মুভি রিভিউ
স্বাহা – দ্যা সিক্সথ ফিঙ্গার ( ২০১৯ )
প্লট
– ইতিহাস,রহস্য,হত্যা,ভয়
imdb
: ৬.২ / ১০
পার্সোনাল রেটিং – ৮ / ১০
সাবটাইটেল - ইংলিশ
রিভিউ একটু বড় হতে চলেছে, তাই ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইলো,
আশা রাখছি, হতাশ হবে না কেও শেষ পর্যন্ত।
লাখে হয়তো একটা এমন সিনেমা আমরা পেয়ে থাকি, যেখানে শুধু
রহস্যের জট নেই, আছে ইতিহাসের লুকিয়ে থাকা কিছু সত্য ,আর পুরাণের কথিত কিছু কাহিনী, যা একবার দেখতে বসলে,
ওঠাটা মূলত কঠিন হয়ে পড়ে।
সিনেমাটি দেখতে দেখতে কোথাও আমি “ দ্যা ভিঞ্চি কোড “ কে মনে করতে পারছিলাম।
যাইহোক, নিঃসন্দেহে এটাও একটি অত্যাধিক সুন্দর উপস্থাপনা,কিন্তু আমার মতে সিনেমাটি একটু বেশি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দেখানো হয়েছে, যেটাতে দর্শক প্রায় অনেকটা সময় ধরে চিন্তায় নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলবে,
কিন্তু চোখের পলক ফেলতে পারবে না। ডিরেক্টর আর একটু সহজ ভাবে বানালে
একটা মাস্টারপিস হতে পারত বলে আমার মত।
সিনেমাটি দেখতে বা বুঝতে সুবিধে হবে, সেই কথা মাথায় রেখেই
আজকের রিভিউ,যতটা সম্ভব সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
আর শেষে এর সাথে জড়িত কিছু ইতিহাস নিয়ে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করবো।
শুরু করছি আসল কাহিনী।
তিনটি কাহিনী সমান্তরালে চলছে। শেষে গিয়ে একে ওপরের সাথে যতক্ষণ না মিশছে,দর্শক ততক্ষণ শান্তি পাবে না।
প্রথম কাহিনীতে আমরা দেখতে পাই একটি ছোট মেয়েকে।
তার জন্মের ঠিক দশ মিনিট আগেই জন্ম নিয়েছে আর একটি কন্যা সন্তান। মা এর পেটে
থাকাকালীন সেই শিশু এই কন্যার পা এর অংশ খেয়ে নিজের খিদে মেটাত। পরবর্তীতে আমরা
সেই দ্বিতীয় কন্যা কেই দেখবো,যে সেই কারণে খড়িয়ে খড়িয়ে হাতে।
এটুকু বোঝাই যায়, সেই অগ্রজ আসলে ডেভিল ( শয়তান ) , কিন্তু মানুষ রূপে জন্ম নিয়েছে। এক সপ্তাহের মাথায়,
তাদের মা মারা যায়, আর বাবা আত্মহত্যা করে। তাদের দাদু
ঠাম্মা মানুষ করে। কিন্তু সমস্যা হোল, ওরা যেই গ্রামেই যায়
না কেন, সেখানের গবাদি পশু গুলো আস্তে আস্তে মারা যেতে থাকে।
কিন্তু কেন ? শয়তান রূপী ঐ মেয়েটাকে আলাদা একটা কামরায় আঁটকে
রেখেছে ওরা, তাহলে এগুলো কীভাবে ঘটছে ? মেয়েটি আসলে কি আসলেই ডেভিল ?
দ্বিতীয় গল্পে আমরা গল্পের মোডারেটর কে দেখতে পাবো, যে আসলে
সমস্ত রহস্যের পর্দা ফাঁস করবে।
মূলত সে একটা এজেন্সি চালায়, যেটা কোনও ভুয়ো ধার্মিক সংস্থার
জালিয়াতি ধরার চেষ্টা করে, আর সেই সুনামে এজেন্সির লাভ হয়।
এই মুহূর্তে একটা সংস্থার পেছনে পড়ে আছে সে, যেটা আর সবার
থেকে আলাদা। গৌতম বুদ্ধ এর শরণে থাকলেও এই সংস্থা টাকা দিয়ে সাহায্য করে, যেটা আর কেও করে না।
কোথাও কোনও ভাবে খটকা আছে, সেটা বোঝাই যায়। কিন্তু গৌতম
বুদ্ধ কে যারা অনুসরণ করেন, তাদের মধ্যে কি এমন খারাপ চক্র
থাকতে পারে, যার দরুন তারা নিজেরা টাকা নেওয়ার পরিবর্তে দিছে
সব্বাই কে ? মাথা চারা দেয় রহস্যভেদের জন্য।
তৃতীয় গল্পে দেখি একটি কন্সট্রাকশন এরিয়া, যেখানে কোনও এক
সময়ে কাজ চলতো। বর্তমানে একটা বিশাল বড় পিলার নষ্ট হয়ে যায়, কিছুটা
অংশ ভেঙ্গে পড়ে। সেই অংশ থেকে দেখা যায় একটি মানুষের হাত ( সম্ভবত মেয়ের হাত ),
সিমেন্টের ঢালাই অংশ থেকে অল্প করে বেড়িয়ে আছে।
পুরো দেহ বার করে, পোস্টমরতেম এ বেড়িয়ে আসে ভয়ানক ও
চাঞ্চল্যকর কিছু অদ্ভুত তথ্য। একজন লোককে এরপর আমরা দেখি, যাকে
এই খুনের আসামি বলে ধরা হয়। সেদিনই সে বাড়ির ছাদ থেকে ঝুলে পড়ে। ধরা পড়ার ভয়ে নয়,
অন্য কারণে, কি সেই কারণ ?
প্রচণ্ড ভাবে খাপছাড়া মনে হলেও, এই তিনটি গল্প আসতে আসতে
এগোতে থাকে নিজের গতিতে, এবং শেষে মোহনা তে মেশে।
প্রতিটা জায়গায় গৌতম বুদ্ধ এবং তার অনুগামীদের নিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর তথ্য আমরা
হাতে পাই। চমৎকার ভাবে তৈরি এই সিনেমা টি
মিস করা মানে, একটা এপিক না দেখা, এটুকু
আমি বলবো।
এবার কিছু কথা বলবো, যেটা সিনেমাটা বুঝতে সাহায্য করতে পারে
বলে আমার অনুমান। সমস্তটাই নিজের খোঁজা তথ্যের ওপর বেস করে করা, তাই কোনও রকম ভুল ত্রুটি হলে, মার্জনা করবে।
গৌতম বুদ্ধ ভারত ছেড়ে যাবার সময়, চারজন বিশেষ অনুগামী তৈরি হয়।
যাদের নাম, জিককু-তেন, যোজ্য-তেন, কমুকু-তেন, তেমন-তেন।
এনারা মূলত পাহারাদার বা দ্বারপাল নামে পরিচিত। পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ এই চারিদিকে একজন করে দ্বারপাল মোতায়েন করা হয়, শয়তান ধ্বংস করার জন্য।
সিনেমাতে আমরা দুজন দ্বারপাল কে দেখতে পাই। আর একটি স্থান দেখানো আছে, যেখানে তাদের মোতায়েন করা হয়েছিল। সিনেমা দেখলে এটা পরিষ্কার হবে।
নামকরণ এ “ স্বাহা “ কথাটির তাৎপর্য কি ?
স্বাহা আসলে একজন দেবীর নাম, যিনি অগ্নির স্ত্রী হিসেবে পূজিত হন। হিন্দুধর্মে কোন যজ্ঞের অগ্নিতে কিছু দেবার পর “ স্বাহা “ কথাটি বলে থাকি, অর্থাৎ উৎসর্গ করার পর সবসময় আমরা এই দেবীর নাম উচ্চারণ করে থাকি। সিনেমাতে কোথাও কিছু উৎসর্গ করা হয়, অগ্নিতে, কিন্তু সেটা কি ? যে নামকরণে তাকে রাখতে হোল ?
“ দ্যা সিক্সথ ফিঙ্গার “ এর তাৎপর্যটাও খুব সুন্দর।
সিনেমার গল্প অনুসারে, পৃথিবীতে ইভিল জন্ম নেবার পরই, তার ধ্বংসের কারণের উৎপত্তি হয়, মনুষ্য রূপে।
এই দুই মানুষকে চেনার উপায় কি ? দুজনের হাতেই ছটা করে মোট বারোটি আঙ্গুল থাকবে। গল্পে গৌতম বুদ্ধএর পুনর্জন্ম হবে, যেখানে তাকে চেনার উপায় একমাত্র এটাই। কিন্তু আসল সত্য টা কি এভাবেই প্রকাশ পাবে ? নাকি ভেতরে জটিলতা আরও বেশী ?
প্রচণ্ড রকম সাসপেন্সের মধ্যে দিয়ে সুন্দর ভাবে গল্পটি শেষ হবে। তাই এই সিনেমাটি দেখার আগে সমস্ত কাজকর্ম সেরে তবেই দেখবে, কারণ খুব গোলমেলে ভাবে মাথা ঘেঁটে দেয়ার ক্ষমতা রাখে এটা।
ঐতিহাসিক রহস্য প্রেমীদের জন্য এটা একটা ছোট্ট নোটবুক, অন্তত আমার তো তাই লাগলো।
একটা অনুরোধ সব্বাই কে, রিভিউ কেমন লাগছে একটু জানাবে কমেন্ট বক্সে। এটুকুই যথেষ্ট আমার জন্য, এভাবে ভালোবাসা আর উৎসাহ, দুটোই পেয়ে যাব।
ইউটিউব এ সিনেমাটি রয়েছে। তবে একটাই অনুরধ, কেও লিঙ্ক চেয়ে কমেন্ট করবেন না। একটু সার্চ করলেই পাবেন। দরকার পরলে আলাদা করে ইংলিশ সাবটাইটেল নামিয়ে দেখতে পারবেন।
ভাল থাকবেন সব্বাই।
Comments
Post a Comment