মেঘালয় ভ্রমণ - প্রথম রাত্রি


চেরাপুঞ্জি, শুরুর পথে
 
মেঘালয়, নামের সার্থকতা আমি ওখানে গিয়ে পেয়েছি। মেঘের দেশ বলবো নাকি প্রকৃতির কারসাজি, বুঝতে পারছিনা। রাস্তার মাঝে হঠাৎ মেঘ দেখি আবার কখনও দেখি রুমের মধ্যে মেঘের আনাগোনা।

এসব স্থানে ৩টে জিনিস দরকার।

নিজের শান্ত মন, একজন মনের মত সঙ্গী, আর ভ্রমণ পরিচালনার জন্য ড্রাইভার দাদাভাই।আমি এই ৩টেই পেয়েছি, সার্থক ভাবে। তাই ভ্রমণটা আরও সার্থক হয়ে গেছে।

বিজয়া দশমীর দিন উড়োপথে  প্রায় ৯টা ৫০ নাগাদ, আর গুয়াহাটি পৌছাই প্রায় ১১টা বেজে গেছে তখন।গিয়ে দেখি, চারিদিক কিছুক্ষণ আগেই ঝমঝমিয়ে ঢেলে দিয়েছে আকাশ, তাই মেঘলা পরিবেশ।

গাড়িতে বসলাম, চললাম চেরাপুঞ্জির উদ্দেশে।

যেদিকেই তাকাই, দেখি জল ছবি। চোখ যেন শান্তি পাছে সবুজ ছবি দেখে।

কলকাতার ভিড় এই ঘণ্টা খানেক আগেও দেখেছিলাম, আর তার কিছু মুহূর্ত পরেই এখন দেখছি সব জলছবি। অপূর্ব। চোখটা নিঃশ্বাস নিছে যেন নিশ্চিন্তে।পথে উমিয়াম লেক পড়ে, সেটা বাদ দিয়ে আপাতত চললাম মেঘ খুঁজতে।

মাঝে একটা ছোট রেস্টুরেন্ট উঠলাম, চোখের নিঃশ্বাসের সাথে পেটের পূজাও আবশ্যিক।

Sweet Day Restaurant উঠলাম রাস্তার মাঝে। বেশ ভাল, সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়, খাওয়ার মানও ভাল বেশ, দামও ঠিকঠাক।

শিলং পেরিয়ে রাস্তা ধরলাম চেরাপুঞ্জির। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ, কখনও কোথাও দেখা যাছে এক গুছ মেঘ মুখ ভার করে হাঁটছে নীলাকাশে। মাঝে মধ্যে আবার রোদ দেখা দিছে, নিমিষে সেটা গায়েব হয়ে যাছে গায়ে শীতল হাওয়া দিয়ে।

জার্নি শুরু হোল, থাংখারাং পার্ক দিয়ে।




থাংখারাং পার্কের ঝর্না

নামেই পার্ক, আসলে ওটা একটা ঝরনা এর জায়গা। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছি যত, তত জলের খলখলানি শুনতে পাছি, তত যাওয়ার টান টা বেড়ে চলেছে।

গিয়ে যখন দেখলাম, আহা সেকি দৃশ্য। না না, আমি নবকুমার কে কপি করবো না। সত্যি কিন্তু অপূর্ব অনুভূতি। চোখ জুড়িয়ে যাছে, মনের মধ্যে অদ্ভুত ভালোলাগা পেয়ে বসেছে। যেন তাকিয়ে থাকি, শুধু। জল পড়ছে কলকল শব্দে, আর নিচে বিন্দু হয়ে সব ছড়িয়ে পড়ছে, আলাদা হয়ে যাছে।

চুপ করে শুধু তাকিয়ে ছিলাম, কান পেতে। কতদিন পর শুনছি এমন শব্দও। রোজের গাড়ি ঘোড়া হর্ন সব ছাড়িয়ে, যেন ঘোলের স্বাদ দুধে মেটানো।

ছবিছাবা কোনরকমে তুলে ঠায় দাড়িয়ে ছিলাম, শুধু দেখব বলে।

ওপরে ওঠার সময় একটা জাইগায় দাঁড়ালাম। দেখলাম সুদুর প্রান্ত পর্যন্ত সবুজ বন বিহার, তার ওপর সূর্যের ঝিলিক। সেই ঝিলিকে যেন সবুজ খিলিয়ে উঠেছে।



কেবিল কারে চলন্ত দৃশ্য 

ওপর দিয়ে একটা টানা চিৎকার শুনলাম, কেবেল কারের। একজন করে মানুষ কে এই পাহাড় থেকে পাহাড়ে কেবিলের মাধ্যমে পাঠানো হছে, খুব দ্রুত গতিতে, আর সে আনন্দে চিৎকার করছে। সমস্ত পাহাড় জুড়ে সেই আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে।

কয়েকটা শুঁয়োপোকা চোখে পড়ল, একদম সামনেই। কাছে যাওয়ার সাহস হলনা, তরঘরি করে চলে এলাম গাড়িতে।

পথে আর একটা জলপ্রপাত পেলাম, ওয়াহকাবা সহরা গ্রামেই আছে। যেহেতু প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছিলো, তাই খুব স্পষ্ট দেখিনি। তবে যতটুকু দেখলাম, মন্দ নয়।



সাঁঝে ,ওয়াহকাবা জলপ্রপাত 


ওয়াহকাবা জলপ্রপাত

আমরা ছিলাম, সহরা গ্রামেই, একদম মেইন মার্কেটের কাছাকাছি, সহরা ভিউ লজে অনলাইন বুক করেছিলাম।

আরফা গুহা পথে পড়ে এই লজটা, প্রায় কিলোমিটার এর মধ্যে। সব থেকে বড় কথা, একদম পাহাড়ের কোলে । এত সুন্দর লোকেশন ভাবতে পারিনি।  


সহরা ভিউ লজ

সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে খুব খুব্বব্ব ভাল ভাবেই সূর্য ওঠা দেখে নেওয়া যায়। যেদিন সূর্য দেখতে পাবেন না, ধরে নিন সেদিন টা আরও চমৎকার হতে চলেছে। পুরো মেঘে ঢেকে যাবে। শুধু তাই না, আপনি লজের বাইরে দাড়িয়ে থাকুন, পেছনে হঠাৎ দেখতে পারেন, এই যাহ্ গেট দিয়ে সাদা সাদা ওসব কি। আসলে মেঘ ঢুকছে। রুমে চলে যান, মেঘ ঢুকে বসে আছে জানালা দিয়ে, বালিশ বিছানা ভেজানোর দায়িত্ব নিয়ে এসেছে।

নিজস্ব পারকিং ফ্যাসিলিটি আছে, তাই গাড়ি রাখলে অসুবিধা হবে না।

খাবারের বাবস্থা ওরা করে দেবে, তবে আপনাকে আগে থেকে বলতে হবে। তবে আমার নিজস্ব মত হোল, যদি গাড়ি সাথে থাকে তাহলে মার্কেট টা একটু ঘুরতে যেতেই পারেন। কয়েকটা দোকান আছে, কি চান, ছোটও খাটো বিগ বাজার এর কম না। একি দোকানে জামা কাপড় পাবেন, আবার খাওয়ার জিনিস পাবেন, আবার লোহার জিনিস পাবেন, বা জল গরমের কেটলি। বাদ নেই কিছু। পাশাপাশি ওদের খাবার চেখে দেখতে পারেন। তবে হ্যাঁ, পানতোয়া বা রসগোল্লা দেখলে খুব ইছে না হলে চেখে না দ্যাখাই ভাল। কারণ এক একটা ২০ টাকা, যেটা আমরা টাকাতে পেয়ে যাই এখানে আসলে ওখানে মিষ্টি কম পাওয়া যায়, তাই এইরকম দাম। ভাত পাবেন, মাংস মাছ পাবেন। যদি সম্ভব হয় লোকাল দোকান থেকে আলু পরটা খেতে পারেন, দাম একদম ঠিক ঠাক, তার থেকেও ব্যাপার হোল স্বাদ। অপূর্ব সত্যি। , তে খেলেই পেট তো ভরবেই, মন বলবে আর একটা নেব ? পেটে জায়গা না হলেও। এতটাই সুস্বাদু।

রাত্রি টার পর একদাম সুনসান হয়ে যায়।
কান প্রচণ্ড ভাবে এটা অনুভব করে। রুমে ঘড়ির টিক টিক শব্দটাই শোনা যাছে। সেটাও না থাকলে ভাল হত। এতটা সুন্দর আরাম, কান এর আগে কখনও অনুভব করেনি এরকম মনেই হতে পারে। সত্যি হটস্পট এর থেকে কম না। সকালে চোখের আরাম, রাতে কানের অক্সিজেন আর সারাদিন পাহাড়ি স্থানে সারা শরীর দিব্বি ফুরফুরে, আর কি চাই।

নীল আকাশের মাঝে  

পরদিন লিভিং রুট যাবার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

হ্যাঁ, সব্বাই এটা শেষে করে, কিন্তু আমরা আগে করার কথা ঠিক করলাম।

Comments