©SamiranSamanta
#অন্ধ্রপ্রদেশ
#Andhrapradesh
#HorsleyHills
মন মেজাজ একদম ফুরফুরে। যেমন চেয়েছি ঠিক তেমনটাই দেখতে পেয়েছি লেপাক্ষী তে। কিন্তু ঘড়িতে বাজে দুপুর ২টো প্রায়। এখন তো ডাইরেক্ট হোটেলে যাবো না। আজকের শেষ ডেসটিনেশন হর্সলে হিলস, ফেরার পথেই পড়বে যদিও। যেতে তো সেই দুই আড়াই ঘণ্টা পথে চলে যাবে, অন্ধকার হয়ে গেলে পাহাড়ি স্থানে এমনই ঢোকা যায় না।
দুরুদুরু বুকে সময় নষ্ট না করে ড্রাইভারদা কে গাড়ি ঘোরাতে বললাম, “ দাদা, একটু দেখুন না, ম্যানেজ করা যায় কিনা...”
সেই যা বলা, ব্যাস। ৪ টে ১৫।
হিলস এর চেকপোস্ট ক্রস করলাম।
১৮৬৩ সালে, একজন ব্রিটিশ কালেক্টর ডব্লিউ এইচ হরস্লে গরমের তাপ থেকে বাঁচতে জঙ্গলে একটি রেস্ট হাউস বানান। তারপরে একটার পর একটা বাংলো তৈরি হয়। মেহগিনি, ইউক্যালিপটাস, সিলভার ওক গাছ লাগান, এমনকি কফির চাষ পর্যন্ত করা শুরু হোল ইংরেজ আমল থেকে। সেই সময়ে ভাল্লুক, বন্য শুয়োর, জংলী মোরগ, সাপ দেখা যেত। এখন আপাতত আমি পেয়েছি বাঁদরের দেখা।
মিনিট দশ ধরে ওপর রাস্তায় উঠে চলেছি। রাস্তার ধারে, মাঝে বাঁদর এর আনাগোনা। সূর্য ডোবার পথে, পরিবেশ নিস্তব্ধ। বাম হাতটা কিছুটা বাইরে এলিয়ে দিলাম। জানালার কাঁচ খুলে ঠাণ্ডা হাওয়া উপভোগ করছি আর মনে মনে ভাবছি, যাক এলাম শেষমেশ।
গাড়ি পথে নিজেদের অতি ক্ষুদ্র মনে হয়েছিল এই বড় বড় পাথর গাছ এর সামনে।
গাড়ি একটা জায়গায় পার্ক করিয়ে এগিয়ে গেলাম ভিউ এর দিকে। প্রথমে গেলাম ওপরের ভিউতে।
গাছপালা ঘেরা সবুজ পথে একটা বাঁদর বসে ছিল। ক্যামেরাটা হাতে নেওয়া মাত্রই বেশ গম্ভীর ভাবে চিৎকার করছিল। সম্ভবত ভয় পেয়েছে এমন একটা কিছু দেখে। বেশি সময় না বসে গাছে গাছে লাফানি দিয়ে দৌড়।
তার ঠিক পরেই দলের আর এক সদস্য এসে হাজির সামনে। আমায় লক্ষ্য করে পেছনের দিকে এগোতে শুরু করেছে, ঠিক মনে হোল আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে।
জায়গায় পৌঁছে, এক রাশ শান্তি। সিমেন্টের বাধানো জায়গা। পাহাড়ের একদম ওপরে দাড়িয়ে থাকার জায়গা করে দেওয়া আছে। ভিউ পয়েন্ট এর মত কিছুটা।
ঠিক ঐ মুহূর্তটা কীভাবে ব্যখা করবো ভাবছি।
হুম, পুরো মাটন কষা।
সিকিমে তো অনেক বিউটি দেখেছি, মেঘালয়ে দেখেছি বাংলাদেশ বর্ডার। কিন্তু এর সাথে কারোর তুলনা করা বোকামি। প্লেনে চড়ার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তারা বললে বুঝবে, দূর আকাশের মাঝে বসে নিচে ল্যান্ড ঠিক কেমন লাগে। এখানেও সেই ভিউ সম্পূর্ণ না হলেও অনেকটাই তাই, খোলা আকাশের মাঝে। ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগিয়ে দৃষ্টি যখন নিচে, সবুজ লাল ফালি একে অপরের সাথে গণ্ডীরেখায় আলাদা হয়ে গিয়েছে। তুলি কলম নিয়ে বসতে ইছে হয়েছিল বড্ড। যদিও আঁকার হাত আমার নেই, বাকিটা উরু উরু মনের আহ্লাদ।
সামনে বড় বড় কয়েকটা পাথর একে ওপরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসে রয়েছে। তাদেরই পায়ের ফাক দিয়ে বেরিয়েছে সবুজ গাছ। ওখানে একটু সাবধানে হাঁটলে পৌঁছান যায়, তবে আমি রিস্ক নিতে পারিনি।
এমনই ভাবতে ভাবতে বাম পাশে খরখর করে উঠলো গাছ। বান্দর, একটা নয়, সপরিবারে রয়েছে। ঐ স্থান থেকে নেমে বামদিকে এগোতেই খোলা পাহাড়ের শেষ প্রান্ত দেখতে পেলাম। যেতে মন চাইল, কিন্তু যাবো ?
হ্যাঁ, গুটি গুটি পায়ে চলে গেলাম ঠিক প্রান্ত বরাবর, বাঁশের বেড়া টপকে।
ওহ। আমি আসার আগেই এনারা আবার সদলবলে হাজির। বেশ ভালই লাগছিল। ওদিকে সানসেট এর আগের মুহূর্ত উপস্থিত প্রায়।
এক ফালি খোলা আকাশ, আর একটা খোলা জানালা জীবনে যেন আর কিছুই চাই না।
সৌন্দর্যের খিদে মেটেনি এখনও। চটকরে গাছপালা টপকে কিছুটা দূরে সিঁড়ি ক্রস করে মিনিট পাঁচেকের পথ পেরিয়ে চলে এলাম আর একটা সিনিক বিউটি স্পটে। নতুন করে আর কি বলবো। বলার থেকে, শুধু ভেবেই চলেছি আর দেখেই চলেছি।
কিছু অপ্রকাশিত ভিউ ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এসেছে। ওপর থেকে সমস্ত কিছুই বড় ক্ষুদ্র। কেমন হতো যদি এই খানে থাকতে পারতাম, যদি সময় কাটাতে পারতাম, যদি লিখতে পারতাম এখানে বসে, হয়তো সবথেকে সুখী মানুষ এই জগতে আমার ওপরে কেও থাকতো না।
সূর্য ডোবার পথ ধরে নিয়েছে। পাহাড়ি পথ সকালে যতটা সুন্দর, অন্ধকারে ততটাই জাঁকালো, বিপজ্জনক। ফিরতে হবে ভেবে একটু মনটা ভার হয়ে গেল। ঠিক তখনই বললাম নিজেকে, “ ভালো জিনিষ অল্পই ভালো। “
ঠাণ্ডার পরিমান বাতাসে একটু একটু বাড়ছে, কনকনে ফিলিং। উহু, এখানে বেশিক্ষণ থাকলে আর রক্ষ্যে নেই।
ফেরার পথে একটা মাঝারি মাপের চিড়িয়াখানা পড়ল। একটা পুরানো বড় বটগাছ রয়েছে শুনলাম। ১০ টাকার টিকিট কেটে পুরানো কোন বটগাছ চোখে না পড়লেও জাতীয় পাখী দুটি বেশ সামনে থেকে মন ভরে দেখেছি।
ঘড়িতে ৫টা বাজতে এখনও দশ মিনিট। ফিরতে আজ রাত হবেই। গাড়িতে উঠে চোখ বন্ধ করে রেস্ট এ ফেলে দিলাম বডি।
©SamiranSamanta
( চলবে )
Comments
Post a Comment