প্রেক্ষাপট - মিউজিক, প্রেম
আই এম ডি বি – ৮.৮ / ১০
পার্সোনাল রেটিং – ৭.৫ / ১০
ল্যাঙ্গুয়েজ – হিন্দি
“ মিউজিক যেটা শুধু শেখা যায় না, অনুভব করতে হয় “
এমন একটা কি পয়েন্ট দিয়ে শুরু হয় কাহিনী। ও হ্যাঁ, আমি আজ রহস্য বা ভূতুড়ে কোনও
সিনেমার রিভিউ নিয়ে লিখতে বসিনি। আজকের সিনেমা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্লটে। আর সেটা
লেখার যথেষ্ট কারন রয়েছে বলে আমি লিখতে শুরু করি।
একটা বড়সড় স্পইলার এর পরের লাইন এ আসতে চলেছে, তাই যারা সিনেমা দেখনি তারা স্টপ
করতে পারো, তবে আমার মনে হয়না এই স্পইলার সিনেমা দেখার ইছে কমিয়ে দেবে, এর বিপরীত
হওয়ার চান্স বেশী।
গল্পে নায়িকা একজন আর্টিস্ট, কমার্শিয়াল পেইন্টিং ওনার নেশা, বাকিটা ফ্রিলান্সিং করেন,
আর হ্যাঁ ও কথা বলতে পারে না। এদিকে নায়কেরও শিল্পীসত্তা আছে, ও একজন মিউজিসিয়ান
হতে চায়। নায়ক ছোটবেলায় বাবা মা কে হারায়। আর্থিক ও স্ট্যাটাস এর দিক থেকে অনেক ওপরে
রয়েছে নায়িকার ফ্যামিলি। তার বাবা সম্পর্কের কথা যখন জানতে পারে, তখন একটা
চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসে নায়ককে, যেটা সফল হলে… বাকিটা সব্বাই জানে কি হতে পারে।
এটুকু পড়ে কি মনে হোল ? সেই তো একই গল্প, একই গতে বাঁধা প্যানপ্যানানি ইমোশন,
ডিপ্রেশন ইত্যাদি তাই না ?
এককথায় বলবো না, কখনও না।
আমরা যেসব ডিরেক্টর বা প্রডিউসার দের নাম বাংলা হিন্দি ইন্ডাস্ট্রি তে চিনি, তাদের
হাতে এই প্লটটা পড়লে সত্যি সেই এক মাঠে গরুকে নিয়ে ঘাস খাওয়াতে আসত।
কিন্তু এখানে আমরা দেখতে পাবো, এ আর রাহেমান এর কাজ। আর ওনার কাজে বৈচিত্র্যই এই
সিনেমার আসল কি পয়েন্ট। একটা সিম্পল গল্প কে কীভাবে প্রতিস্থাপন করবেন, সেটাই
দেখার বিষয়, যেটা আমরা এর আগে কখনও দেখিনি।
সিনেমার শুরু থেকে মিউজিকের ঝিকিমিকি থাকবে, সেটা আলাদা করে উল্লেখ নাইবা করলাম।
সিনেমাতে ক্যামেরা কোথাও কোথাও দারুণ ভাবে ব্যবহার হয়েছে। শিলং এর বেশ কিছু স্থান
ক্যাপচার করা হয়েছে, যেমন লাইটলুম ক্যানিয়ন, উমিয়াম লেকের কিছু অংশ।
কিছু স্ট্যাটিক দৃশ্য ,কিছু হাইপারলাপ্স মন ভরিয়ে দেবে। সবুজ নীল পাহাড়ি মেঘ আকাশ
জল যখন ভিডিওতে দেখা হবে, ওহ, স্বস্তি আসে এক কথায়।মন ভরে যাবেই।
সিনেমাটা দেখতে গিয়ে অনেকের অনেক এক্সপেকটেশন থাকতে পারে। আমি বলবো সমস্ত কিছু
জলাঞ্জলি দাও, আর নতুন ভাবে একটা ভালোবাসার গল্প কে অনুভব করো, তার সাথে জমে থাকা
মিউজিক কে। সাধারণ গতে বাঁধা প্রতিস্থাপনা থেকে এটা অনেক ওপরে।
“ জয়ালামুখি “ , “ ও আশিকা “ গানদুটি আমার বেশ লেগেছে, বিশেষত শেষের গানটা। গাঁতায়
সাইলেন্স বেশী ও অনুভুতি পূর্ণ , হয়তো বেশী ভাল লাগার কারন এটাই।
কিছু ড্রব্যাক দিছি।
কাহিনী প্রথমত ছোট হতেই পারত।
দ্বিতীয়ত যে হাই লেভেল এ গানের লিরিক্স চলেছে, খুব সুন্দর । রহমান স্যারের কাছ
থেকে এমনটা পাবো, সেটাই আশা করি, কিন্তু সাধারণ শ্রোতা হিসেবে অনেকেই সেটা এঞ্জয়
করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।
গল্পতে কোথাও যেন মাঝে মধ্যে কিছু একটা মিসিং ছিল, যেটা অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ এর
ব্যাপারটা লিঙ্ক করতে গিয়ে কোথাও হোঁচট খেয়েছে।
আমি নিজে বই পড়ার সাথে সাথে একজন অন্ধ মিউজিক ভক্ত। একটা সময়ে এর সাথে আমারও কোথাও
যোগ ছিল, কিন্তু সময় আর ইছের অভাবে সেটা আর চালিয়ে রাখতে পারিনি। তাই এখন যখনই ভাল
কোনও খোঁজ পাই, সেটা নিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় রত থাকি।
ঝোঁকের বশে নয়, একটা ফ্রেস জিনিস ফ্রেস লুকের সাথে দেখতে হলে, এই সিনেমা দেখা যায়।
কারন অনেক ক্ষেত্রে সিনেমাটা অনুভব করেই দেখতে হবে। কারন হঠাৎ দেখলে নায়ক জলে পড়ে
গেল, কিন্তু পড়তে গিয়ে কোনও আকাশ বাতাস নক্ষত্রপুঞ্জে ধাক্কা খেলো, তারপর জলে পড়ল,
তারপর দেখলে
সে পাড়েই দাড়িয়ে আছে। এটা বুঝতে হলে, অনুভুতি লাগবে , বাকিটা নিজে থেকেই হয়ে যাবে।
ভাল থাকবে সব্বাই।
Comments
Post a Comment