পুস্তক পরিচয়
দশরূপা
লেখক – সৌমিত্র বিশ্বাস
পাবলিকেশন – বুকফার্ম
দাম – ২৫০ টাকা
সাবধান !
আগে থেকেই বলে রাখছি, কারণ আজকের বইটা অনেকটাই প্রাপ্তবয়স্ক দের জন্য লেখা। কচি কাচারা, দূরে থাকো, এই কথা বলে আমি শুরু করছি, আজকের পুস্তক পরিচয়।
ভূতের গল্প কম বেশি আমরা সব্বাই পড়েছি। কখনও নিছক মজা পাবার জন্য, অথবা কখনও যেচে ভয় পাব বলে।
সে জন্য অনেকেই সকাল সময়টা বেছে নেয় এসব গল্পের স্বাদ নিতে। কিন্তু এগুলো যে আসল মজা রাত বিরেতে পড়েই, সেটা যারা উপলব্ধি করে তাদের কে নতুন করে কি বলবো আর।
আজকের গল্পের বইটা কিন্তু শুধু মাত্র ভূতের ওপর লেখা, তা নয়, ভূতের গল্পের বই নয় বললেই বেশি ভাল হয়।
বরং তার থেকেও গাঢ়, ভয়ঙ্কর, ঘুটঘুটে অন্ধকারের পরবর্তী ছবির ঝলকের থেকেও বিশেষ কিছু।
তন্ত্রবিদ্যা সম্পর্কে কম বেশি আমরা সব্বাই জানি।
তন্ত্র কথাটা কানে এলেই মনে হয় অঘোরী বাবা, সাধক, মড়ার খুলি, শ্মশান ইত্যাদি।
কিন্তু এখানে আবাহাওয়া সম্পূর্ণটাই আলাদা।
গল্প আকারে লেখক নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে নিজের মনের মত করে আকার দিয়ে বাস্তবের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন, যেটা পড়লে মনে হবে, “ এটা সম্পূর্ণ নতুন কিছু পড়লাম ।“
এই কথাটা ১০বারই ভাবতে বাধ্য করবে, কারণ বই টিতে আছে ১০টি শিউরে ওঠা, শরীরে কাঁটা দেওয়া লেখনী, যা সত্যের মোড়কে ঢাকা গল্পকথা।
তন্ত্রমহাবিদ্যা এর সাথে যুক্ত আছেন দশ জন দেবী। তাই দশমহাবিদ্যা বলা হয়ে থাকে।দশ দিকেই তারা বিরাজমান।
উত্তরে কালি
পূর্বে ছিন্নমস্তা
দক্ষিণে বগলা
পশ্চিমে ভুবনেশ্বরি
অগ্নিকোণে ধূমাবতী
নইরিত কোনে ত্রিপুরসুন্দরী
বায়ু কোনে মাতঙ্গী
ঈশান কোনে ষোড়শী
উরধে তারা
অধঃকোনে ভৈরবী
প্রতি দেবীর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।
যেমন বগলা দেবী। শবদেহের ওপর বসে থাকেন, এক হাতে অসুরের জিভ জেনে রাখেন, বাকশক্তি হরণের জন্য। মূলত বেশিরভাগ সমস্যাই বাক্যের মাধ্যমেই হয়। কটুকথা বলা, গালমন্দ করা বা পরনিন্দা করা ইত্যাদি। বাক্য সংযম করে মিথ্যার নাশ করেন এই দেবী।
আর একজন দেবী আছেন, যিনি মানুষের কু প্রবিত্তি গুলো কে লাগাম ছাড়া আলোড়ন করে ছেড়ে দেয়। কোন দেবী ? উহু, পড়তে হবে।
প্রসঙ্গত, প্রতিটি গল্পের নাম শুনে সাধারণ ভাবেই আমরা আন্দাজ করে নিতে পারি মোটামুটি, গল্পটা কিরকম ট্র্যাক এ চলতে পারে।
কিন্তু এই বইতে এর বিন্দু মাত্র ধরতে পারবে না, এটুকু নিশ্চিত ভাবে বলবো আমি। কিন্তু গল্পের শেষে নদী ঠিক মোহনাতে এসে মিশে যাবে।
বইটা যদি হাতে কখনও পেয়ে থাকো, তাহলে গল্প পড়ার আগে ভূমিকা অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই পড়তে হবে। কারণ
শুধু অবাক করা তথ্য এখানে লেখা আছে তা নয়, ১০টি গল্পে ঠিক কোন কোন দেবীদের নিয়ে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে গল্পছলে, তার একটা আভাস পাওয়া যাবে। এটা গল্প পড়ার মজাটা কয়েকগুণে বাড়িয়ে দেবে।
ছোট বেলা থেকে অনেক ভূতের গল্প বই হাতে পেয়েছি, পড়েছি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এই বইটা আমার কাছে একটা অ্যান্টিক পিস হয়ে থাকবে, সারাজীবন।
যেমন গোয়েন্দার হাতেখড়ি ফেলুদা কে নিয়ে,
তেমনি তন্ত্রমহাবিদ্যা ও ভয় কাহিনীর প্রাকিতিক ঘটনার হাতেখড়ি এই বই টা, আমার মতে।
ধন্যবাদ লেখক মহাশয় কে, এরকম একটা উপহার আমাদের কাছে তুলে ধরার।
Comments
Post a Comment