মিশন মেঘালয় - তৃতীয় রাত্রি

 সকালে উঠে আগে বেচারি পা দুটো দেখলাম, সত্যি খুব খেটেছে গত দিন।একটু কষ্ট হছিল, শিরায় টান পড়েছে। কুছ পরোয়া নেই। আজ একদম ছুটি, শুধু সাইট দর্শন। হাঁটাহাঁটি একটু তো হবেই, তবে ওকে। 

সকালের ব্রেকফাস্ট একটু করে চললাম সামনের গুহা দেখতে, আরফা কেভ

আরফা কেভ যাবার পথে


খুব সকালে চলে গেছিলাম, তাই মেঘের আনাগোনা রাস্তা তেও বাদ যায়নি। গুহা পথে যাবার রাস্তা বেশ চমৎকার ভাবে বাঁধানো, মন ভরানো পরিবেশ। একটু এগোলে বসার জায়গা আছে।ডান দিকের অংশ একদম ঢালু খাই নেমে গেছে।



কেভ যাওয়ার  পথে, মেঘের আড়ালে সবুজ

গুহা এর ভেতর শুরু থেকেই অন্ধকার, স্থানে স্থানে লাইট জ্বলছে। খুব নিচে দিয়ে পাশেই, জল কলকল আওয়াজ করতে করতে বয়ে চলছে। সেতসেতানি আবহাওয়া। 



আরফা কেভ ছেড়ে চলা আসার পথে

ক্যামেরা র ফ্লাশ লাইট জালিয়ে ভিডিও করতে দারুণ একটা ব্যাপার চোখে পড়ল। পাথরের গায়ে গায়ে ফেলস্পার, মাইকা জ্বলজ্বল করছে, অসাধারণ সুন্দর লাগছে।

কিছু দৃশ্য, কেভের ভেতরে


আঁধার পথে, একাকী গা ছমছমে পরিবেশে


 কিছু দূর এগোতেই টানেল এর মত আরও রাস্তা সরু হয়ে গেছে। জীবাশ্ম এর কিছু লক্ষণ চোখে পড়ল আমার। 
কিছুটা গিয়ে শেষ হয়ে গেল গুহা। ফেরার পথ ধরলাম, একি ভাবে।

পথ ধরলাম, সেভেন সিস্টার ফলস এর দিকে।
পারকিং এ গাড়ি রেখে এগিয়ে গেলাম।


সেভেন সিস্টার ফলস


বড়ই অদ্ভুত আবহাওয়া। পরিষ্কার দেখছিলাম ফলস টিকে, হটাত মেঘে ঢেকে গেল। নিচ থেকে ছোট ছোট মেঘ তৈরি হয়ে, মেঘপুঞ্জ হছে। তারপর সেগুলো জমা হছে, আকাশের প্রান্তরে।

হঠাৎ মেঘপুঞ্জ জমাট বাঁধা শুরু
 
মুহূর্তের মধ্যেই ফলস ঢেকে গেলো মেঘের মধ্যে 

ও হ্যাঁ, যা বলছিলাম, ফলস টা বেশ সুন্দর। জল কমে গেছে অনেকটাই, তাই ৭ টা ফলস খুঁজে পেতে একটু অসুবিধা হছে। ঠিক টার পাশ দিয়ে ডান দিকে, দেখা যাছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কে এত দূর থেকে কাছ ভাবে দেখার অনুভুতি টা আলাদাই।

ঐ দূরে সবুজ অংশ, বাংলাদেশ বর্ডার 


চললাম এরপর, ইকো পার্ক। হ্যাঁ ভাল, তবে দেখার মত পার্কে কিছু নেই। যেটা আছে টা হোল সেই পাহাড়ের শুননটার মাঝে মেঘের উকি, সাথে বাংলাদেশের বর্ডার আবার। নীল সবুজ সাদা রঙে মিশে গেছে সব কিছু।


ইকোপার্কের অংশ বিশেষ

পরবর্তী বিশেষ জায়গা হোল, মসমাই কেভ। যে না দেখবে, সে পস্তাবেই। সম্পূর্ণটাই একদম ন্যাচারাল। 
বাছাদের নিয়ে ঠিক যাওয়া যাবে না, কারণ গুহার মাঝে মধ্যে খুব ছোট সুরঙ্গ আছে। শরীর কে যথেষ্ট বাকিয়ে এদিক ওদিক করে নিয়ে যেতে হবে, দম বন্দ করা পরিস্থিতি আছেও। পাএর নিচে জল একটু আদতু আছে, এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, মুখ ধুবড়ে পড়লে রক্তপাত নিশ্চিত। 

এলিয়েন অংশ সদৃশ গুহার ভেতর দেখতে

এলিয়েনের মত অংশ বিশেষ


আমরা এলিয়েন এর ফিল্ম দেখি হলিউডের, খানিকটা সেরকম পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে, আর যাইহোক এরকম টা মনে পরবেই।শরীরে একটা শিহরন জাগবেই, এটুকু নিশ্চিত। 
জায়গা খুব সঙ্কীর্ণ, তুলনাই লোক অনেক। তাই আমার মতে একটু চুপ চাপ থেকে জায়গা উপভোগ করে আসতে আসতে এগিয়র যাওয়াই ভাল সবার জন্য, তাতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন একটু হলেও পাওয়া যাবে। আমরা যখন গেছি, তখন প্রচুর টুরিস্ট। খারাপ লাগছিল এটাই যে সব্বাই খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছিল খামোখা, ছেলেমানুষী।  সামনের মানুষ তাড়াতাড়ি এগোতে না পারলে পেছন থেকে বলছে, “ এগোন দাদা, নয় পেছন। আমাদের যেতে দিন।“  ভাই দাদাদের উদ্দেশে বলছি, “ আপনারা তো পূজার মণ্ডপ দেখছেন না, এসেছেন প্রকৃত অনুভুতি নিতে, মুখ টা বন্ধ রাখুন না। সামনের রাস্তা এতটাই দুর্গম, আপনাদের কোনও আইডিয়া নেই পর্যন্ত। আমার ৪ সেকেন্ড সময় লাগলে আপনাদের ১৪ সেকেন্ড লাগবে, টার পারবেন না।“ যাইহোক, সত্যি অপূর্ব। না দেখলে একটা বড়সড় জিনিস মিস হয়ে গেল বলতেই হবে।

 গুহা পথের শেষে, আকাশ পানের দারুণ দৃশ্য

গুহা শেষ এ বেরোনোর আগে ওপরে আলো দেখা যাচিল, সবুজ বন ওপরে। লাগছিল দারুণ।একটু শ্বাস কষ্ট হছিল, এসবের জন্য। যাইহোক, বেড়িয়ে এলাম। পাশে আর একটা গুহা আছে, যদিও ওটাতে আলো নেই, তাই আর এগইনি। 

আজকের ঘোরাঘুরি এখানেই শেষ হয়ে যায় হটাত ওপরওয়ালা জলবিন্দু ছাড়তে শুরু করলো তাই।
কাল চেরাপুঞ্জি ছেড়ে যাব অন্য স্থানে।

 

ক্রমশ




 

 










 





 

 

Comments