পড়াশোনা যে আমার দ্বারা হবে না, সেটা বাবা মা ছোটবেলা থেকেই টের পেয়েছিলো। সারাদিন খেলনা গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আজ সেই খেলনা গাড়ি থেকে আসল গাড়ির সিটে বসে আছি এখন। পেশায় একজন ড্রাইভার, একটি নামী অনলাইন যানবাহন সংস্থার সাথে যুক্ত।
আমার নাম অয়ন। প্রায় বছর খানেক হোল, এই কাজে ঢুকেছি ,পয়সা একটু আদটু যা কামিয়েছি,
তাতে এখনও পর্যন্ত বিয়েটা করা হয়ে ওঠেনি। বাবা মা এখনও জীবিত আছেন, ভালই আছেন
আপাতত, বাকিটা বয়সের ফেরে যেটা হয়।
আজ তবে গাড়ি চালানোর কথা বলতে বসিনি, বলবো নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা,
তাও আবার একটি কাঁচা লঙ্কার জন্য। জীবনের গতিপথ একটা লঙ্কা পাল্টে দিলো।ভাবা যায় ?
ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করলাম তীরে এসে, তরী ডোবানোর আগে।
এর আগে এমন কিছু ঘটেনি আমার সাথে,তাই এসবের ওপরে বিশ্বাসটাও ছিল না। কোলকাতা শহরে
আলোর মধ্যে আবার অশরীরী ? ভাবলেও হাসি পায়।
কিন্তু এটাতো শহরে ঘটেনি, ঘটেছিল হাওড়া জেলার একটি জনবহুল গ্রাম্য অঞ্চলে, বাগনান এরিয়াতে।
শুরু থেকেই শুরু করছি তাহলে, লঙ্কাকান্ডের কাহিনী।
রোজের প্রায়দিনই দুপুর ২টো বাজলেই,পেট ডেকে ওঠে খাবারের জন্য। বাড়িতে ফিরে যাই,মা
বাবা কে একটু দেখা দিয়ে খাবারটা খেয়ে আবার বেড়িয়ে পড়ি গাড়ি নিয়ে।
কিন্তু সেদিন একটা বুকিং তখনই ঢুকল যখন খিদে টা বেশ জমিয়ে পেয়েছে।
এরকমটা এর আগেও ঘটেছে। তখন আমি ফোনটা অফ করে দিতাম। এবারেও তাই করতে যাবো, ওপার
থেকে সাথে সাথে কল এলো, আর ফোন কাটার পরিবর্তে হয়ে গেল রিসিভ ।
বোঝ কাণ্ড !
নিজের ওপর বিরক্তি দেখিয়ে কি লাভ, কথা বলতেই হবে এবার।
গলাটা বেশ সরু, শুনে অন্তত ভদ্রলোক মনে হোল, “ হ্যালো, আপনি একটু তাড়াতাড়ি আসতে
পারেন ? খুব বিপদে পড়ে গেছি। এখনই না গেলে খুব সমস্যা হয়ে যাবে, প্লিজ আসুন। এই
মুহূর্তে আপনি শেষ ভরসা। “
আমি ছেলেটা খুব খারাপ নই। কারোর বিপদের কথা শুনলে বরাবর আমি এগিয়ে যেতাম, এখানে
পিছিয়ে যাই কি করে। গলা শুনে সত্যি বিপদে পড়েছে মনে হোল।
তাই ওনার কথার বিপরীত ফল ফলাতে ইছে হোল না। অর্ধেক ভর্তি জলের বোতলের দিকে তাকিয়ে
ওনাকে বলে দিলাম , “ আসছি আমি, দাঁড়ান একটু। “
নজরুলতীর্থ এর কাছে যে বাই লেনটা আছে, ওখানে যাওয়া মাত্রই দেখতে পেলাম একজন লোক
আমার গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছেন। গলার আওয়াজ শুনে যেরকম ওনার শরীরের গঠন ভেবেছিলাম,
ঠিক তাই। ছিপছিপে শরীর, ছোট্ট হালকা গোঁফ, ছেঁটে ফেলা ঘাসের মত মুখ ভর্তি দাড়ি,
পরনে শার্ট প্যান্ট, পিঠে একটা ব্যাগ। বয়স আন্দাজ করি, আমার থেকে একটু সিনিয়র।
একটু তাড়াহুড়ো করেই উঠলেন , “ চলুন অয়ন বাবু, একটু তাড়াতাড়ি ।“
নামটা ফোনের আপ্যেই পেয়েছেন, বুঝালাম।
ফোনের দিকে না তাকিয়েই বললাম, “ কোথায় ড্রপ আছে আপনার ? “
“ সন্তোষপুর “
এবার ট্রিপটা স্টার্ট করলাম।
করা মাত্র চোখ আঁটকে গেলো মোবাইল এর স্ক্রিনে, একি ? কি দেখছি আমি ? ৭৫ কিলোমিটার
রাস্তা দেখাছে কেন ? গেল নাকি মোবাইলটা ? কোম্পানির দেওয়া ফোন আজকাল ভুলভাল রাস্তা
দেখায় কেন ?
পিছনে ফিরলাম, ভদ্রলোক কে জিজ্ঞেস করলাম,
“ আপনি সঠিক লোকেশন দিয়েছেন তো ? “
ভদ্রলোক একটু ইতস্তত করে বললেন, “ হ্যাঁ, ঠিক ঠাক দিয়েছি তো। সন্তোষপুর গ্রাম,
বাগনান দ্বিতীয় ব্লকের আন্ডারে পড়ে, হাওড়া তে।“
কথা গুলো শুনে থ মেরে গেলাম, চুপ করে কিছু মুহূর্ত বসে গেছিলাম, এই ব্যাটা বলে কি
? এখন আমি হাওড়া যাবো ?
কোথায় যাদবপুর এর আগের সন্তোষপুর আর কোথায় বাগনান ? মাথাটা এবার গরম হয়ে ফুটছে...
মন খারাপ তো পড়ে হোল, তার আগে পেটের কথা ভাবতে গিয়েই...
ভদ্রলোক পেছন থেকে বললেন আবার, “বেশী দূরত্বের জন্য বুক করেছি তো আমি গাড়িটা। “
খিদের জ্বালায় মোবাইলটা ঠিক করে দেখতেও ভুলে গেছিলাম বুকিং আসার সময়, আর এখন মনে
হছে ফোনটা না ধরলেই ভাল হতো। এখন আমাকে এত দূর যেতে হবে ? ভাবতেই সারা শরীর গরম
হয়ে যাছে।
জানিনা, ভদ্রলোক কিছু বুঝেছিলেন কি না, নিজেই বললেন , ” অয়ন ভাই, খুব খারাপ লাগছে
জানেন তো । টিফিন টাইমে ফোন এলো, বাবা আর নেই। আমি ছোটবেলায় মা কে হারিয়েছিলাম,
বাবাই আমার সব ছিল। আর এখন ... “
শেষের কথা গুলোতে অনেক কিছু ছিল, এমন কিছু শক্তি যেটা শোনার মধ্যেই আমার খিদে
ভুলিয়ে দিলো মুহূর্তের মধ্যে, গাড়ি স্টার্ট দিলাম।
গাড়ি যখন কোনা হাইওয়ে ক্রস করলো, ভদ্রলোক এবার কথা শুরু করলেন।
“ অয়ন ভাই থাকেন কোথায় ?”
“ চিনারপার্ক “
“ একা ? বিয়ে করেছেন ? “
“ না দাদা, সেটা করার মত এখনও সৌভাগ্য হয়নি। বাবা মা কে নিয়ে কোনভাবে কেটে যায়
আমার ।“
“ বাহ ! খুব ভাল লাগলো। ওদের কে আগলে রাখবেন সারাজীবন ।“
কথাগুলো খাঁটি। বেশ ভাল লাগলো আমার সেসব শুনে। আমি যে আমার বাবা মা কে সর্বদা
নিজের থেকেও বেশী ভালবেসে এসেছি। ওনার কষ্টটা একটু হলেও আমি বুঝতে পারছি, দেখছি
উনি বারবার অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ির কাঁচ দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছেন। হয়তো মন পরিবর্তন
করতে চাইছেন।
বেশ কিছুক্ষণ পড়েই কথাটা পাড়লেন।
বললেন, “ কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো ? বড্ড খিদে পেয়েছে। সকাল থেকে কিছু
খাইনি। কিছু সময়ের জন্য কি একটু দাঁড়ানো যায় না কোথাও ? “
ঐ লোভনীয় শব্দটা আবার কানে যাওয়া মাত্রই পেট ভেতর দিকে লাথি মারছে আবার, যেটা
একমাত্র আমি শুনতে পেলাম। খিদে তো আমারও পেয়েছে। আর একটু জল ঢেলে দিলাম গলায়,
তারপর ওনাকে বললাম, “স্যার, দাঁড়াতে পারি, তবে একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমাকে আবার
ফিরতে হবে তো কোলকাতায়। “
দাঁড়ানোর কথা শুনে উনি বোধয় খুব খুশি হয়েছিলেন, তৎক্ষণাৎ বললেন, “ বেশ । কোনও
অসুবিধা নেই। কোথায় দাঁড়াবেন বলুন ? “
রোড ম্যাপটা একটু দেখে নিয়ে বললাম, “ আর একটু পড়েই ধুলাগর টোলটা পড়বে। তার আর একটু
পড়েই বাম দিকে একটা বড় হোটেল ধাবা মত আছে, ওখানে দাঁড়ানো যেতে পারে। “
“ ঠিক আছে। যেটা ভাল বোঝেন। তবে আপনিও একটু কিছু খেয়ে নেবেন। পয়সা আমি দিয়ে দেবো।
আর হ্যাঁ, আমাকে স্যার বলবেন না। আমি আপনার থেকে হয়তো একটু বড় হবো। দাদা বললেই হবে। “
সত্যি কথা বলেতে, ওনার এমন আন্তরিকতা দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি মনে মনে,তাই
প্রস্তাবে আর না করিনি।
টোল পেরোনোর মিনিট দশেকের মাথায় একটা পরিষ্কার ধাবা মত এসে গেল বামদিকে , নাম লেখা
“ অন্নপূর্ণা হোটেল “।
রাস্তার কাছেই একটু উঁচু জায়গা করে তৈরি। পাশে একটা ঢালু জায়গা ছিল, গাড়িটা ঐ ঢালু
স্থানেই পার্ক করলাম।
দু প্লেট করে তড়কা রুটি অর্ডার হোল।
ওখানে বসে খেতে ইছে করলো না, গাড়িতে নিয়ে চলে এলাম তাই। উনিও আমার সাথেই চলে এলেন, মিশুকে
ব্যাক্তি বোঝাই যায়।
“ আমার নাম মন্মথ “, কয়েকটা পেয়াজ কুচি আর কটা কাঁচা লঙ্কা প্লেট এ দিতে দিতে উনি নিজেই
পরিচয় করলেন।
“ আরে না না, আমি কাঁচা লঙ্কা খাই না। আপনি বেকার আনলেন। নষ্ট হবে।“, তরিঘরি করে
বললাম।
“ আরে কিছু হবে, খান ভাই। লঙ্কা গুলো দেখেন, এরকমটা শহরে পাবেন না। দেখতেই এরকম
আসলে, ঝাল তেমন নেই। আমিতো শুধু লঙ্কার গন্ধেই হাফ রুটি খেয়ে নিয়।“
শুনে গেলাম, কিছু বললাম না আর।
রুটির টুকরোতে কামড় বসিয়ে সে যে কি আনন্দ, তা বলার নয়। মুহূর্তের মধ্যেই কখন চারটে
রুটি শেষ করে দিয়েছি নিজেও জানি না। আরও দুটো হলে মন্দ হয় না, ওনাকে কি বলবো ?
ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, উনিও উসখুস করছেন কিছু একটা বলার অপেক্ষায়। আমার সাথে
চোখাচুখি হতেই বলে ফেললেন, “ রুটি নেবেন নাকি ? “
কিছুটা লজ্জাতেই হাসিমুখ প্রকাশিত হোল, উনি গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে পড়লেন।
আসার সময় আরও খানেক লঙ্কা নিয়ে এলেন।
ফিরে এসে মন্মথ বাবু বললেন , “ আপনাকে তুমি করেই বলছি। দূরত্ব বোধ হছে এতো সামনে
বসে থেকেও। এই নাও দুটো রুটি, হবে তো ?“
একটু হেসে বললাম, “ খুব হবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।“
আমার প্লেট এর দিকে তাকিয়ে এবার জোর করেই বললেন, “ কি হোল ? লঙ্কাটায় একটাও কামড়
দাওনি ? আরে খাও খাও, ভাল লাগবে।“
উনি এত করে বলছেন, তার ওপর ওনার জন্যই এখন খাওয়া টা হছে, অন্য কেও হলে এমন যত্ন
করে খাওয়াত বলে তো আমার মনে হয় না। যাক বলছে যখন কামড় বসিয়েদিলাম ।
সেই কাল করলো।
এটাকে ঝাল বলে ?
পুরো পৃথিবীর ঝালের লঙ্কা কাণ্ড এখন আমার মুখে... মুখে যেন ব্যোম ফেটেছে। ওরে বাবা
রে, লঙ্কা এতো ঝাল হয় কেন ?
কান দুটো গরম হয়ে গেছে, ভো ভো করছে মাথা। গাড়ি যেন ভূমিকম্পে দুলছে, এমন মনে হছে।
আমি ঝাল প্রায় খাই না, তাই এই লেভেলের করা ডোজ নিতে পারিনি। মাথা তো ঘুরছেই, সাথে
মুখ দিতে ক্রমাগত লালা ঝরছে। মন্মথ বাবুও কিন্তু বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন আমায়
অবস্থা দেখে, ভাবতেও পারেননি এমনটা হবে।
স্টিয়ারিং এর ফাঁকে বোতলটা নিয়ে কোন রকমে বার করে মুখে চোখে জলের ছিটে দিয়ে সামনের
সিটে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। সহ্য করতে পারছি না আসলে আর।
হু হা করতে করতে এরই পরে কখন যে তন্দ্রা এসে গেল, বুঝতে পারিনি।
ঘুম ছাড়ল একটা জোর ধাক্কায়। পাশ থেকে মন্মথ বাবু বললেন, “ ওঠো ওঠো, আমার ভুল হয়ে গেছে
তোমাকে লঙ্কা খাওয়াতে গিয়ে। যা ঘুম ঘুমালে, এবার ওঠো। বাড়ি যেতে হবে যে। “
সত্যি দারুণ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, আসলে ঝালের মহিমায় ক্লান্তি চোখে ঘুম টেনে দেবে
বুঝতে পারিনি।
সোজা হয়ে বসে তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট করে যখন বেরলাম, সূর্য প্রায় ডুব দেবে দেবে।
এই প্রথমবার হোল, যেখানে মাঝরাস্তায় এভাবে কাজের ফাঁকে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
গাড়ি যখন বাগনান এলো, তখন বিকেল ৫টা বেজে গেছে। লোকেশন অনুযায়ী আরও ৩০ মিনিট
লাগবে, মোবাইল অন্তত তাই বলছে।
এনাকে ছেড়ে কি করে ঘরে ফিরব, কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।
গাড়ি ঢুকছে ভেতরের গ্রাম্য রাস্তায়। মাটির রাস্তা ধরেছি এবার,একটু এবড়ো খেবড়ো।
বেশ কটা পাড়া পেরিয়ে আরও ঘনগ্রামের দিকে এখন। জানালার কাঁচ এতক্ষণে খুলে দিয়েছি।
শহরের রাস্তার ধোঁয়া আর দূষণের গন্ধটা কোন কালেই উবে গেছে, তার পরিবর্তে এসেছে
সবুজালি গন্ধ, ঠিক যেন পিওর অক্সিজেন। একটু স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া, বেশ লাগছে।
যেদিকে তাকাই, সবুজ মাঠ, টিনের চালের বাড়ি।
মাটির রাস্তাতে এত বাঁক, সত্যি একটু কষ্টকর গাড়ি চালানো।
প্রায় মিনিট চল্লিশের মাথায় একটা সরু রাস্তা তে এসে থামলাম, পাশে একটা বড় পুকুর
রয়েছে। তারই সামনে একটা একতলা বাড়ি। পাশাপাশি তেমন কোনও বাড়ি নেই, তাই জায়গাটা
একটু গা ছমছমে।
গাড়ি থেকে মাটিতে নামার পর একটু শান্তি লাগছে। কোমরটা ধরে গেছিল। ফ্রি হ্যান্ড
এক্সসারসাইজ করে নিলাম। টাকাটা নেওয়ার পর ভাবলাম, এবার ফিরব কি করে ?
সূর্য ডুবে গেছে বলাই চলে। অন্ধকার নিজের চাদর ফেলে দিয়েছে , তার ওপর এমন গোল মেলে
পাড়া গায়ের রাস্তা। আসার সময় দেখলাম, ইলেকট্রিকের খুঁটি নতুন এসেছে, আর ঘরগুলোতে
লন্ঠন, হ্যারিকেন জ্বলছে।
মন্মথ বাবু কিছু টের পেয়েছিলেন কিনা জানিনা, উনি নিজেই বললেন, “ একটা কথা বলি অয়ন
? কিছু মনে করো না। আজ রাত্রিটা তুমি কি আমার বাড়িতে থাকবে ? তোমার কোনও সমস্যাই
হবে না।
এই মুহূর্তে ফেরাটাও খুব সহজ কম্ম নয়। “
আমি বুঝে উঠতে পারছি না কি করবো।
শহর থেকে এখন আমি অনেকটা দূরে এসে গেছি।
তারপর অচেনা রাস্তা... ওদিকে মা বাবাও একা আছে, কোথায় কি করে সামলাবো সব।
দেখি একটা ফোন করে।
বার তিনেক চেষ্টা করলাম, রিং হোল, কিন্তু ধরল না কেও। চিন্তা তো একটু হছেই,
দুপুরেও যাওয়া হয়নি, একটা ফোন করাও উচিত ছিল।
এসব নিয়ে ভাবছি, মন্মথ বাবু আবারও বললেন, “ চলো আমার বাড়ি, আজকের রাতটা জাস্ট
কাটিয়ে নাও। কাল বেড়িয়ে যেও। “
এছাড়া ভাল কোনও উপায় তো মাথায় আসছে না আমার। অগত্যা গাড়িটা এক জায়গায় ঘুরিয়ে রেখে
দিলাম, পেছনের ডোর লক, চাবিটা দিয়ে দিলাম ঠিক করে।
পরক্ষণে মনে পড়ল, মন্মথ বাবুর বাবা তো মারা গেছেন, তাহলে আমি কি এমন একটা বাড়িতে
রাত কাটাব যেখানে একটি লোক কিছুক্ষণ আগেও জীবিত ছিল ? মুহূর্তেই মনে হোল, নাহ ফিরে
যাই কোলকাতা, কিন্তু ততক্ষণে বাড়ির সামনে এসেই পড়েছি, ফিরে যাওয়ার উপায় নেই।
কটেজ এর মত সুন্দর একটা বাড়ি, একতলা। বেশ দেখতে লাগছে ভালই। বাইরে কয়েকটা ফুলগাছ
লাগানো। ভদ্রলোক যত্ন করেন, মানে করতেন। একজন মানুষের দ্বারা যতটা পরিচর্যা করা
যায় আর কি।
অন্ধকার একটু হয়েই গেছে, তাই স্পষ্ট তেমন কিছু দেখা যাছে না। দালানের ছোট্ট গেটটা
খুলে মন্মথ বাবু এগিয়ে গেলেন আগে।
পিতৃবিয়োগের শোকে স্তব্ধ হয়তো। পিঠের ব্যাগটা খুলে মাটিতে রেখে, দরজার কাছেই
দাড়িয়ে, নিচের দিকে তাকিয়ে চোখে ডান হাত দিয়ে রুমালটা বার করলেন।
একমাত্র সেই বোঝে যার সাথে ঘটে, তাই এই কষ্ট চাইলেও আমি লাঘব করতে পারবো না।
এমন সময় ঘটে গেল একটা অদ্ভুতুড়ে ঘটনা।বলা নেই কউয়া নেই, বন্ধ দরজা খুলে গেল।
আর পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো একজন ভদ্রলোক, হাতে আগুন নিয়ে।
মন্মথ বাবু তো চমকে পেছন দিকে চিত হয়েই পড়ে গেলেন, মুখ দিয়ে একধরনের শব্দ করছেন,
যার মানে উদ্ধার করতে পারছি না। পড়েছেন তো ধপাস করে ঐ নিজের ব্যাগেই। পেছন ঘসে ঘসে
পিছিয়ে আসার চেষ্টা করছেন, যেন কিছু একটা দেখে ভয় পেলেন এখুনি।
মুহূর্তের মধ্যেই ঐ মূর্তি বলে উঠলো “ খোকন তুই এখন এই সময়ে ? “। কথা
বলা মাত্র হাতের প্রদীপটা তুলসী মঞ্চে রেখে এগিয়ে গেলেন মন্মথ বাবুর দিকে।
এতক্ষণে মন্মথ বাবুর মুখ থেকে কথা বের হোল, “ বাবা, তুমি বেঁচে আছো ? “
“ আমি বেঁচে আছি মানে ? আমিতো বেঁচেই আছি
“
“ তবে যে লক্ষণদা দুপুরে ফোন করে বলল যে তুমি ... “
“ ও হারামজাদা কাজ ছেড়ে দিয়েছে আজ একমাস হতে চলল, ব্যাটার ছেলে আমার ঘরে চুরি
করছিলো। হাতে নাতে ধরে ফেলেছিলাম।“
“ মিথ্যে কথা বলল আমায় ? কিন্তু কেন ?”
“ আরে রাগে রে রাগে বুঝলিনা ? “
ইনিই মন্মথ বাবুর বাবা, যাকে সারা রাস্তাতে মৃত ভেবে আসছিলাম ? বাপ ছেলের কথোপকথনে
আমি ভিরমি খাবার জোগাড়। ঠিক বিশ্বাস করতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল বইকি। সত্যি কি উনি
মারা যাননি ?
সন্দেহের কাঁথায় আগুন দিয়ে মন্মথবাবু আমার দিকে তাকালেন, পরিচয় করিয়ে দিলেন ওনার
বাবার সাথে। আমার কিন্তু ব্যপারটা একটুও ভাল লাগছিল না।
রাত্রি আটটা বাজতে চলল। শুয়ে ছিলাম একটা রুমে, পাখার দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এখনও
মাথা থেকে নামাতে পারিনি। পাশের রুমে মন্মথ বাবু তার বাবার সাথে কাজকর্মের
ব্যাপারে কথা বলছিলেন। ড্রাইভার মানুষ আমি, আজ আছি কাল চলে যাবো। এসব ভেবে ভেবে
নিজেকে অন্যমনস্ক করছি, কিছুতেই তা কাজে আসছেনা ।
সত্যি কথা বলতে, ঘরে ঢোকার পর থেকেও একটু অন্য রকম অনুভুতি হয়েছিল। ঠিক যেন মনে
লাগছিলো, আমি ঘরে একা আছি ঠিকই, কিন্তু একা নেই। অদ্ভুত অস্বস্তি হছে।
মনে হছে কেও বা কারা আমাকে দূর থেকে দেখছে, পর্যবেক্ষণ করছে, আমারই অজান্তে।
এদিকে কিছু প্রশ্ন মাথায় গিজগিজ করছে।
এতটা রাস্তা এলাম, টালি বা টিনের চালে বাড়ি তৈরি, একটার গায়ে একটা।
কিন্তু এই জায়গাটা বড্ড একাকী, যেন বাতাসও নারাজ বয়ে চলার জন্য।
এই বাড়িটা এতটা নিঃসঙ্গ জায়গায় তৈরি কেন ? সত্যি কোনও রকম সমস্যা আছে নাকি ?
মগজে ইনিয়ে বিনিয়ে ভাবনা চলছে, ঠিক তখনই দরজায় ঠক ঠক করলেন মন্মথ বাবুর বাবা। ভূত
দেখার মত স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। পা এর দিকে চোখ গেলো সরাসরি, না না ঠিক আছে। শুনেছি
ভূত প্রেত হলে পা এর গোড়ালি থাকে সামনের দিকে আর আঙ্গুল গুলো পেছনের দিকে। না এক্ষেত্রে মানুষ
মানুষ ভাবটাই আছে।
“ কি খাবে খোকা ? ভাত না রুটি ? “, খুব
নরম ও শান্ত গলায় বললেন উনি।
খনা গলা হলে ভূত বলতাম, কিন্তু এটা তো স্বাভাবিক, মন্মথ বাবুর মতই।
“ যেটা আপনারা খাবেন, সেটা হলেই হবে। “, আমি বললাম।
পেছন থেকে মন্মথ বাবু এলেন, “ আমার বাবা কিন্তু দারুণ রান্না করে। দুপুরে তড়কা
রুটি খেতে গিয়ে যা হোল।
সেজন্যই তোমাকে পেলাম এখানে।
যাইহোক, শোনো অয়ন ভাই, কাল আমাকেও ফিরতে হবে কোলকাতায়।
বাবার সাথে কথা বলে নিয়েছি। ভালই হোল, দুজনে একসাথেই চলে যাবো। “
সকালে ফেরার সময় একজন সঙ্গী পাবো ভেবে,ভাল লাগলো। মাথায় যে সব খাম খেয়াল আসছিলো,
চলে গেছে ততক্ষণে।
এর কিছুক্ষণ পর মন্মথ বাবু একটু বসলেন সামনে, “ কেমন লাগছে এখানের পরিবেশ ? “
“ ভাল, খুব ভাল। কোলকাতায় এতো শান্তি কোথায় ? “
“ ঠিক। সেজন্যই আমি এখনের সমস্তকিছু পছন্দ করি। জায়গাটা একটু নির্জন এবং শান্ত। “
একটু ভেবে নিয়ে বললাম, “ নির্জনতা এখানেই একটুই বেশিই। একটা কথা জিজ্ঞেস করি দাদা,
আপনাদের এই বড় ঘরটা এতটা নির্জন স্থানে কেন ? আশেপাশে কোথাও তেমন বাড়ি দেখলাম না
তো “
“হুম, বলতে পারি, তবে তুমি ভয় পাবে না তো ? “
“ নাহ, পাবো না”, বুক ফুলিয়ে মন থেকে চুপসে গিয়েও বললাম।
“ জায়গাটা এক কালে একটা শ্মশানভূমি ছিল। আজ থেকে অনেক বছর আগে। সমস্ত সন্তোষপুর এর
মড়া পোড়ানো এখানেই হতো। যুগের তালে সেটা নষ্ট হয়ে গেছিল। বাবা এই জায়গাটা খুব
সস্তায় পেয়েছিলেন, তাই ।“
আঁতকে ওঠার মত, শরীরটা সম্পূর্ণ কাঠের মত শক্ত হয়ে গেছে। কি শুনলাম আমি ? শ্মশান ?
আমি কি তাহলে এখন মৃত মানুষের ওপরে বসে আছি ?
মুখের ভাব টের পেয়েছে মন্মথ বাবু, বললেন “ আরে ভয় নেই, পোড়ানো হতো আমাদের বাড়ির
ঠিক পেছনে। তায় কতদিন আগে বলতও।
আর তাছাড়া শ্মশান সব থেকে পবিত্র স্থান, এটা জানো না ?”, এসব বলে উনি আমাকে সাহস
দিছেন জানি, কিন্তু মন কি মানে আর।
মনে মনে পবিত্রতার ওপর জল ঢালতে লেগেগেছি।
এর পড়ে আর কি বলবো, সকালটা হলেই পালাবো, সূর্য উঠুক না উঠুক।
রাতের খাওয়া সেরে একটু খানি বাইরে দাঁড়ালাম। ফোনে তখনও বাবা কে পেলাম না, খুব চিন্তা
হছে আমার। এরকমতো কখনও হয় না।
ঠিকই, এরকম অজানা গ্রামে এসে শ্মশানবাড়িতে রাত কাটানো তো বাপের জন্মে এই প্রথম।
রাতের প্রকৃতি বড়ই সুন্দর। শহরের আকাশ তাকালে বড় বড় উঁচু ইমারতে চোখ ধাক্কা খায়।
এখানে একফালি চাঁদের ঘরে ছোট্ট ছোট্ট তারা লুকোচুরি খেলছে। পেজা মেঘের রাশি মাঝে
মধ্যে চাঁদকে ঢেকে এগিয়ে চলেছে। অন্ধকারে একটি মৃদুমন্দ ঝি ঝি পোকার আওয়াজটা খুব
ভাল লাগছে। কানটা যেন শান্তি পেয়েছে।
ঠিক সেই সময় সামনের পুকুর পাড় থেকে এক ধরণের শব্দ হছে, ঠিক যেন মনে হোল,কেও বা
কারা কথা বলাবলি করছে জড়ো হয়ে। কিছুটা ফিসফিসিয়ে। এই রাতে আবার কারা ? এই নির্জন
এলাকায় ? কৌতূহল হোল।
এগিয়ে গেলাম আসতে আসতে। পুকুরটা যেখানে শুরু হয়, তার ঠিক বাম দিকের বড় একটা স্থান
আছে। কয়েকটা মানুষ দাড়িয়ে আছে, সামনে জ্বলছে একটি চিতা।
সর্বনাশ করেছে। মন্মথ বাবু যে বলল, এখন আর পোড়ানো হয় না। তাহলে কি আমাকে ভয় মুক্ত
করতেই মিথ্যে...
কেমন একটা বাজে গন্ধে বাতাসে বিষ মিশছে যেন, মাংস পোড়া গন্ধ কি এমনি হয় ? গা টা
গুলিয়ে উঠেছে এরই মধ্যে।
এই লোক গুলো এলো কোথা থেকে তাছাড়া ? মানুষ তো এরা ? সন্দেহ হছে। ঠিক সেই মুহূর্তে
ওদের কানাঘুষো কথা কানে ঢুকল, “ বাবু আমায় শেষমেশ ভুল বুঝে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিলে,
আমি চুরি করিনি। আমার কোনও দোষ ছিল নাই। ১
মাস ধরে একা এত বড় বাড়ি বাবু সামলাতে পারবেনি, আমি জানতুম। কষ্ট হছে খুব, শেষ সময়
আর দেখতে পেলাম নি। বাবুর ছেলেকে ফোন করলাম... “
মনে পড়ে গেলো, লক্ষণ বলে সেই কাজের লোকটার কথা যে থাকতো এখানে। এ কি সেই ? তাহলে ?
তাহলে কি মন্মথ বাবুর বাবা কি বেঁচে নেই ? তারমানে আমরা কি ভূতের সাথে আজ রাত
কাটাবো ?
দুটো পা ঠাণ্ডায় জড়ো হয়ে গেলো, ওখান থেকে যেন নাড়াতে
পারছি না। চোখটা পলকের মধ্যে চিতার দিকে চলে যাছে। মন্মথ বাবুকে বলতে হবে, কিন্তু
কি করে বলবো।
পারলে এখুনি চলে যাবো এখান থেকে। কিন্তু মন্মথ বাবুকে সত্যিটা বলতেই হবে।
মনের সর্ব শক্তি দিয়ে পা দুটোকে সচল করে ঘরের দিকে এক ছুটে নিজের রুমে।
ঘরে খিল দিয়ে দিয়েছি।
ঠিক তখন মনে হোল, বাইরে কেও একজন পায়ে চারি করছে। হঠাৎই দরজায় টোকা মারতে মারতে
বলল, “ খোকা , ঘুমিয়ে পড়েছ ? “
এতো স্বয়ং মন্মথ বাবুর বাবা... মৃত মানুষের গলা। বাইরে শরীর পুরছে,আর উনি এখানে
ঘুরে বেরাছেন...
এবারে মাথাটা আমার কেমন আবারও টান মারল পেছন দিকে, চোখের সামনেটা অন্ধকার হয়ে আসছে
আসতে আসতে, বিছানায় নেতিয়ে পড়লাম।
ঘুম যখন ভাঙল, তখন আমি ঐ ঘরেই নিজেকে ঠিক সেভাবেই দেখলাম, গত রাতে যেভাবে ছিলাম।
গত রাতের কথা মনে পড়তেই আবার সিটকে গেল। মোবাইল দেখলাম, ভোর ৫টা।
নাহ, কেও ওঠার আগেই আমাকে চলে যেতে হবে। আর এক মুহূর্ত নয়, একটুও না।
খুব সাবধানে দরজার খিলটা খুললাম, শব্দ যতটা কম করে হয়।
বসার জায়গা পেরিয়ে বাইরে আসতেই চোখে পড়ল মন্মথ বাবু রেডি হয়ে বসে আছেন। হাতে
স্বর্গ পাওয়ার মত, ওনাকে দেখা মাত্রই বললাম, “ চলুন দাদা, আমার সাথে। আর একটা কথাও
নয়। বাকিটা রাস্তায় শোনাব। “
উনি কি বলবেন, তার অপেক্ষা করিনি আমি।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলাম, আর ফিরেও তাকাইনি বাড়িটার দিকে।
যখন বম্বেরোড ধরল গাড়ি, হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
প্রথম কথা বললাম আমি।
“ মন্মথ বাবু, আপনার বাবা বেঁচে নেই। “
“ মানে ? কি বলছও তুমি ?”
“ হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। আমি তোমাদের লক্ষণ কে দেখেছি। “
“ লক্ষণ তোমায় বললো আমার বাবা বেঁচে নেই ? “
“ হ্যাঁ। শুধু তাই নয়, আপনার বাবার বডি পুড়তে দেখেছি...”
“ কি সব আবোলতাবোল বলছ তুমি ? “ , মন্মথ বাবুর মুখে বিরক্তি সূচক রাগের আভাষ পেলাম
এই প্রথম। আমি আর কিছু বললাম না।
কথা না বাড়িয়ে আমি গাড়ি চালানোর প্রতি মন দিলাম।
কিছু সময় পড়ে মন্মথ বাবু বললেন, “ একটা কাজ করতে পারবে ? কাল যে হোটেলে দাড়িয়ে
ছিলাম, সেখানে আর একবার একটু যাবে ? কাল ভুল করে একটা দরকারি ব্যাগ ফেলে চলে
এসেছিলাম, আজ এখন গেলে যদি পাই... “
“ এত সকালে হোটেল খোলে না তো। হ্যাঁ যদি কোনও স্টাফ থাকে তাহলে হতে পারে। আছা,চলেন
দেখি। “
অন্নপূর্ণা হোটেল এর সামনে পৌঁছে দেখি, বড্ড ভিড়। রাস্তা ব্লক করে আছে। ঘিরে
দিয়েছে, পুলিশকর্মীরা তৎপর হয়ে এখনও কাজ সারছে। এক্সিডেন্ট হয়েছে হয়তো।
একটা লরি দেখলাম দাড় করানো, আর একটা উল্টে
যাওয়া ছোট্ট চারচাকার গাড়ি।
এই পাড়ে গাড়িটা সাইড করে দুজনে ঐ পাড়ে গেলাম।
হুম, গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে,পুরো দুমরে মুচরে গেছে। থেঁতলে যাওয়া বডি দুটো
এক্সিডেন্ট এর সময় গাড়ির মধ্যেই ছিল, মনে হোল। হোটেলের সেই ঢালু জায়গায় বডি দুটো
রাখা।
গাড়িটার মডেলটা একদম আমার গাড়ির। কিন্তু ?
কিন্তু গাড়ির নাম্বার টা ? নাম্বারটা কি আমার মত ? আমার গাড়ির নাম্বার কেন ?
এরকমটা হয় নাকি ?
ঢালু জায়গায় এগিয়ে গিয়ে দেখলাম নিজের থেঁতলান শরীরটা। আমি চিনি নিজের শরীরটা, পাশে
পরে আছে মোবাইলটা ভেঙ্গে।
আর মন্মথ বাবুর নাড়িভুঁড়ি বেড়িয়ে আসা শরীর, রক্তাক্ত মাংস পিণ্ড পাশ থেকে বেড়িয়ে
গেছে...
মাথা ঘুরছে আমার...
পেছনে তাকালাম, মন্মথ বাবু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন।
“ তুমি ঠিকই বলেছ, আমার বাবা মারা গেছে।
তোমায় ঝাল খাওয়ানোটা আমারই ভুল। ঝালের ঘোরে জ্ঞান হারালে, চাবিটা ঘুরিয়ে রেখেছিলে,
ব্রেক ধরেনি। গাড়ি ঢালু জায়গাটা ধরে রাস্তায় চলে এলো নিজে থেকেই গড়িয়ে গড়িয়ে।
কতবার তোমাকে ডাকার চেষ্টা করছি, তুমি উঠলে না।
পেছন থেকে একটা নিয়ন্ত্রনহীন পাঞ্জাব লরি তখনই এসে আমাদের গাড়িটা...”
“ তারমানে আপনি আগে থেকেই সব জানতেন ?”, বললাম মন্মথ বাবুকে।
“ হ্যাঁ, জানতাম। নিশ্চিত হলাম যখন বাবা কে চোখের সামনে দেখলাম।
আর পুকুর পাড়েও দেখলাম। তুমি তখন ঘরে ছিলে, অবিশ্বাস করবে বলে চুপ ছিলাম। “
কথা গুলো খুব কষ্ট করে শুনতে পেরেছিলাম। ঘরে ফেরা আর হোল না, একটা লঙ্কার ঝালে।
©SamiranSamanta
Comments
Post a Comment