দ্যা লাস্ট আওয়ার ( ২০২১ ) - ফিল্মি রিভিউ

 

প্রেক্ষাপট – থ্রিলার, রহস্য, কল্পবিজ্ঞান  

 আই এম ডি বি৭.৭ / ১০

পার্সোনাল রেটিং / ১০

ল্যাঙ্গুয়েজহিন্দি




 

শেষ ওয়েব সিরিজ কোনটা ভাল দেখেছি, নাহ মনে পড়ছে না। অনেক দিন কেটে গেলো, হাতে ভাল কিছু রসদ আসছিল না। ফাইনালি, লাস্ট সপ্তাহে হাতে পড়ল “ দ্যা লাস্ট আওয়ার “, আর সেটা দেখে মন ভরে গেল। যেমন সিনেম্যাটিক আবহাওয়া, তেমন শব্দ পরিচালনা।
যাকগে শুরু থেকে শুরু করছি।

কাহিনীর প্লট শুরু হয় উত্তর পূর্ব ভারতের কোনও এক রাজ্য থেকে, স্বাভাবিক ভাবেই সেটা পাহাড়ি অঞ্চল।
একটি বাঙালি মেয়ে মারা যায় সেখানে ঘুরতে গিয়ে। মৃত্যু স্বাভাবিক আপাত ভাবে স্বাভাবিক লাগলেও তা নয়। কাহিনীতে এন্ট্রি হয়, মুম্বাই থেকে ট্রান্সফার নেওয়া একজন পুলিশ অফিসারের, অরূপ।
পাহাড়ি অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করে, কিন্তু অরূপ এসে তার বিপরীত রঙ দেখতে পেল।
ইনভেস্টিগেশন চলতে চলতে দেখা গেল, দেভ কে।
দেভ স্থানীয় ছেলে, তবে প্রতি বছর নিজের আস্তানা পালটায়, ভাই কে নিয়ে। দেভ ছেলেটির মধ্যে এক অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা আছে, যেটা অরূপ প্রথমে বিশ্বাস না করলেও, পরে করতে বাধ্য হয়, পরিস্থিতি বাধ্য করে।
মেয়েটিকে কে খুন করে ? সমস্ত কিছু যখন হাতের নাগালে নেই, অরূপ দ্বারস্থ হয় দেভ এর, আর...
এটা তো গেল প্রথম এপিসোড এর কিসসা। কাহিনী তো সবে শুরু হোল।
আস্তে আস্তে একটা একটা করে ক্যারেক্টার যোগ হতে থাকবে, আর গল্প ততই জোরালো আকার ধারণ করবে।
খুনের ইনভেস্টিগেশন টা মামুলি একটা ব্যাপার, এর থেকেও বড় কিছু অপেক্ষা করছে দর্শক দের জন্য, যেটা না বলাটাই খুব ভাল আমার মতে।

 

দেভ এর মধ্যে কি ক্ষমতা আছে ? ইয়ামানাডু কে ? কি সম্পর্ক দেভ এর সাথে ?
অরূপ এর মেয়ের কানে ফিস ফিস করে কে কথা বলে ?
ঝাক্রি বলতে পাহাড়ি ভাষায় কি বোঝানো হয় ?
টানটান ৮টা এপিসোড, ঝাক্কাস !

গল্পের সুতো এমন বাধনে বাঁধা থাকবে, যাতে প্রতিটা এপিসোড শেষে পরের এপিসোড না দেখতে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়ে যাবে, ঠিক ভাত খেতে খেতে জল না খেতে পেলে যে তেষ্টা পাবে, সেরকমই।  এই সিরিজ এই দিক খিদে মেটাতে সক্ষম।  
বেশিরভাগ অংশ সিকিমে শুট করা হয়েছে। অর্থাৎ, দৃষ্টি নন্দন এর ব্যাপারে কিন্তু সেরা। বাড়ি বসে পাহাড়ি আবহাওয়ার ভার্চুয়ালই ঘুরতে যাওয়ার আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই সিরিজ। রাতের আকাশ থেকে দিনের আলো, এক একটা দৃশ্য অনবদ্য, অতুলনীয়। কালার টোন ব্যাবহার এর দিক থেকে খুব সতর্ক থেকেছে, নয়তো এমন আউটপুট দেওয়া সম্ভব নয়।

অরূপ এর ভূমিকায় দেখতে পাই, সঞ্জয় কাপুর কে।
আহ ! ওনার অভিনয় আমরা সব্বাই কম বেশী দেখেছি, জাত সাপ একেবারে। তবে গল্পের ক্যারেক্টার অতটা চ্যালেঙ্গিং নয়, তাই সঞ্জয় বাবুর অতটা কষ্ট হয়নি ব্যাপারটায় ফসল ফলাতে। কথায় চুপ থেকে সব কথা বলে দেওয়া যায়, কোথায় বন্ধুক বার করতেই হয়, হুম উনি জানেন।

নতুন মুখ দেখতে পাই, দেভ এর চরিত্রে। নাম – কারমা তাকাপা।
অন স্ক্রিনে গল্প অনুযায়ী খুব ইনোসেন্ট লুক গল্পের ফ্লেবার এ নতুন মশলা অ্যাড করেছে। পরিবেশের সাথে এই লুকটা আমার মনে হয় খুব দরকার ছিল। মিথ্যে বলছে ছেলেটা, সেটা সত্যি অভিনয় করছে না কষ্ট করে বলছে, কনফিউশন এ ফেলে দেবে দর্শক কে। নতুন মুখ দেখে অতটা হালকা ভাবে নেওয়ার কিছু নেই, এর আগে ছোট খাটো ভাল কাজ কিন্তু বার করেছে কারমা তাকাপা। ভবিষ্যতে এই লুক নিয়ে আরও কাজ দেখার ইছে রইলো।

অরূপ এর পুলিশ সহকর্মী লিপিকা, অর্থাৎ সাহানা গোস্বামী। বেশ ভাল কাজ তুলেছে এই সিরিজের মধ্যে দিয়ে।
অরূপ এর মেয়ে পরী, শেলি ক্রিসেন, একদম ফ্রেস লুক। দারুণ আউটপুট, প্রেম প্রেম ভাব জাগিয়ে দিতে পারে তরুণ দর্শকদের মধ্যে।
নেগেটিভ ভূমিকায় রবিন তামাং, লানাকুম আও দর্শকের মনে দাগ কাটতে সক্ষম। রাগ কোথায় কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, এদের হাত ধরে সেটা খুব সুন্দর মিশ্রণের মাধ্যমে প্রকাশিত।

ছোট্ট ছোট্ট ভি এফ এক্স দারুণ । হয়তো অনেকে ধরতেও পারেনি কোথায় এই কাজ করা হয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক।


এবার আসি কিছু কথা বে কথায়।
অরূপ এর স্ত্রী, নাইমা হিসেবে আমরা পাই রাইমা সেন কে।
কিন্তু কেন ?
হঠাৎ হঠাৎ করে আসছেন আর গায়েব ! জানি গল্পের খাতিরে এটা করতে হোল, কিন্তু দরকার ছিল কি এই ক্যারেক্টারের ? এতটুকু দাগ কাটে না মনে, লাল শাড়ি ছাড়া। গল্প একটু এদিক ওদিক করলেই এই অতিরিক্ত ব্যাপারটা কমানো যেত। ওনার মত বেশ ভাল অভিনেত্রী কে সাইড রোলে না পেলেও এমন কিছু ক্ষতি হতো না।

টাইম ট্রাভেল, ব্যাপারটা যেমন ইন্টারেস্টিং তেমন ভজঘত। যতটা শুনতে ভাল লাগছে, এর মারণ প্যাঁচ ততটাই জটিলতর। নিজে ফিজিক্স এ স্নাতক হওয়া সত্ত্বেও ওটা নিয়ে উলঝান এখনও আছে, ছিল আর থাকবে। কিছু জায়গায় ছোট্ট কিছু ব্যাপার চোখে পরে, যেগুলো আলোচনা করতে হলে বেশী কথা বলা হবে।
তবে গল্পকার কে একটাই কথা বলবো, আপনি গল্প টানটান বানানোর পর শেষ এ এসে এমন ভাবে শেষ করবেন না। হঠাৎ করে এমন টাইম ট্রাভেল এর দোহাই দিয়ে পলকের মধ্যে শেষ করে দেওয়াটা মোটেই ভাল লাগেনি আমার। গল্প অনুযায়ী সমস্তটাই ঠিক ঠাক। কিন্তু এখানে টাইম ট্রাভেল কে হাতিয়ার বানানো হয়েছে। যার ফলে একটা সুন্দর গল্পের সুন্দর পরিণতি নষ্ট করে দিয়েছে, এক্ষেত্রে আমার অন্তত তেমনই মনে হয়েছে। দরকার পড়লে আর দুটো এপিসোড বানাতে পারতেন, আকস্মিক শেষ করে আমার মত দর্শকদের মনের খিদে মেটাতে পাড়লেন না।

জাস্ট একটা রিভিউ মাত্র। অন্য ভাবে নিও না কেও, পারলে ঝট করে দেখে ফেলো লম্বা একটা ভ্রমণ রহস্য।

 

শুধু একটাই কথা বলবো, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স , অ্যামাজন প্রাইম একটু কষ্ট করে খুঁজে দেখো। না পেলে অন্য পথ ধরে খুঁজতে হবে, যেটা সবার সামনে বলা মানা আছে। বাকিটা যারা বোঝার বুঝে নিয়েছে আশা রাখছি। কেও কমেন্ট করে লিঙ্ক চাইবে না, আবারও বলছি, আমার খুব খারাপ লাগে কমেন্ট করতে না পেরে। )

ভাল থাকবে সব্বাই।

Comments