লেখক – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
রেটিং – ৬.৫ / ১০
নামটাই এমন, প্রথম শুনেই ছিটকে উঠেছিলাম। এমন অবাক করা নাম, শুধু কি আকৃষ্ট
করার জন্য, আদেও কি মশলা কিছু আছে। সত্যি কথা বলতে, প্রথমে আমি ভাবিনি এটা নিয়ে।
কিন্তু কিন্তু কিন্ত...
পড়ার পর সমস্ত ধারনা বদলে দিল।
বেশ অনেক দিন পর এমন একটা দমবন্ধ করা কন্টেন্ট পেয়ে আমি কিন্তু বেজায় খুশি হয়েছি।
পড়া শুরু করলে কিন্তু থামাটা একটু হলেও অসম্ভবের দরজায় ঠকঠক করে কড়া নাড়া দিতে
পারে।
তিনটি চরিত্র এই গল্পের পিলার।
নুরে ছফা, যে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হানা দেয় সুন্দরপুর অঞ্চলে। কিছু মানুষ
হঠাৎ নিখোঁজ হতে শুরু করল সুন্দরপুরে। ডাক পড়ল তাই এই ব্যাক্তির। যদি সে কোন ভাবে
খোঁজ করে রহস্যের কিনারা করে দিতে পারে।
আতর আলি , এক কথায় গল্পের কাণ্ডারি। শুরু থেকে খুব ভালো ভাবেই গল্পকে এগিয়ে নিয়ে
যাওয়ার ভার নেন ইনি। কাকতালীয় ভাবে নুরে ছফার সাথে পরিচয়, আর টাকার পরিবর্তে তার
ইনভেস্তিগেসন এ সাহায্য করা।
মুস্কান জাবেরি , রহস্যে বৃত্যের কেন্দ্রবিন্দু হল এই মহিলা। শুরু থেকে প্রায় শেষ
পর্যন্ত গল্পের পাতায় ওনাকে অনেকবার দেখা যায় তবে সল্প সময়ের জন্য। ওনার সেই মত
বিবরন না পাওয়ায় ওনার প্রতি টান, রহস্য, আকর্ষণ পাঠক কে দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতেও
ফেলতে পারে। গল্পে উনি একটি রেস্টুরেন্ট এর মালকিন।
আসল গপ্পে একটু আসি ?
মুলকেন্দ্রবিন্দু এই মুস্কান জাবেরির রেস্টুরেন্ট, যার নামে এই গল্পের নাম। আত
সুস্বাদু রান্না ওখানে হয়। দূর দুরান্ত থেকে এখানে শুধু মাত্র খাওয়ার জন্যই আসে তারা।
জট পাকলো একটা জায়গায়।
কিছু মানুষ যারা নিরুদ্দেশ হয়েছে, তারা নাকি শেষবার এই রেস্টুরেন্ট এ এসেছে। নুরে
ছফার অন্তত তাই বক্তব্য।
মদ্যা কথা হোল ওদের নিরুদ্দেশ আর মুস্কান এর রেস্টুরেন্ট, এদের মধ্যে কথাও সম্পর্ক
আছে।
ইনভেস্টিগেশন, রহস্য, ভয় , ভয়াবহতা আর দুরন্ত সাস্পেন্স সমস্তটা নিয়ে গল্প গতিময়
ভাবেই এগাবে।
এই সব ঘটনাগুলো একে অপরের সাথে কিভাবে সংযুক্ত, আদেও কি এসব হছে।
পাঠকের কৌতূহল যেমন তৈরি হবে, তেমনি শেষে এসে পাঠক কে কিভাবে চুপ করিয়ে বসিয়ে
দেওয়া যায়, যাতে সে ভাবতে শুরু করে, কি পড়ল এটা... হ্যা, তেমন ধাঁচের গল্প।
একজন পাঠক হিসেবে রিভিউ দিলাম।
তারপরেও কিছু কথা থেকে যায়, যেটা বলাটা দরকার।
গল্পের একটি বিশেষ ঘটনার সাথে “ স্যার এডগার আল্যান পো “ এর একটি ছোট গল্পের মিল
পাই। আসল লেখার সাথে হুবহু মিল নেই, তবে ঐ ছোট্ট প্রেক্ষাপট কিন্তু অনেকটাই ঐ দিকে
ঝুকে আছে। আসলে এডগার স্যারের গল্পটি আমি অনেক আগেই পড়েছিলাম, তাই হয়ত এমন মনে
হয়েছে।
তবে এই বছরের জানুয়ারি মাসে আমি একটি গল্প লিখেছিলাম, “ কচি পাঁঠার ঝোল “। যথেষ্ট
ভাবে সব্বার অনেক ভালো রেস্পন্স পেয়েছিও। কিন্তু আমার গল্পটি অনেকটা এই গল্পের
সাথে মিলে গিয়েছে কিছু স্থানে। অথচ এটা আমি হলফ করে বলতে পারি, “ আমি কখনই এই বই
টা আগে পড়তে আসিনি “
ব্যাক্তিগত মতামতটা শেয়ার করি।
ছোটবেলা থেকে গল্পের পাহাড়ে চড়ে মানুষ হয়েছি। এর থেকে বহুগুনে তাবড় তাবড় লেখা পরে
ফেলেছি। অনেক অনেক অনেক সুন্দর। দমবন্ধ করা পরিস্থিতি ওর কাছে জাস্ত একটা
ছেলেখেলা। কিন্তু এখনও বুঝতে পারলাম না, গল্পটা নিয়ে এত হই হুল্লোড় কি জন্য ? হুজুগ
?
সৃজিত বাবু এই গল্প নিয়ে একটা ওয়েব সিরিজ বানিয়ে ফেলেছেন। আগামি মাসে রিলিজ হবে সব্বাই জানে। ট্রেলার দেখে মোটামুটি লাগল। বুঝলাম, একটা লেখা নিজ গুনে পাঠকের কাছে তার ভাবনায়, তার মস্তিস্কে নিজে থেকেই জায়গা করে নিতে পারে।
কিন্তু টিভির পর্দায় সেটা অনেকটা অতিরঞ্জিত করতেই হয়, প্লটের আবহাওয়া সঠিক করে বানাতে গেলে। এটাও মনে হোল, উনি অনেক জায়গায় নিজের মত গল্পকে ভেঙ্গেছেন, ডায়লগ তো পরিবর্তন করেছেনই। কিছু জায়গা একটু চোখে লেগেছিল আর কি।
আতর আলির চরিত্রে আমার অন্যতম পছন্দের মানুষ, অনির্বাণ বাবু কে দেখা যাবে। গল্পে ডায়লগ গুলো এমন জটিল উচ্ছারনে পূর্ণ, তাতে উনি খুব ভালভাবেই সেটা উপস্থাপন করবেন। তবে গল্প পড়ে ওনার ক্যারেক্তার কে মাঝারি উচ্চতার মনে হয়েছিল আমার, সেই দিক থেকে এখানে এটা একটা তালগাছ।
সাংবাদিক বা জার্নালিস্ট যেতাই হোক, রাহুল বাবু কে দারুন লাগবে আসা করছি। কিন্তু গল্পে যে জোশ আছে নুরে ছফার ডায়লগ থ্র করার মধ্যে, এখানে নিরুপম চন্দ্রের গলায় সেটা মিসিং, আমার অন্তত তেমন লাগল।
মুস্কান জাবেরির ভুমিকায় কিছু বলতে পারব না। আজমেরি ম্যাদাম কিন্তু আমার কাছে আকেবারেই নতুন। তাই এই ব্যাপারে ফুল স্টপ। তবে লম্বা লম্বা ডায়লগ ওনাকে দিয়ে না বলিয়ে ছোট্ট ছোট্ট অথচ ধারাল তীর ছাড়লে বেসি ভালো লাগত।
এখন দেখার বিষয়, সৃজিত বাবু প্যান্ডেলের বাঁশ তো দেখিয়ে দিলেন, এবার পুজর আগে পুর প্যান্ডেলটা ঠিক কততা সুন্দর হবে। সেটাই দেখার বিষয়।
ও হ্যা, নুরে ছফা নাম এখানে পরিবর্তন করে কেন নিরুপম চন্দ্র করেছে, বাকি নামগুল কেন পরিবর্তন করেননি, এর জন্য জুতসই কারন খুঁজে পেলাম না।
Comments
Post a Comment