সাল - ২০০১
প্লট – টেকনো
হরর, রহস্য
ভাষা – জাপানী
সাবটাইটেল – ইংরেজি
আই এম ডি বি রেটিং – ৬.৬ /
১০
পার্সোনাল রেটিং – ৬.৮ / ১০
আমি নিজেও একটু কনফিউসড ছিলাম, ফিল্মটা দেখার পর। বরাবরের মত জাপানীরা এমন সিনেমা বানায় না, যেটা একবার দেখলেই খুব সহজে বোঝা যায়। বরং এমন এক প্রকার অজানাকে জানার মাদকতায় ফেলে দেয়, বাধ্য করে আর একবার সিনেমাটি দেখার, আর তখনই সম্পূর্ণ ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়।
সম্পূর্ণ অন্য স্বাদের একটি ভয়ের গল্প। সরি, একটা নয় দুটো গপ্পো, যারা সমান্তরাল ভাবে নিজেদের জটিলতা প্রকাশ করেছে।
তিনবন্ধু, কলিগ।
সমস্তটাই ঠিক ছিল, তবে একদিন হঠাৎ করেই ছেলে বন্ধুটি অদ্ভুত ব্যবহার করতে শুরু করল। আচরণে অসঙ্গতি ধরা পড়েছিল বাকিদের চোখে। তাদের একজন ঘরে এসে হাজির হয়ে যায়। দেখে ছেলেটি চুপ করে বসে রয়েছে । চিন্তামুক্ত হয়ে বন্ধুটি এই ঘরে গেল আর ফিরে এলো কি একটা মনে হতেই। এসে দেখল, সর্বনাশ। বন্ধুটি নিজের গলায় ফাঁস দিয়ে ফেলেছে, প্রান নেই শরীরে।
এই দৃশ্যের ভয়ঙ্কর ফ্যাক্ট হোল, কোন রকম ভনিতা বা সূচনা না প্রকাশ করেনি আগে। যেটা হোল, হঠাৎ। এমন ভয়ানক ঘটনার স্ক্রিন প্লে দেখলে, ছ্যাঁত করে ওঠে বুকটা।
আর একটি গল্প, একটি ছেলের। বাড়িতে নতুন ইন্টারনেট নিয়েছে। সার্চ ইঞ্জিন ঘাটতে ঘাটতে একটা অদ্ভুত পেজে এসে পড়ে। বিভিন্ন মানুষের ভিডিও রয়েছে, অন্ধকার ঘরে। সাঙ্ঘাতিক এক প্রকার গায়ে শিহরন দেওয়া দৃশ্য। একটি নির্দেশ আসে, সেখান থেকে। জানতে চায়, আপনি কি সত্যি ভূত দেখতে চান ? ঠিক তারপরেই ... ছেলেটি ভয় পেয়ে যায়, আর তারপর...
দুটি গল্পের নিজস্ব যোগাযোগ তেমন ভাবে না থাকলেও একটা শব্দ কমন, “ ফরবিডেন রুম “। এটা কোন নির্দিষ্ট রুম নয় , বরং এটা সেই রুম যেখানে ভয় থাকে, ভূত থাকে, আত্মা থাকে।
লেখাটি পড়ে যতটা দ্রুত মনে হোল, সিনেমাটি বেসিক্যালি বেশ স্লো পয়েজন এর মত ধীরে সুস্থে কাজ করে। এক প্রকার ঘোরে এনে ফেলবে, সেটা বলাই বাহুল্য।
মোটের ওপর বেশ অন্য ধরনের একটা কিছু দেখা গেল, অনেক দিন পরে।
ভয় এখানে দৃশ্যগত থেকে মনস্তাতিক বেশি।
ছোট্ট একটু স্পয়লার নিয়ে আলোচনা করছি, যেটা সিনেমা দেখার ফ্লেভার তেমন ভাবে নষ্ট না করলেও ঘেঁটে দিতে পারে। যারা সিনেমাটি দেখেও বুঝতে পারেনি, এটা তাদের জন্য একটি প্রচেষ্টা মাত্র।
সিনেমার থিওরি অনুযায়ী, মানুষের পরবর্তী জীবন বলে যে ব্যাপারটা রয়েছে, সেটাও এক প্রকার পৃথিবীর মতই। তারও নিজস্ব একটা আয়তন আছে। আত্মা ( অর্থাৎ পরবর্তী জন্মের একটি নাম মাত্র ) সেখানে থাকে। কিন্তু ওরাও দেখছে, তাদের জন্য জায়গা কম পড়তে শুরু করছে। এদিকে যত মানুষ মরছে, তারা গিয়ে জায়গা দখল করছে ঐ পাড়ের জায়গা। এটা আত্মাদের থাকার ক্ষেত্রে একটা সমস্যার বিষয়। মানুষ মরবে এদিকে, ভিড় বারবে ওদিকে।
তাহলে উপায় ?
যে সকল মানুষ গুলো আত্মাদের দেখতে পায়, তারা নিজেদের সোশ্যাল আইসলেসন করে, ডিপ্রেশনে চলে যায়। হারিয়ে ফেলে মানসিক ভারসাম্য। মরা তো দুরের কথা, তারা হারিয়ে যায় একাকী দুনিয়ায়। যারা আবার এটা সহ্য করতে পারে না তারাই সুইসাইড করে, যেটা সংখ্যায় কম। তাহলে একদিক থেকে আত্মাদের জগত সেফ রইল তুলনামুলক।
অদ্ভুত লাগছে না শুনতে ? সিনেমাটাও কিন্তু বেশ অদ্ভুত।
তবে শেষে একটু অন্যরকম হলে আমার আরও বেশি ভালো লাগত।
আমার মতে, এখানে আত্মা ব্যাপারটা কে সিম্বল হিসেবে ভেবে দেখলে বলা যেতে পারে, আজকালকার মানুষরা টেকনিক্যাল দুনিয়ায় পা রেখে নিজেদের প্রতি সোশ্যাল বাঁধা তৈরি করে ফেলেছে। ঘরকুনো অথবা মোবাইলকুনো হয়ে পড়েছে বলা চলে। এমন ভাবে চলতে থাকলে, ধংসের দিন আসন্ন। সিনেমার শেষটা সেরকমই বলছে।
আর একটা কথা, হেডফোন মাস্ট। ভয় পাওয়ার জন্য নয়, সিনেমার ঘোরে মিশে যাওয়ার জন্য।
Comments
Post a Comment