্ট ফিলিং বলে কোন ব্যাপার যদি থাকে, তাহলে এটা সেই লিস্টে ঢুকবে।
কতটা সময় এখানে কাটিয়ে ফেলেছি, বুঝতে পারিনি। আসলে ভাললাগার জায়গাতে সময় কখন ফুরুৎ করে উড়ে যায়, কেও বুঝতে পারে না। দেখতে দেখতে চারটে বেজে গেছে, লাঞ্ছ পর্যন্ত হয়নি। আর একটু থেকে যাই।
এখান থেকে সঠিক সময়ে বেরোতে পারলে আর একটা জায়গায় যাওয়া যেত, একটা জু, তিরুপতির সামনেই। তবে জু দেখে সময় নষ্ট করার কথা ভাবিনি। যতটা পারবো প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবো ভেবেই এসেছি।
বেশ অনেকটা সময় কাটিয়ে যখন আমরা ফেরার পথ ধরলাম, সূর্য নিভু নিভু।
আমাদের থাকার জায়গার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। কয়েক কিমি দূরে রয়েছে, “কাপিলা তিরথম ”।
এখানেও স্পেশাল দর্শনের ব্যাবস্থা রয়েছে। জায়গা আর ওদের ব্যবস্থা দেখে বুঝলাম, এখানে প্রচণ্ড ভাবে ভীর হয়। অনেক বেশি পরিমানে দর্শনার্থী আসে যে এভাবে ব্যারিকেট করে করে আলাদা রাখতে হয়েছে। সন্ধে হয়ে গিয়েছিল, তাই আমাদের সময় লেগেছিল মেরে কেটে চল্লিশ মিনিট, সমস্ত ঠাকুর বিগ্রহ দেখার জন্য।
মন্দির লাগোয়া একটি পবিত্র জলপ্রপাত রয়েছে। একমাত্র এটাই একটা মন্দির তিরুপতি তে, যেটা শুধুমাত্র শিব কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। তিরুমালা এর পাদদেশে এই জল্প্রপাত গড়ে উঠেছে।
রাতে তেমন ভাবে বুঝতে পারিনি, তবে মন্দিরের ভেতর বাইরের লাগোয়া অংশ দৃষ্টি নন্দনের জন্য সকালে বেশি ভালো। একটা বড় পাথরের চ্যাঁই রয়েছে, অন্ধকারে বেশ অন্যরকম অনুভব করায়।
অসম্ভব ফাকায় ফাকায় গিয়ে, বিগ্রহ দেখে ফিরে এসে অনুভব করলাম, আজ কি লাঞ্ছ আর ডিনার একই সময়ে করতে হবে ?
আজকের দর্শনীয় স্থান -
- কল্যানি ড্যাম
- তালকনা ফলস
- কাপিলা তিরথম
©SamiranSamanta
Comments
Post a Comment