দ্যা ভিজিল ( ২০১৯ ) - ফিল্মি রিভিউ

দ্যা ভিজিল 
প্রেক্ষাপট -  ভয়, অশরীরী
আই এম ডি বি –  ৫.৭  / ১০
পার্সোনাল রেটিং –  ৬.৫ / ১০
সাবটাইটেল -  ইংরেজি



রিভিউ শুরুতে একটা প্রশ্ন ।
ও বন্ধু, একটা কাজ আছে তোমার জন্য, পরিবর্তে টাকা পাবে, বেশ মোটা টাকা।
বলছি যে তুমি কি শোমার হয়ে চাও ?
উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে তো কোনও কথাই নেই।
উত্তর যদি না হয়, তাহলে রিভিউ তোমারই জন্য।
কারন তোমার না বলার কারন নিশ্চয় একটা বিরাট কৌতূহল , তাই না ? আর পিপাসা মেটানোর দায়িত্ব আমি নিলুম।

নমস্কার বন্ধুরা, সব্বাই কেমন আছ এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে ? সব্বাই খুব ভাল থাকো, সাবধানে থাকো, এটাই প্রার্থনা করি। আর ভাল ভাল সিনেমা দেখো, মন ভাল থাকবে।
আজকের ফিল্মি রিভিউ বরাবরের মত একটু অন্য রকমের, যেটা দেখতে গেলে ভয় যেমন লাগবে তার থেকেও বেশী হয়তো দমবন্ধ পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে তোমাকে, যেটা কেটে যাওয়ার পর দীর্ঘশ্বাস অবধারিত।


মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা তার দেহ ছেড়ে বেড়িয়ে আসার উপক্রম করে। এতদিন ধরে এই শরীরে বাস করে ,তাই ছেড়ে আসাটা কষ্ট হলেও বাঞ্ছনীয়। ক্রিয়াকলাপ যতক্ষণ না সম্পন্ন হয়, ততক্ষণ মৃতদেহ কে খুব সাবধানে রাখতে হয়। মৃতদেহ কে সারারাত পাহারা দেওয়ার জন্য একজনকে রাখা হয়। কি জন্য পাহারা ? হুম, বিভিন্ন অপদেবতা সেই মুহূর্তে নানান খেলা শুরু করার চেষ্টা করে কচি তাজা দেহের আত্মা কে নিয়ে, তাদের থেকে বাঁচানোই হোল সেই ব্যাক্তির কাজ। সেই ব্যাক্তি হতে পারে তার ফ্যামিলির কোনও একজন, অথবা চেনা কেও। অনেকে এই কাজটা অর্থের বিনিময়ে করে থাকে।
গার্ডের মত অর্থাৎ এই পাহারাদারদের “শোমার“ বলা হয়। মৃত্যু থেকে শেষকৃত্য হওয়ার আগে পর্যন্ত এই কাজকর্ম বা রিতিরিয়াজ কে এককথায় বলে ভিজিল, সিনেমার নামকরণ যেখান থেকে হয়েছে।

একটা পুরো রাত, না ঘুমিয়ে একটা রুমে, আর সঙ্গে একটা বডি যাকে প্রটেক্ট করাই তার কাজ, যে দেহে একটু আগেও লোহিত গরম ছিল।
ব্যাস, এটুকুই এই ফিল্মের প্লট।
“এইটুকু ” শব্দটা খুব সহজেই পড়ে ফেললেও, ব্যাপারটা কিন্তু অতটা নরমাল নয়। ও হ্যাঁ, প্যারানরমাল কিছু নিয়ে লিখছি, নরমাল হবে এটাই বা ধরে নেবে কি করে ?

ছোট্ট এই গল্পে আমরা একটা প্রফেশনাল “ শোমার “ কে দেখতে পাই, যে আধুনিকতার জীবন পছন্দ করে, তাদের সাথে থাকে, খায়। সময়ে পকেট এ টান পড়লে সেই প্রাচীন পন্থিদের দলে ভিড়ে অর্থের বিনিময়ে নাইট শিফট এ জেগে পাহারা দেয়, একজন গার্ড এর মত।

টপিকটা ছোট্ট, তাই সেক্ষেত্রে এর থেকে বেশী বললে দর্শকের ক্ষেত্রে স্পইলার হয়ে যাবে। তার থেকে আমি কিছু থিওরি নিয়ে নিজের মতামত দি, সিনেমায় বর্ণনা অনুযায়ী।

সিনেমার গপ্পে, “ মাজ্জিক “ বলে একটা শব্দ শোনা গেছে, শব্দটির উৎপত্তি হিব্রু তে, যার অর্থ “ যে ক্ষতি করে ”। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে এদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
মাজ্জিক এক প্রকার প্যারাসাইট ডেমন ( শয়তান)। ছোট্ট একটা বর্ণনা দিছি এই ডেমন এর।
মুখ থাকে উলটো দিকে, অর্থাৎ চোখ নাক মুখ থাকে ঘোরানো, অন্য দিকে, হাতের নখ সমেত আঙ্গুল খুব লম্বা আর বড় হয়।
এরা মূলত সেই সব আত্মা কে নিজের গোলাম বানায়, যারা মৃত্যুর আগে কোনও না কোনও ভাবে দুঃখ পেয়েছে বা সেই দুঃখেই মারা গেছে। প্রাচীনকাল থেকেই ব্যাপারটা চলে আসছে।
ফিল্মে এই “মাজ্জিক “ কে খতম করার একটাই পন্থা জানা গেছে। যেই রাতে প্রথম একে দেখতে পাবে, সেই রাতেই তার মুখ আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, নয়তো সেদিন থেকেই তার কবলে পড়ে যেতে হবে, আর আস্তে আস্তে তাকে অতিষ্ঠ করে মারবে।

সমগ্র কাহিনী এক রাতের, যেখানেএকটা ছোট্ট প্যাকেজ রয়েছে ভয় পাওয়ার। জাম্প স্কেয়ারি দৃশ্য ছাড়াও কিছু নির্ভেজাল ভয়ের দৃশ্য আছে, যেটা এর আগে অন্য সিনেমায় দেখা গেলেও এখানে একটু অন্য ফ্লেভার পাওয়া যাবে।
সিনেমাটা আমার ভাল লাগার কারন, না বলা অনেক কিছু আছে, যেটা শুধু ভয় পাওয়াবে না, ভাবাবেও। সিনেমার শেষে আমার মনে যেমন প্রশ্ন কিছু এসেছে, তার জন্য নিজের স্বাধীনতায় ব্যখা করতে সক্ষম হয়েছি। তোমরা দেখলে তোমাদের ভাবনার ভিত্তিতে হয়তো সেই ব্যাখ্যা অন্য ভাবে দাঁড়াবে। মোটের ওপর ব্যাখ্যা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল, সেটা সব সিনেমায় হয় না। ছকে বাঁধা লুডোর গুটির মত অন্তত এই সিনেমা নয়।

২০১৯ এর সেপ্টেম্বর মাসে টরনটো ফিল্ম ফেস্টিভাল এ প্রথম আত্মপ্রকাশ করলেও, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ভাবে ইউনাইটেড কিংডম, আয়ারল্যান্ড, নিউজিলান্দ কয়েকটা প্রেক্ষাগৃহে আন্তর্জাতিক ভাবে দেখানো হয়। তারপর শেষমেশ ২০২১ অর্থাৎ এই সালে আমেরিকায় মুক্তি পায় এই সিনেমা।
মোটের ওপর সিনেমাটা কিন্তু বেশ বেশ বেশ। নতুন কিছু অপেক্ষা করছে সব্বার জন্য।


 চোখের সামনে সাদা কাপড়ে রাখা ডেডবডি চোখের পলকে যদি একটু নড়ে ওঠে ?
সেইজন্য আবারও বলছি, “ শোমার “ হবে ?

ভাল থাকবে সব্বাই।

 

Comments