সকাল সকাল উঠেই মনটাকে তৈরি করে নিলাম যুদ্ধের জন্য। যুদ্ধ বলবো না এক বছরের
ব্যায়াম একদিনে করার প্রস্তুতি বলবো বুঝতে পারছিনা।
পথের মাঝে, সিঙ্গেল ডেকার এর উদ্দেশে
একটু ঢালু পথে দূর থেকে একটা ফলস দেখা যায়, ওটা নউকালিখাই ফলস।
আর চেনা পরিচিত সেই রোদ্দুর ছায়া মেশানো পাহাড় সবুজ চাদরে ঢাকা দ্যাখাই যাছে, অসাধারণ, কোনও কথা হবে না।
ধাপি ভাঙতে ভাঙতে চলে এলাম অনেকটাই। কিন্তু এবারে রাস্তা খারাই হয়ে গেছে। বেশ বিপজ্জনক।
কথা গুলো শুনে পা টা সত্যি বাথা করতে শুরু করলো, পেশি টান একটু তো হছিল, কথা গুলো শুনে যেন কাঁদতে শুরু করলো ওরা।
যাকগে ভেবে লাভ নেই, সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে চললাম। শেষ হোল সিঁড়ি।
বললাম, কই লিভিং রুট?
উনি বললেন যেটা , সিঁড়ি খতম হয়েছে, কিন্তু আর একটু যেতে হবে।
একটু চুপ করে রইলাম, তারপর আকাশের দিকে একবার তাকালাম আনমনে, ফের চলা শুরু।
শেষমেশ চলে এলাম সিঙ্গেল রুট ব্রিজে।
নাহ, সার্থক!
সত্যি সার্থক কষ্ট। গাছের শেকড় কিকরে এরকম ভাবে এত দূরে আর একটা গাছের শেকড়কে
আঁকড়ে ধরে বড় হছে, ভাবাই যায় না। ছবিতে দেখেছিলাম সিঙ্গেল দেকার, সামনে দেখে সত্যি অন্যরকম অনুভূতি পেলাম।
এপার থেকে ওপারে হেতে গেলাম আসতে আসতে। একবারে ২জন করে একসাথে ব্রিজে উঠতে পারে।
যাইহোক, ওপারে গিয়ে একটু ওয়েট করলাম।
গাইড ভাই দেখি ইশারা করছে আমাদের। বুঝলাম উনি আমাদের আরও অন্য কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে কিন্তু কাওকে না জানিয়ে। সবাই জেনে গেলে তো আমরা একাকী উপভোগ করতে পারব না।
সময় নষ্ট না করে এগিয়ে চললাম।
হুম, ঠিকই ভেবেছি।
ছোট একটা গুহা আছে, সরু পথ ধরে যেতে হয়, একটু কাত হয়ে ঢুকতে হয়। ভেতর টা একদম শীতল, পরিতক্ত।
গন্ধটা কেমন কেমন যেন। বেশ অন্য রকম, আগে পাইনি এরকম টা। ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়। আসতে আসতে কিছুটা এগোতেই ওপরে কিছু নরাচরা, ওরার শব্দ পেলাম। বাদুরের ছোট রাজ্য বলা চলে। দেখে বেশ শিহরন জাগলও, কারণ ওরকম সরু রাস্তা, দম বন্ধ করা পরিস্থিতি, সত্যি রুদ্ধশ্বাস যুক্ত।
বেড়িয়ে এসে সেই ব্রিজ ধরে ওপারে গেলাম আবার।
ব্রিজে হাঁটার সময় নিচে দেখছিলাম, কতটা ওপরে।
সত্যি একটু হলেও ওটা দেখে শরীর হালকা হয়ে গেছিলো।
একটা জায়গায় একটু বসে রেস্ট নিলাম। স্থানে স্থানে ছোট দোকান আছে, জল কোল্ড ড্রিঙ্ক চিপস ইত্যাদি বিক্রি করছে। ওখানের লোকাল একটা লেবু আছে, সেই লেবুর শরবত খুব বিক্রি হছে সব দোকানেই।
বেশ, খেয়ে দেখলাম। সত্যি এরকম শরবত খাইনি লেবুর, সাথে একটু পিপারমেন্ত এর ঠাণ্ডা অনুভূতিও আছে। যে যাই বলুক, ব্যাটারি একদম ফুল হয়ে গেল।
এগিয়ে চললাম, ডবল দেকার এর জন্য।
ভাইয়া, কিতনা সিঁড়ি ইস্মে হায়।
ভাইয়া হাসকে বলা, সিরফ ২৫০০।
না না, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েনি। শুধু হিসেব করছিলাম। আর ভাবছিলাম, বেচে বাড়ি তো ফিরতে হবে। নেমে যখন গেছি, উঠতে হবেই। ফাস গায়া।
আকাশের দিকে আর তাকাইনি, তাকিয়ে কি হবে আর।
কপালে যা লেখা আছে, পায়ে তাই লেখা হবে, ফস্কা পড়ে বা শিরা টান ধরে।
এই রাস্তাটা আবার একটু আলাদা।
পুরো খারাই সিঁড়ি সব জায়গাতে নেই। মিলিয়ে মিশিয়ে সব আছে।
দুটো লোহার ঝুলন্ত ব্রিজ পাড় করতে হয়।
এখানেও ডান দিক বামদিকের ছবি দারুণ চিত্তাকর্ষক।
তবে পা তখন বাথা শুরু করে দিয়েছে একটু, কিন্তু এগোতে তো হবেই।
আর একটু লেবুজল আর একটা দোকান থেকে কিনে ব্যাটারি চার্জ করে নিলাম।
চললাম।
চলছি তো চলছি।
কখনও ওপরে উঠছি, কখনও নিচে খাড়ায় সিঁড়ি। কাছাকাছি অনেকগুলো হোমস্তে দেখলাম।
কিছুটা গিয়ে আবার সামনে জলের কল পেলাম। ওহ যেন স্বর্গ। তাড়াতাড়ি চোখে মুখে জল
দিলাম, শান্তি হোল যেন।
ওর কিতনা দূর ভাইয়া, জিজ্ঞেস করলাম।
সিরফ ৩০ সেকেন্ড অর।
৩০ টা কি বলল? ধাপ না কি মিনিট নাকি সেকেন্ড ?
বুকে জল এলো, যখন দেখলাম সত্যি তারপরই দেখতে পেলাম একটা এন্ট্রি গেট।
মন আনন্দে নেচে উঠলো। প্রকৃত ভবে নাচতে ইছে করলেও পা সায় দিছে না।
এখানেও কষ্ট সার্থক একদম।
কি সুন্দর ব্যাপার টা।
দুটি ঝুলন্ত ব্রিজ, দুটো গাছের মধ্যে। অপূর্ব দেখতে লাগছে।
ছবি ডাউনলোড করে দেখা আর চাক্ষুষ দেখা, অনেক পার্থক্য।
মন ভোরে গেল। শেকড় গুলো আর একটা শেকড়কে, ডালপালা গুলো আর একটা ডালপালাকে যোগ করে এগিয়ে চলেছে। দুর্গা ঠাকুরের থিমের
প্যান্ডেল মনে হছিল, যদিও এটা ভাবা ঠিক না।
পাশ দিয়ে আর একটা ছোটও ফলস আছে। জল যেখানে পড়ছে, সেখানে রঙ বেরঙের মাছ চুপ করে বসে আছে, খুব কাছেই। চুপটি করে পা ডোবালাম, উফ কি ঠাণ্ডা। পা এর ক্লান্তি কিছুক্ষণ পর দূর হয়ে গেল।
আশ্চর্যের বিষয় যে আমরা পা ডোবালাম, মাছ গুলোর কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। ওরা আছে ওদের মতই। সাথে ছোট মাছ গুলো পা এর আঙ্গুল দে এসে চুমু দিয়ে চলে যাছে। অনুভূতি টা সলিড। কপছ কপছ করে পা এর চারদিকে ঘুরে ফিরে চুমু দিছে। এসব সৌন্দর্য এসব জাইগা তেই পাওয়া যাবে।
পাশাপাশি একটা মাত্র খাওয়ার দোকান আছে ওখানে।
ম্যাগি, ডিম ভাজা অমৃত এর সমান বানিয়ে দেবে, তবে বেশ অনেকটাই সময় নেবে। কাঠ কয়লার আঁচে বানাতে একটু সময় নেয়, তাছাড়া পাহাড়ি এলাকা।
অনেকটা বিশ্রাম হোল, এবার ফেরার পালা।
ব্যাপারটা ভাবতেই পা এ জ্বর এসে গেল।
একি রাস্তা ধরে ওপরে উঠলাম। কষ্ট হছিল, কিন্তু সার্থক ভাবটা মনে লেগে ছিল। তাই আর ভাবিনি কিছু।
ফিরে আসতে আসতে অন্ধকার ঢলে পড়েছিল।
ক্রমশ
Comments
Post a Comment