আহ, বেশ ধোঁয়া উঠছে, সর্ষের তেল গরম হয়েছে
দেখছি।
একটু চিনি দিয়ে দি, কালারটা বেশ লাল লাল হবে। তেজ পাতা একটু ছিঁড়ে, সাথে শুকনো
লঙ্কার মাথাটা টেনে গরম তেলে ছেড়ে দিলাম।
ফট ফট শব্দ করছে।
শুকনো লঙ্কার ফোড়নের গন্ধটা দারুণ লাগে, আহহহহ ,অসাধারণ !
বেশী দেরি করলে এবার পুড়ে যাবে। পেয়াজ কুচি গুলো ঢালতেই ছ্যাঃ করে শব্দ। খুন্তিটা দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে একটা
থালা চাপা দিয়ে দিলাম।
অপেক্ষা করলাম, পেয়াজটা যতক্ষণ না একটু লালচে রঙ ধরে।
সামান্য একটু ভেপে গেছে যখন,রসুনটা দিয়ে দি, এটাই গলাতে বেশী সময় লাগে সবসময়। তবে
হ্যাঁ, মাংসর পুরো ফ্লেভার এই রসুন আর পেয়াজের ওপরই। যত ভাল করে মজবে, ততো স্বাদ
বাড়বে।
ওহো, বেশী কথা বলতে গিয়ে আদাটাই দেওয়া হবে না, সাথে একটু টমেটোকুচি অ্যাড করতে
হবে। টমেটোর ঐ অ্যাসিডিক নেচারটা মাংস নরম ও সলিড করতে সাহায্য করে।
আলাদা একটা বাটিতে হলুদ আর ঝাল লঙ্কার গুড়ো নিয়ে একটু জল মিশিয়ে পেস্ট করে নিলাম,
সঙ্গে রঙের জন্য কাশ্মীরি লঙ্কা। একটু পরে ওটাও ঢেলে দিয়ে মশলা জবরদস্ত বানানো হয়ে যাবে।
এই যাহ্,
শুরুতে একটু জয়িত্রী ফোঁড়ন দিলে ভালই হতো। থাক, একটু
গোলমরিচ এর গুড়ো দি, ঝালও হবে,
খেতে গিয়েও আলাদা তেজ বের হবে।
ওহ জমে যাবে রবিবারের দুপুরটা।
প্রেশার কুকারে মাংসটা আগে থেকেই রেডি ছিল, হলুদ
তেল গোলমরিচ দিয়ে কটা সিটি দেওয়া ছিল। কুকারটা খুলে মাংস গুলো একটু দেখে নেবো, ওমনি …
টিং টং টিং টং !! টিং টং টিং টং !!
কে রে ভাই, আমার বারা ভাতে ছাই
দিতে এলো। করছিলাম মনের সুখে রান্না, একা
থাকি আমার ফ্ল্যাটে, নো ঝামেলা নো ঝাটি, কোন
আপদ এলো এই সময় ঘর বয়ে। আর কি সময় পায় না ??
টিং টং টিং টং !!
বিরক্তিকর শব্দটা আবারও বেজে উঠলো। ওভেনটা
১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে, মার মুখো হয়ে ছুটলাম দরজার দিকে।
দরজা খুলতেই হালকা একটা গন্ধ এলো সামনে থেকে, ভদ্রলোক
সম্ভবত হালকা পারফিউম ব্যবহার করেন। পর্দা সরিয়ে দেখলাম, সুদর্শন
দেখতে একজন, পরনে একটি নীল রঙের চেকচেক জামা, বুক
পকেটে একটা পেন। মুখটা ক্লিন সেভ, চোখে
হালকা একটি বাদামি রঙের ফ্রেমের চশমা, “ আপনি তো সুনিতা দেবী ? ”
“ হ্যাঁ, আমি
সুনিতা, কিন্তু আপনি কে ? চিনতে
পারলাম না তো “ , ভদ্রলোকের চেহারায় মুগ্ধ হয়ে রাগটা একটু জল হয়ে গেছিল ঠিক, কিন্তু
ভেতরে ভেতরে মশলা গরম হছে।
“ আমি দীপ, আপনি
আমায় ডেকেছিলেন আজ মনে পরে
? ”
“কে দীপ কোথায় ডাকলাম, অহেতুক
আমিই বা অজানা মানুষকে ডাকতে যাবো কেন ? “
“ মনে পড়ছে না ? সেই যে সাউথ সিটি মলে দেখা হোল ? “
“ আপনি আসতে পারেন, কোথাও
একটা ভুল হছে। “, কিছুটা
বিরক্ত হয়েই ঝাড়লাম ।
“ না আমি ঠিক জায়গায় এসেছি “
“ আছা নাছরবান্দা লোক আপনি, আসুন
এখন, আমি একটু ব্যস্ত আছি। “
মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে সটান চলে গেলাম রান্না ঘরে।
সকাল থেকে ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম কচি পাঁঠার ঝোল খাবো বলে। মুডটাই
খিচরে দিলো, যতোসব।
--------------------------------------------
গ্যাসটা আবার চালিয়ে গরম করে নিলাম কড়াটা। কিছুক্ষণের
মধ্যেই আবার সেই গরম গরম গন্ধওয়ালা মেজাজ ফিরে এলো। আহা !মশলা
তেল ছেড়েছে দেখছি।
মাংসের পিস একটার পর একটা ছাড়তে থাকলাম, প্রেশার
কুকার খুলে।
খুন্তি পেটা করে মাংসে মশলা সবদিকে মাখানোর পর থালা চাপা
দিয়ে দিলাম।
মাঝে মধ্যে দেখছি মশলা যাতে কড়াইের নিচে লেগে না যায়, তাহলেই
পুড়বে।
এরই ফাঁকে ফাঁকে মাথায় ঐ দীপ নামের ছেলেটির কথা মনে পড়ল। সত্যি
কথা বলতে ওকে আমি চিনি না,
কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আমি সাউথ সিটি গিয়েছিলাম এটা ঠিক।
বাবা মা র বলা ছেলের সাথে দেখা করতে, তবে
তার নাম ছিল অভয়।
ল পাশ করেছি, এখন প্রায় দু বছর
প্রাকটিস পর্ব চলছে। আর একটু সময় কাটলে নিজের চেম্বার খুলবো বাড়ির কাছেই। এরই
মধ্যে বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে হিচকির মত হুঙ্কার আসে ফোনে, বিয়ে
টা এবার সেরে ফেল, আমাদের তো বয়স হছে। বাবা
মার আর কি, মাথার চিন্তা ঝেরে ফেললে বাঁচে।
আরে বাবা,
মেয়েরা কি স্বাবলম্বী হতে পারে না ? বিয়ের
পরই তো এটা করবে না, ওটা করবে না, এই বারণ সেই বারণ। বিয়ে
করার মানেটাই যদি এটা হয়,
তাহলে কি দরকার করার, জেনে
শুনে নিজের স্বাধীনতায় লোহার খাঁচা তৈরি করা।
আমি এই যুগের, কিন্তু আমার মা বাবা
তো সেই আদি পৌরাণিক কালের,
তাদের কাছে আমার এই ভাবনা চিন্তার বিন্দু মাত্র কদর নেই, পারলে
গান্ধর্ব মতে ল্যাটা চুকিয়ে দিলে পারে।
সেদিন অভয়ের সাথে দেখা করতে চাইছিলাম না, কিন্তু জোর করে
এক কথায় চাপে পড়েই যেতে হয়েছিল। এর আগেও কজনকে দেখেছি, কিন্তু সব্বার মধ্যে সমস্যা
লেগেই আছে। অভয় দেখতে শুনতে ভাল, এম বি এ, আপাতত তাজ হোটেল আছে, মাইনে মন্দ নয়। তবে
কথা বার্তা শুনে বড্ড ইমম্যাচওর লাগলো, যেটা আমার একদমই পছন্দ হয়নি। আজকালকার ছেলে
হয়ে এতটা সেকেলে গোছের হয় কি করে।
বিয়ের পর যদি সিঁদুর নাই বা পড়ি, তাহলে নাকি ছেলের অকল্যাণ হয়। অভয়ের মা এর
বক্তব্য তাই।
অভয় যদি মা এর ছেলে হয়ে থাকলো, তাহলে আমি থাকবো কি করে ?
তার মাস খানেক আগে রিক্ত নামের একটি সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আলাপ হোল, সেও আরেক
জন। শাড়ী ছাড়া বাড়িতে কোনও কিছু আলাওউ নেই, শুধু সেটা নয়, আমাকে নাকি ঘোমটা টেনে
থাকতে হবে। ওরে থামো ভাই, মনে হছিল, একটা রাখী কিনে আনি, ওর জন্য। এরা এক একটা
সব...
এই খেয়েছে, ভাবতে ভাবতে মাংসের কথা ভুলেই গেছিলাম।
কড়াই এর ওপরের ঢাকনা সাথ সাথ তুলে নিলাম সাঁড়াশি করে। বেশ ঘন হয়েছে, পাশ থেকে লাল
তেলের রঙ, লাজাবাব।
খুন্তি নিয়ে আর একটু কড়াই এর নিচটা খুঁচিয়ে দেখে নিলাম, লেগে যায়নি তো।
আহ, তেল বেরিয়েছে বেশ। রঙটাও খুলেছে।পাশে রাখা ভাজা
আলুর টুকরো চারটি দিয়ে মশলায় না মাখা পর্যন্ত চলতে থাকল খুন্তি ওপর নিচ।
রান্না প্রায় কমপ্লিট, একটু জল গরম করে ঢেলে দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নেবো। নামানোর আগে গরম মশলা, ব্যাস, রবিবার জমে যাবে।
স্নান টা করে এসেই বসে যাবো খেতে, ওহ তস সইছে না।
সিঙ্গেল আর তার ওপর নিজের একটা ফাঁকা ফ্ল্যাট, এটা কতটা শান্তি আনতে পারে জীবনে,
সেটা একমাত্র আমিই জানি। নিজের ইছেমত খাও, ঘুমাও।
দরকার পড়লে ঘর সাফাই কাজে লেগে পড় নয়তো সোফাতে পিঠ ঠেকিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকো
ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
আজকের রুটিনে শুধু খাঁই খাঁই , আর ঘুম, কোনও কল রিসিভ করবো না।
------------------------------------------------------
বেলা তিনতে বাজে প্রায়। ডিনার সেট এর সাদা প্লেট ভরে রাখলাম সাদা ঝরঝরে ভাত,
সিঁথিতে একটু নুন, আর পাতিলেবু। মাংসের ঝোলটা একটা বড় বাটিতে নিলাম, আহ ! গন্ধে মম
করছে চারিদিকটা।
ঝোলের আলু আর দিয়ে ভাত মেখে, মাংসের কুচি টা মুখে দিতে যাব, ঠিক তখনই
টিং টং টিং টং !! টিং টং টিং টং !!
রোববারের ভর দুপুরে কে আসবে এই সময়ে ? সত্যি
খুব বিরক্তি লাগে, বলা নেই কউয়া নেই, বাড়িতে
বাড়িতে সেলস ম্যান। লক্ষ্য করেছি, যেদিন আমার ছুটি থাকে, একটু
মাংস রান্না করে খাবো সেদিন আমায় শান্তি দেবে না। সকালে
এক আহাম্মক এসেছিল, এখন আর একজন।
টিং টং টিং টং !! টিং টং টিং টং !! আবার বেল টিপছে…
আসছি রে বাবা, আমি কি উড়ে উড়ে যাবো
নাকি ?
দরজাটা একটু মুখর ভাবে খোলা মাত্র দেখলাম…
নাহ !
কিছুই নেই, সামনে কেও নেই। মানে ?
শব্দটা কে করলো ?
মুখ বাড়িয়ে ডান দিক থেকে বামদিক চোখ ঘোরালাম, প্যাসেজটা
সম্পূর্ণ ভাবেই ফাঁকা।
এই ফ্লোরে দুটি ফ্ল্যাট, এদিকে
আমি থাকি, পাশেরটা চাকলাদার বাবু। কিন্তু
উনি ফ্যামিলি নিয়ে কয়েকদিন আগেই ঘুরতে গিয়েছেন, সপ্তাহ
খানেকের জন্য। এই মুহূর্তে আমি একা মেয়েমানুষ এখানে।
তাহলে কড়া নাড়ল কে…
আদেও কি এসেছিল এখানে কেও ? নাকি
আমি ভুল শুনলাম।
গা টা একটু ছমছম করে উঠলো।
বেশী কিছু ভাবনায় আসার আগে দরজাটা জোরে বন্ধ করে একদম এঁটে
দিলাম ছিটকানি, এবার আর যেই আসুক, আমি
খাওয়া থেকে নড়ব না, এই ভেবে কিছুটা জোর করেই
জানালার পাশে টেবিলে বসে পড়লাম।
রান্নার শুরু থেকেই জানালাটা বন্ধ রেখেছিলাম, গন্ধ যাতে ঘর থেকে না বেড়িয়ে পরে।
এমনটা করার কারন আছে।
আমার এই বিল্ডিং এর ঠিক সামনেই যে একটা বড় শ্মশান।
জেনে বুঝেই এই পজিশনে আমার ফ্লাটটা ভাড়া করেছিলাম, দামটাও কম ছিল। আর তাছাড়া ওসব
ভূতেটুতে আমার বিশ্বাস হয় না। কারন ওসব কিছু নেই, যেটা আছে সেটা হোল মনের মধ্যে
জন্মে থাকা ভয়।
একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মত, আমি যেদিন যেদিন কচি পাঁঠার ঝোল করে খাই, জানালা
বন্ধ করে রাখা সত্ত্বেও আমার ঘরে একটু উৎপাত শুরু হয়। মানে আজ সকাল থেকে যেমন হোল।
ব্যাপারটায় বিশ্বাস নেই বলে সেই অর্থে কিছু মালুম হয় না, কিন্তু আসলে এর কি কোনও
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে ...
দরজার কড়া ঠিক সেই সময়ের নড়ল যখন আমি মাংস মুখে তুলতে গেছিলাম অথবা যখন মাংস কড়াই
তে দিতে যাই।
আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে আমার খান্দানি খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে যে। তাড়াতাড়ি ওগুলো
আগে সাবাড় করি।
--------------------------------------------------------
বেলা চারটে বেজে গেছে, দুপুরের খাবার শেষে আমি এখন বিছানায়।
অদ্ভুত ব্যাপারটা লক্ষ্য করছি, মানে অনুভব করছি।
কেমন যেন একটা গা ছমছম করছে। দরজার দিকে তাকালে মনে হয় এই বুঝি কেও কড়া নাড়বে আবার। এই প্যাসেজে আমি একা ঠিকই, কিন্তু কেমন যেন একটা কোলাহল
হছে কোথাও, আমার চারিপাশে। আমি বুঝতে পারছি, অনুভব করতে পারছি, কিন্তু কিছু দেখতে
পাছি না, বড্ড অস্বস্তিকর।
রোজ এটা অবশ্য হয় না, যেদিন যেদিন এরকম ছুটিতে রান্না করে খাবার খেয়ে শুই, একটু
সমস্যা হয়।
ঠিক যেন মনে হয়, এই ঘরের চারপাশে কিছু একটা চলছে, আমার অগোচরে, কিন্তু আমারই জন্য।
ইছে করছে না সেসবে পাত্তা দিতে।
অভয়ের কথা আবার মনে পড়ল।
একমাত্র ছেলে, শখের। তোলায় তোলায় মানুষ হয়েছে যেটা বুঝলাম, নইত আমায় দেখতে এসে
বারবার ফোনে অতও কিসের ফুসুর ফুসুর।
প্রতিটা মুহূর্তে পারলে মা এর অনুমতি নিয়ে করে। আরে বিয়েটা তুই করবি না উনি ? এতই যদি
সমস্যা তাহলে নিজের মা কেই তোকে নিয়ে আসত আমাকে দেখানোর জন্য। একা আসবো বলে এতো
নেকামি করার কি আছে।
এসব ছেলেদের সাথে ঘর করা খুব বিপদজনক।সব কোথায় শুধু মা মা করেই ডাকবে ।
এই সেই ভাবতে ভাবতে চোখে ঘুম ঢুলে এলো, অন্ধকার হয়ে গেছে চোখের সামনেটা।
আসতে আসতে স্বপ্নের রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছি আমি।
দৃশ্যপট খুব স্পষ্ট, ঠিক এক মাস আগের কথা, সাউথ সিটি মল,গরমকালের বিকেল ৪টে।
অভয় দাড়িয়ে রয়েছে ঠিক থার্ড ফ্লোরে, যেখানে কাঁচের ফ্লোর বানানো হয়েছে তার ঠিক
লাগোয়া, হাতে ফোন ধরা। যাওয়া মাত্র মা কে ফোনে জানিয়ে দিলো আমি এসেছি। মিনিট দুয়েক
আলাপ পর্ব সেরে যখন একটা জায়গায় বসার জন্য স্থির করলাম, মা এর কাছে আবার ফোন গেল
কোথায় বসবে। মিনিট দুই আমাদের কথা চলল।
তারপর উনি যখন শুনলেন, আমি নতুন চেম্বার খুলব বিয়ের পর, আবার ফোন গেল বিচারকের
কাছে। সব শুনে উনি বললেন, ওনার মা বলছেন তাদের মেয়েরা বিয়ের পর ঘরে থাকে শুধু। এরকম চেম্বার টেম্বার করলে হবে না।
আমি স্পষ্ট কথা একবাক্যে জিজ্ঞেস করলাম, “ আপনার কি আমাকে পছন্দ ? নাকি সেটাও বলতে
ফোনে কথা বলতে হবে ?“
লজ্জা পেয়েছে কিনা জানিনা, উনি শুধু মাথা নাড়ালেন উপর নিচ, নিচু মুখে।
“ আপনি কি চান তাহলে ? “, বললাম
“ মা যেটা বলবে সেটাই হবে “, মাথা তুলে অকপটে বলে দিলো অভয় ।
বিশেষ কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ফেরার কথা ঘোষণা করলাম।
একটু অপ্রস্তুত হয়ে অভয় বলল, “ আমি ড্রপ করে দেবো আপনাকে, চলুন।“
“ তার জন্য নিশ্চয় পারমিশন লাগবে ? “, একটু চোখা স্বরে কথাটা বের হোল।
“ লজ্জা দেবেন না, কাওকে কিছু বলার দরকার নেই। আপনার বাড়ি আমার যাওয়ার পথেই পড়ে। “
--------------------------------------------------
হলুদ ট্যাক্সিতে দুজনে দুদিকে বসে, ভাল লাগছিল ফুরফুরে হাওয়া খেতে। খিদে একটু
পেয়েছিলো, তাই একটা কেক এর প্যাকেট কাটলাম, অভয় কেও দিলাম।
জল তেষ্টা পেয়েছিল দেখে, আমি আমার জলের বোতলটা দিলাম। জল পান করার পর থেকে একটু
যেন স্বাভাবিক লাগলো ওকে। এতক্ষণ যেন কোনও কিছুর মধ্যে বন্দি ছিল, এখন একটু ফ্রি
হয়েছে হয়তো। গাড়িতে টুকটাক কথা চলতে চলতে কখন যে আমার বাড়ির কাছে এসে পড়লাম, বুঝতে
পারিনি। হঠাৎ করেই ঠিক সেই মুহূর্তে অভয় মাথা ধরে বসে কিছু একটা করছিলো। দেখে মনে
হোল, কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। সময় নষ্ট না করে ওকে আমার ঘরে নিয়ে এলাম।
দরজার ঘরের ঐ সোফাটাতে যখন অভয় নিজের সম্পূর্ণ শরীরটা এলিয়ে দিলো, দেখে মনে হোল
কোনও এক নিষ্পাপ দুধের শিশু ঘুমিয়েছে।
শিশু ?
শিশু নয়তো, কচি পাঠা একটা। ম্যা ম্যা ম্যা করে ...
রান্না ঘরে শিল নড়া পড়েছিল।
সময় নষ্ট না করে নড়াটা খুব তাড়াতাড়ি এনেই শুয়ে থাকা ঐ কচি পাঠাটার মাথার পেছন
লক্ষ্য করে ঠিক ঘাড়ের ওপরের উবু হওয়া অংশে সজোরে থেঁতলে দিলাম।
--------------------------------------------------
ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।
আর ঠিক তখনই মনে পড়ে গেল, দীপের এর কথা, যে সকালে এসেছিল।
মনে পড়েছে এবার।
দীপ এর সাথে তো গেল সপ্তাহে দেখা করেছিলাম মা বাবার কথা অনুযায়ী।
যদিও এখন সে নুন হলুদ গোলমরিচে এ ডুবে গেছে...
ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
দেখলাম বাবা ফোন করেছে, আবার নতুন একটা কচি পাঠা।
জলের বোতলের পাশে থাকা ঘুমের ওষুধটা দেখে নিলাম।
!! সমাপ্ত !!
Comments
Post a Comment