ফিল্মি রিভিউ - পিসাসু ( ২০১৪ )

 




আই এম ডি বি – ৭.৫ / ১০
পার্সোনাল রেটিং – ৮ / ১০
সাবটাইটেল -  ইংরেজি


ঝালমুড়ি চলবে ? ঝালমুড়ি ? তবে এটা খাওয়া যাবে না, টানা ১ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ধরে উপভোগ করতে পারা যাবে। কি নেই এতে ?
রয়েছে একটি নির্ভেজাল ভূতের গপ্প, রয়েছে এক রাশ চমকানো ভয়, রয়েছে বাবার তার মেয়ের প্রতি অগাধ স্নেহ, রয়েছে একটি না বলা ভালোবাসা। আর শেষে রয়েছে একটা জম্পেশ টুইস্ট, যেটা আজ পর্যন্ত বোধয় অ্যাপ্লাই তেমন কেও করে নি। তাহলে এটাকে ঝালমুড়ি বলাটা কি ভুল হবে ? দারুণ সুস্বাদু।

প্লটটা খুব সিম্পেল।
মুখ্য ভূমিকায় থাকা নায়ক গল্পের শুরুতেই নিজের চোখের সামনে রাস্তায় একটা মেয়ের এক্সিডেন্ট দেখে ফেলে। সময় নষ্ট না করে সেই মেয়েটাকে নিয়ে অটোতে গেলেও, নার্সিং হোমে ঢোকার কিছু সময়েই মারা যাবে মেয়েটি। মারা যাবার আগে ছেলেটির সাথে তার শেষ চোখাচুখি হবে, আর আসল গল্প শুরু ওখানেই।
বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পরও ছেলেটি কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারেনি। ভায়োলিন প্লেয়ার হিসেবে তার একটা নাম থাকলেও, সব্বাই যখন আনন্দের সুর তৈরি করে, ছেলেটির ভায়োলিন থেকে বের হয় দুঃখের সুর। সারাদিন একটা ঘোরে রয়েছে যেন, ঠিক অজানা ডিপ্রেশন। এক কথায় তার রোজের জীবন যাত্রা ব্যাহত, এতদূর পর্যন্ত ঠিক ছিল।
কিন্তু এরপর থেকে ছেলেটি নিজের ফ্লাটেই অশরীরী সত্তার অনুভুতি পেতে শুরু করেছে। ঘরের মধ্যে কিছু একটা আছে, যেটা ওকে শান্তিতে থাকতে দিছে না। এটা কি সেই মেয়েটির আত্মা ? কিন্তু সে কেন এখানে এসেছে ? তার তো কোনও ক্ষতি করেনি ছেলেটি, তাহলে ?

কাহিনীক্রমে মেয়েটির বাবার দিকে ফোকাস করে, যে নিজের মেয়ের এর শেষ স্মৃতি নিয়ে কোনভাবে বেঁচে রয়েছে। ছেলেটির ফ্ল্যাটে আসা মাত্র সে বুঝতে পারে, এটা তারই মেয়ে। কিন্তু সে এখানে ছেলেটির ওপর অত্যাচার করছে কেন ?
আসল রহস্যের জাল বোনা শুরু হয় এখান থেকে। কি সেই রহস্য ?
মেয়েটি আসলেই কি চায় ?
ছেলেটির নিজের মা ঐ ফ্ল্যাটে এসে কি দেখতে পায় ?
অটো ড্রাইভারটার এক্ষেত্রে কোনও রকম ভূমিকা আছে নাকি ? নাকি কেসটা আরও একটু জটিল হতে চলেছে ?

অনেক দিন পর খুব সুন্দর একটা মুভি দেখে মন ভরে গেল। যেখানে ভয় কে একটুও অতিরঞ্জিত না করে স্বাভাবিক ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। অযথা সাউন্ড এফেক্ট স্বাভাবিক ভয় কে নষ্ট করে ফেলে, এক্ষেত্রে “ সাইলেন্স “ মুভির জায়গায় জায়গায়  ভয় জাগাতে সক্ষম হয়েছে।
ক্যামেরা এর মুভমেন্ট এ নতুন কিছু পাওয়া গেছে আমার মতে।
একটা কথা না বললেই নয়, ভয়ের সিনেমা দেখতে বসে ইমোশনাল হয়ে চোখ ভারি হয়ে যাওয়া, এই ব্যাপারটা খুব রেয়ার ফিল্মের ক্ষেত্রেই ঘটে, এই ফিল্মটি সেই ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে।
সময়ে সময়ে ভালোলাগার অনুভুতি জাগালেও, হাসি ঠাট্টার মধ্যে কখন ভয় এসে ধরা দেবে, বোঝাই মুশকিল হয়ে যেতে পারে। ভৌতিক দৃশ্যে খুব সুন্দর এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে, যেখানে কখনও সখনও ভয়ের থেকেও বেশী দমবন্ধ করা পরিস্থিতি নিয়ে আসতে পারে।
আর শেষে এসে কাহিনীর মোচড় কিন্তু, ওয়াহ ! ফাটাফাটি। চোখে জল এসে যাওয়ার মত।

“ পিসাসু “ শব্দের বাংলা অর্থ , পিশাচ।
এই ফিল্মের অনুকরণে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি ২০১৮ সালে “ নানু কি জানু “ একটি ফিল্ম বানায়, যার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন অভয় দেওয়াল।
পিসাসু কোথায় দেখবে ?
হটস্টার এ অবশ্যই পেয়ে যাবেন, আর অন্যান্য প্লাটফর্মে খুঁজে দেখে নিতে পারো।

অনেক দিন পর ফিল্মি রিভিউ লিখতে বসেছি, ভাল লাগলে অবশ্যই সঙ্গে থেকো, আর কমেন্টে জানিও।
ভাল থেকো সব্বাই, ধন্যবাদ।  
 
   
 

 

  


Comments